সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রীর সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে : জামায়াত আমির
- মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
- ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৬:৫০
দ্রব্যমূল্য কমাতে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রীর সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘এ দুষ্ঠু সিন্ডিকেট করেছিল বাণিজ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে তার চ্যালা-চামুণ্ডারা। ৫ আগস্ট আমাদের ছেলেরা নতুন করে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এখনো ওই সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হয়নি। দ্রব্য মূল্যের লাগাম টানতে হলে ওই সিন্ডিকেট ভেঙে চুরমার করে দিতে হবে।’
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জাতীয় বীর আব্দুল কুদ্দুস মাখন পৌর মুক্তমঞ্চে জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত এক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ ছিল মজলুম। রাস্তায় যে ভাইটি ভিক্ষা করতেন তিনিও মজলুম ছিলেন। কারণ তাদেরকেও চাঁদা দিতে হতো গুন্ডাদের কাছে। চাঁদা না দিলে তারা ভিক্ষা করতে পারতেন না। সারাদিন ভিক্ষা করে যা থাকত তা দিয়ে সংসার চালাতে পারতেন না। কারণ ৩০ টাকার পেঁয়াজ কিনতে হতো ৩০০ টাকায়।’
এ সময় কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জামায়াতের আমির গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মলনে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা ও কুমিল্লা-নোয়াখালী অঞ্চলের টিম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তার, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা ও কুমিল্লা-নোয়াখালী অঞ্চলের টিম সদস্য সাবেক জেলা আমির অধ্যক্ষ কাজী নজরুল ইসলাম খাদেম, জেলা নায়েবে আমির কাজী ইয়াকুব আলী, জেলা সেক্রেটারি মুহাম্মদ মোবারক হোসাইন ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো: আতিকুল ইসলাম ভূইয়া প্রমুখ।
প্রধান অতিথি ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ওপর যে জুলুম করা হয়েছে বাংলাদেশের অন্য কোনো দলের ওপর সে জুলুম করা হয়নি। কিন্তু আমরা আগেই বলেছি কারো ওপর প্রতিশোধ নেব না। অর্থাৎ, আমরা সামগ্রিকভাবে ক্ষমা করে দিতে চাই কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে যে অপরাধ করেছেন, ইনসাফের দাবি হচ্ছে তাকে তার অপরাধের শাস্তি পেতে হবে। তাই বলে আমরা কেউ আইন হাতে তুলে নেব না ।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বৈষম্যহীন ও শোষণমুক্ত একটি কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এজন্য আমরা ৪১ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছি। এরমধ্যে ১০ দফা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছি। আমরা একটি পরিপূর্ণ বিপ্লবের স্বপ্ন দেখি। এমন একটি বাংলাদেশ দেখতে চাই, যে বাংলাদেশে নারী, পুরুষ, জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কোনো মানুষ তার ন্যয্য নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না। বিভিন্ন জাতি ধর্মের মানুষ মিলেমিশে সামাজিক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তুলবে। আমরা সে সমাজের স্বপ্ন দেখি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা স্বপ্ন দেখি, প্রত্যেক আদম সন্তান তার মায়ের পেট থেকে জন্ম নেয়ার পরে রাষ্ট্রের কাছ থেকে যে সকল অধিকার পাবে, প্রত্যেকটি অধিকার রাষ্ট্র তাকে দিতে বাধ্য থাকবে। এরপর শিশু থেকে যুবক-যুবতী যখন লেখাপড়া করে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসার পাঠ শেষ করে বের হবে তাদেরকে বেকারত্বের অভিশাপ গ্রাস করবে না। আমরা এমন একটি শিক্ষা সন্তানদের হাতে তুলে দিতে চাই, যে শিক্ষা তাদেরকে নৈতিকবোধ সম্পন্ন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে। পাশাপাশি তাদের হাত কর্মীর হাতে পরিণত হবে। বেকারত্বের অভিশাপে আর কোনো যুবক-যুবতীকে আত্মহত্যা করতে হবে না।’
