২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

গণমাধ্যমের পরাজয় মানে রাষ্ট্রের পরাজয় : কাদের গনি চৌধুরী

কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের বার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তব্য রাখছেন কাদের গনি চৌধুরী - ছবি : নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, ‘গণমাধ্যমের পরাজয় মানে জনগণের পরাজয়। আর জনগণের পরাজয় মানে রাষ্ট্রের পরাজয়। তাই গণমাধ্যমকে পরাজিত হতে দেয়া যাবে না।’

শুক্রবার (১ নভেম্বর) সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের (জেইউসি) বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সংগঠনের সভাপতি জি এ এম আশেক উল্লাহর সভাপতিত্বে কক্সবাজার প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো: শহীদুল ইসলাম।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘সংবাদপত্র জাতির দর্পণ শুধু কাগজ-কলমে নয়, বক্তৃতা-ভাষণে নয়; সত্যিকারভাবে জাতির বিবেকের ভূমিকা পালন করতে হবে। মোহমুক্ত হয়ে সাংবাদিকতা করতে পারলেই বাংলাদেশকে দুর্নীতি ও ফ্যাসিবাদমুক্ত করা সম্ভব হবে।’

তিনি বলেন, সত্য বলার সাহসিকতা সাংবাদিকতার মূলমন্ত্র। সৎ সাংবাদিকতা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে। সৎ সাংবাদিকতা সত্যের আরাধনা করে। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা সমাজকে এগিয়ে নেয়, গণতন্ত্রকে বিকশিত করে। তাই সততা ও নিষ্ঠার সাথে সাংবাদিকতা করতে হবে। সততা না থাকলে সাংবাদিকতা থাকে না। সাংবাদিকদের কলম মুক্ত হলে সমাজ উপকৃত হয়। আবার কলমের শক্তিকে ইতিবাচক কাজে ব্যবহার না করলে জাতির সর্বনাশ ঘটে। তাই বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে কোনো অজুহাত নয়। একপেশে, দলবাজি সাংবাদিকতা নয়, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নয়, গণমানুষের মনের কথা পত্রিকার পাতায় পাতায় তুলে ধরতে হবে। যতই অলিখিত সরকারি কালাকানুন থাকুক না কেন, ক্ষমতাশালীদের বাধা থাকুক না কেন, গণমানুষের কথা আমাদের বলতে হবে।’

তিনি মনে করেন, জনগণ দাস সাংবাদিকতাকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করে। তাদের আত্মসমর্পণকে ঘৃণা করে। তাই অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সম্পাদক-সাংবাদিকদের নির্ভীক, নির্লোভ ভূমিকা পালন করতে হবে।

এই সাংবাদিক নেতা বলেন, ‘দলবাজি, দাসবাজি সাংবাদিকতায় আমরা এত জড়িয়ে পড়েছি যে, পথ ভুলে অন্ধ গলিতে হাবুডুবু খাচ্ছি। সাদাকে সাদা বলতে পারছি না। রাজনীতির চোরাগলিতে সংবাদপত্র ডুবে আছে। এমন দলবাজি-দলদাসী মানসিকতা সৃষ্টি হয়েছে যে তথ্যনির্ভর কোনো সংবাদ বা কলাম বিগত ১৫ বছরে পত্রিকায় দেখা যায়নি। তখন পত্রিকা অফিস থেকে বলা হতো, প্রকাশে অনেক ঝুঁকি আছে। ঝামেলা আছে। বাধা আছে। সত্যিকার অর্থে একটি ভালো মানের পত্রিকার কোনো ব্যবসায়িক স্বার্থ থাকে না। কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, সরকার বা বিদেশি রাষ্ট্র বা তাদের কোনো এজেন্টদের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা থাকে না।’

কাদের গনি বলেন, ‘একজন সাংবাদিকের কাজ সমাজের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা। সে জন্য গণমাধ্যমকে সমাজের দর্পণ বলা হয়। এই দর্পণে প্রতিবিম্বিত হয় সমাজের প্রতিচিত্র। অন্যায়, অনিয়ম, নিগ্রহ, শোষণ-বঞ্চনা ও অধিকার হরণের বিরুদ্ধে একজন সাংবাদিককে সোচ্চার থাকতে হয় সবসময়। চোখ রাঙানোকে তোয়াক্কা না করে নির্ভীক ও নিরলসভাবে কাজ করতে হয়। প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার চিত্র প্রত্যক্ষ করতে হয়। মানুষের সমস্যার কথা তুলে ধরার দায়িত্ব পালন করতে হয়। অনেক বাধা-বিপত্তির মধ্যে তাদের দিন যায়। ক্ষমতাধরদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সাহসিকতার সাথে এগিয়ে যেতে হয়। অভাব-অনটনের ভেতর শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াতে হয়। পরিশ্রম করতে হয় অনেক।’

তার মতে, ‘সততা, নীতি ও আদর্শ নিয়ে যারা সাংবাদিকতা করেন অর্থাভাব তাদের নিত্যসঙ্গী। টানাপোড়েনের ভেতর দিয়ে তাদের চলতে হয়। সংসার চালানো তাদের জন্য বড় কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। দারিদ্র্যের ঘেরাটোপে বন্দী থেকে তাদের জীবন কাটাতে হয়। তারপরও অসত্যের কাছে মাথা নত করে না। এজন্যই সাংবাদিকদের বলা হয় জাতির বিবেক।’

তিনি বলেন, ‘আজ সেই সাংবাদিকও নেই, সেই সাংবাদিকতাও নেই। অযোগ্য অর্বাচীন কিছু মানুষের পদচারণায় কলঙ্কিত হতে দেখা যায় বাংলাদেশের সাংবাদিকতার গৌরবময় জগৎ। কোনো মহৎ উদ্দেশ্য থেকে নয়, অর্থলিপ্সুতা থেকে এবং সমাজে প্রভাব তৈরি করার ইচ্ছে থেকে অনেকে এই পেশার সাথে যুক্ত হন। ভুঁইফোড় সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তারা নানা ধান্ধাবাজি করে। নানারকম অপতৎপরতায় লিপ্ত থাকে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে সংবাদ পরিবেশনের হুমকি দেয়। ভয়ভীতি প্রদর্শন করে দেদারসে অর্থ আদায় করে। খুব অল্পসময়ের মধ্যে এরা অর্থ-সম্পদের মালিক হয়ে যায় এবং একই ধরনের কিছুসংখ্যক ব্যক্তি মিলে গড়ে তোলে সাংবাদিক সিন্ডিকেট। এদের পড়াশোনা ও মেধার ঘাটতি থাকে। সাংবাদিকতার সঠিক সংজ্ঞাও এরা জানে না। দু’য়েকজন সাংবাদিকের সাথে এরা সুসম্পর্ক তৈরি করে। এবং তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত লিখিত নিউজ কপি করে সংবাদমাধ্যমে পাঠায়। অজ্ঞতা অনেক থাকলেও এরা সাংবাদিকতার তকমা পরে ঘুরে বেড়ায়। এদের কারণে সাংবাদিকতা পেশার মর্যাদা নষ্ট হচ্ছে। কলুষিত হচ্ছে সাংবাদিকতার জগৎ। এদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে সবার রুখে দাঁড়ানো প্রয়োজন।’

তিনি মনে করেন, সাংবাদিকতার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ ও সমুন্নত রাখার জন্য সাংবাদিকদেরই পদক্ষেপ নেয়া দরকার। এবং সাংবাদিকদের উচিত এদের অসহযোগিতা করা। এরা সাংবাদিকদের ইজ্জত-সম্মান নষ্ট করছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডিইউজে সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এখনো চূড়ান্ত বিজয় আসেনি। আংশিক বিজয় এসেছে। এখনো দেশের বিরুদ্ধে নানাভাবে ষড়যন্ত্র চলছে। কখনো আনসার বিদ্রোহ হয়ে, কখনো বিচার বিভাগে, কখনো সরকারের উপদেষ্টাদের বিতর্কিত করার চেষ্টার মধ্যদিয়ে। এখন আমাদের ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে।’

তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘কাজ ও কথায় যদি আমাদের না মেলে তখন নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হয়। এখন সেই সময় নয়। ঐক্যবদ্ধ থাকতে না পারলে বিজয় ধরে রাখা যাবে না।’

‘যারা ফ্যাসিবাদের হয়ে যারা ভূমিকা রেখেছেন তাদের বড় একটা অংশ হলো সাংবাদিক। এই সাংবাদিকরা ঠিক থাকলে দেশে ফ্যাসিবাদ হতো না,’ বলেন তিনি।

তিনি দেশে কোনো গণমাধ্যম বন্ধ হবে না জানিয়ে বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসরের মতো সাংবাদিকতা করলে হবে না।

জেইউসি’র সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা সরওয়ারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় আরো বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম শ্রম অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আবদুস সাব্বির ভূঁইয়া, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবর রহমান, সাংবাদিক নেতা তালুকদার রুমি, সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মুহম্মদ নুরুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি ও কক্সবাজার প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন বাহারী, সিনিয়র সদস্য এস এম আমিনুল হক চৌধুরী, আতাহার ইকবাল, কামাল হোসেন আযাদ, আবু সিদ্দিক ওসমানী, রুহুল কাদের বাবুল, বর্তমান সহ-সভাপতি এম আর মাহবুব, ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক কালের কণ্ঠের কক্সবাজার ব্যুরো চিফ আনছার হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম জাফর, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসানুর রশীদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার সভাপতি জি এ এম আশেক উল্লাহ।

পরে জেইউসি’র ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মুহম্মদ নূরুল ইসলাম প্রধান নির্বাচন কমিশনার, কক্সবাজার প্রেসক্লাব সভাপতি মাহবুবর রহমান ও সিনিয়র সদস্য এস এম আমিনুল হক চৌধুরীকে নির্বাচন কমিশনার মনোনীত করা হয়।

জুমার নামাজের বিরতির পর ইউনিয়নের সাংগঠনিক সেশন হয়। সেখানে সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদনসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement
আমাদের রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করেন তারা কেউ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না : শিবির সেক্রেটারি রমজানে বাজার সহনশীল করার চেষ্টা করছি : বাণিজ্য উপদেষ্টা চট্টগ্রামে ছাত্র আন্দোলনে গুলি : সেই তৌহিদ গ্রেফতার বিয়ের ৪ দিন পর লাশ হলেন নববধূ ৫৩ বছরে শোষণ-বঞ্চনার রাষ্ট্র পেয়েছি : মাসুদ সাঈদী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত সকলেই ন্যায় বিচার পাবেন : মোবারক হোসেন জয়সাওয়ালের রেকর্ড ছক্কার দিনে পার্থে দাপট ভারতের তারেক রহমান ও কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহার না করলে আন্দোলনের হুমকি ‘বাবা বলে ডাকতে পারি না’ বিএনপি নির্বাচন চায় দেশকে রক্ষার জন্য : মির্জা ফখরুল জাতীয় ঐক্যের মধ্যদিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে : গোলাম পরওয়ার

সকল