২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ঘূর্ণিঝড় দানা : কক্সবাজার সাগর উত্তাল

দুর্যোগের খবরেই আতঙ্কিত ২ দ্বীপের মানুষ
ঘূর্ণিঝড় দানা : কক্সবাজার সাগর উত্তাল - ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে কক্সবাজারে গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। সকাল থেকে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও মাঝে মাঝে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত থাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে কক্সবাজার উপকূলবর্তী সাগরে পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চাইতে কিছুটা বাড়বে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর দূরবর্তী সতর্কতা সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। একইসাথে গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার সকল নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। যাতে স্বল্প সময়ের নোটিশে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে। যদিও সাগরে ২২ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা চলছে।

এদিকে সাগর উত্তাল হয়ে পড়ায় জোয়ারের পানির তোড়ে একটি বার্জের ধাক্কায় ইনানী সৈকতের নৌবাহিনীর জেটিটি ভেঙে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে। জেটি ভেঙে যাওয়ায় সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণেও দেখা দিয়েছে আরেক বিপত্তি। সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কিছুটা উত্তাল রয়েছে সাগর। গত রাত ২-৩টার সময় ছিল পূর্ণ জোয়ার। এ সময় প্রচণ্ড ঢেউয়ে জেটির সাথে বাঁধা একটি ছোট বার্জের ধাক্কায় জেটিটি ভেঙে গেছে। শেখ হাসিনা সরকারের সময় ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক নৌমহড়া অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনী জেটিটি নির্মাণ করেছিল।

ঘূর্ণিঝড় দানা মোকাবেলায় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন ব্যপক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: সালাহউদ্দিন। ঝুকিপূর্ণ বাসিন্দাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে জেলার সকল উপজেলার সব আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সব ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সাগরে গোসল করার সময় সতর্ক থাকতে এবং পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফ গার্ড কর্মীরা সক্রিয় রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।


অপর দিকে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন বিকল্প নৌপথে নৌযান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে বুধবার বিকেলে নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়।

অপরদিকে ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় বুধবার বিকেল থেকে ঝোড়ো হওয়া বয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত উপকূলের কয়েক লাখ মানুষ।

টেকনাফ শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে সীমান্ত সড়কের পূর্বে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা নাফ নদের পাড়ে অবস্থিত শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়ায় এখনো শতাধিক পরিবারের মানুষের বসবাস। এখনো ভাঙছে দ্বীপটি। এমনকি বিলীনের পথে দুটি বিদ্যালয় ভবন।

এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপ।

মাত্র পাঁচ মাস আগে চলতি বছরের ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় রিমাল টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিন দ্বীপে তাণ্ডব চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সৃষ্টি করে। রিমালসহ আগের একাধিক ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি টেকনাফ উপকূলীয় এলাকার মানুষ।

রিমালের আঘাতের পাঁচ মাস না যেতেই ফের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় দানা। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ার পর থেকে শাহপরীর দ্বীপে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে ৪০ হাজার মানুষের।

উপকূলবাসীর আশঙ্কা, ঘূর্ণিঝড় দানা আঘাত হানলে শাহপরীর দ্বীপে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে আবারো এলাকা প্লাবিত হবে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে জালিয়া পাড়ার নাফ নদের জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভেঙে যেতে পারে দুর্বল বেড়িবাঁধ। এ জন্য উপকূলের বিভিন্ন এলাকার জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে চিন্তিত সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপের এক লাখ মানুষ।

শাহপরীর দ্বীপের মাঝের পাড়ার নুরুল আমিন বলেন, ‘যেকোনো দুর্যোগের খবরেই আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। সাগর পাড়ে আমাদের বাড়ি। নদীভাঙনে আমরা এমনিতেই নিঃস্ব। তার ওপর বছরে দু’-চারবার ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের শেষ সম্বলটুকুও শেষ করে দেয়। আজ আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস জানার পরপরই আমাদের এলাকার স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। পাঁচ মাস আগে একবার ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে।’

সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা হাফেজ আহমেদ বলেন, ‘বিকেলে তীব্র গতির বাতাস বইছে ও অঝোরে ঝরছে বৃষ্টি। আজ সকালে তীব্র ঢেউয়ের কারণে উত্তাল হয়ে উঠেছে সাগর। এ নিয়ে স্থানীয়রা অনেক চিন্তিত। যদিও এখন পর্যন্ত বড় পরিসরে কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি।’

সতর্ক আছেন উল্লেখ করে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস জনজীবন, মনে হচ্ছে বড় কিছু হতে যাচ্ছে। দ্বীপে সাগর উত্তাল রয়েছে। সকাল থেকে আকাশ মেঘ থাকলেও বাতাস শুরু হয়েছে। এ ছাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে সাগরের পানির উচ্চতা বেড়েছে।’

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী বলেন, ‘টেকনাফ এবং সেন্টমার্টিন থেকে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া শাহপরীর দ্বীপের পাশাপাশি সেন্টমার্টিনকে গুরুত্ব দিয়ে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘উপজেলার সব আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া সব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের সর্তক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’


আরো সংবাদ



premium cement