এ সময় বিচার ব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি সমাজ চাই, যে সমাজে একজন বিচার প্রার্থীকে আদালত প্রাঙ্গনে বিভন্ন হয়রানী হতে হবে না। কোনো বিচারক তার আসনে বসে আল্লাহকে ছাড়া আর কোনো রাষ্ট্রশক্তিকে পরোয়া করবে না। রাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী বিচার কার্য পরিচালনা করবে। কোনো বিচারক ঘুষ খায় এ লজ্জাজনক কথা আমরা আর শুনতে চাই না। আমরা এমন একটি বিচার ব্যবস্থা চাই, যে বিচার ব্যবস্থায় উচু-নিচু কাউকে মাপা হবে না। বিচার প্রার্থীকে বিচার প্রার্থী হিসেবে দেখবে। কেউ যদি মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে আদালতে হাজির হয়, তাহলে মিথ্যা অভিযোগ করার জন্য তাকে দণ্ড দিতে হবে। আবার যদি সঠিক অভিযোগ নিয়ে কেউ হাজির হয়, তাহলে অন্যায়ভাবে প্রভাবিত করে তাকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।’
আমিরে জামায়াত বলেন, ‘আমরা এমন একটি দেশ চাই, যে দেশ অন্য কোনো শক্তি বা দেশের তাবেদারি মেনে নেবে না। পৃথিবীর অন্য দশটি দেশ যেমন মর্যাদার সাথে বিশ্বের সামনে মাথা উচু করে দাড়ায়, বাংলাদেশও তার শির উচু করে দাড়াবে, ইনশাআল্লাহ। বিদেশে আমাদের বন্ধু থাকবে, কিন্তু কোনো প্রভূ আমরা মেনে নেব না। কেউ আমাদের প্রভুত্ব করতে এলে জাতি তার সঠিক জবাব বুঝিয়ে দেবে।’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এমন একটি জাতি চাই, যে জাতিতে পাঁচতলা আর ১০ তলার ব্যবধান থাকবে না। কারো ১০ তলা থাকুক এতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু, কোনো মানুষ অর্থাভাব ও দারিদ্র্যতার কারণে ফুটপাতে থাকবে তা বরদাশত করা হবে না। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হবে প্রত্যেকটি বঞ্চিত ও দরিদ্র পরিবারের জন্য আশ্রয়ানের নিশ্চয়তা প্রদান করা। আমাদের দেশে কিছুদিন আগে সরকারি উদ্যোগে আশ্রায়ণ প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। কোনো এক জায়গায় তৈরি করার আগেই ঘর ভেঙে পড়েছিল। জনগণের চোখে ধুলা দিয়ে সস্তা জনপ্রিয়তা নেয়ার জন্যই তা করা হয়েছিল।’
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমিরে জামায়াত ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে ২০০১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আটজন, ২০২২ ও ২০২৪ সালের শহীদদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম বলেন, ‘স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার বাংলাদেশকে কারাগার বানিয়ে মানুষের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছিলেন। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘ইসলাম হচ্ছে আমাদের জীবনের একমাত্র আদর্শ। আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনীতি ও অর্থনীতিসহ জীবনের প্রতিটি অংশেই ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো আদর্শ মানা যাবে না। আর পূর্ণাঙ্গ ইসলাম মানার একমাত্র ক্ষেত্র হচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা। সেক্যুলার বা অন্য কোনো মানব রচিত আদর্শে গড়া রাষ্ট্র ব্যবস্থায় থেকে পরিপূর্ণভাবে ইসলাম মানা সম্ভব হবে না।’
তিনি বলেন, ‘সেক্যুলারপন্থীরা অপপ্রচারের মাধ্যমে মানুষের মনে ইসলামোফোবিয়া ঢুকিয়ে দিয়েছে। জামায়াতের কর্মীদেরকে উন্নত চরিত্র ও সুন্দর ব্যবহার দিয়ে সেই ইসলামোফোবিয়া দূর করতে হবে।’
উল্লেখ্য, কর্মী সম্মেলন শেষে আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী জামেয়া ইউনুছিয়া মাদরাসা পরিদর্শন ও বড় হুজুরখ্যাত আল্লামা সিরাজুল ইসলামের রাহ: কবর জিয়ারত করেন। পরে জেলা জামায়াতের রুকন সম্মেলনে যোগ দেন তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা