বাংলাদেশী পতাকা দেখিয়ে ইশারা করার পরও গুলি করেছে মিয়ানমারের নৌবাহিনী
- হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া (কক্সবাজার)
- ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৫, আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০৪
বাংলাদেশী মাছ ধরার ট্রলারের মিয়ানমার নৌবাহিনীর গুলিবর্ষণে একজন জেলের গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত, দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন।
মিয়ানমার নৌবাহিনীর গুলিতে নিহত মোহাম্মদ ওসমান শাহপরীর দ্বীপের কোনারপাড়া এলাকার বাচ্চু মিয়ার ছেলে। তিনি শাহপরীর দ্বীপের বাজারপাড়া এলাকার সাইফুল কোম্পানির মালিকানাধীন ট্রলারের জেলে।
এর আগে, বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দাদের মালিকানাধীন ট্রলারগুলো সেন্টমার্টিনের অদূরে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে মিয়ানমার নৌবাহিনীর কবলে পড়ে। ওই সময় বাংলাদেশী ট্রলার লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে তারা।
আহত গুলিবিদ্ধ দুই জেলেও ওই ট্রলারের। তারা হলেন শাহপরীর দ্বীপ বাজার পাড়ার বাসিন্দা রাজু ও আরেকজন মাঝের পাড়ার মোহাম্মদ রফিক। তবে অন্য জেলেদের নাম-ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ট্রলার মালিকেরা জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমের মৌলভীর শিল নামের বঙ্গোপসাগরের মোহনায় এ ঘটনা ঘটে।
ধরে নিয়ে যাওয়া ছয়টি ট্রলারের মালিক হলেন শাহপরীর দ্বীপের মিস্ত্রিপাড়ার মুসলিম মিয়ার ছেলে মতিউর রহমান, মরহুম আলী হোছনের ছেলে আব্দুল্লাহ, তার ভাই আতা উল্লাহ ও উত্তরপাড়ার ছৈয়দ মাঝির ছেলে মোহাম্মদ আছেম।
এখনো আটক জেলেদের কোস্ট গার্ড ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে নিশ্চিত করেন ট্রলারের মালিক মোহাম্মদ কায়সার।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ইউপি সদস্য আব্দুস সালামও এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘এলাকায় ছয়টি ট্রলার সেন্টমার্টিনের অদূরে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যায়। এ সময় মিয়ানমার নৌবাহিনী গুলিবর্ষণ করে। এতে একজন নিহত হয়। এছাড়া আরো দুজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়েছি।’
টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘সেন্টমার্টিনে কাছাকাছি মাছ শিকার করে ফেরার সময় একটি ট্রলারকে গুলি করে মিয়ানমার নৌবাহিনী। ট্রলারে থাকা একজন জেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। আর বাকি দুজন গুলিবিদ্ধ হন।’
ট্রলারের মালিক মোহাম্মদ কায়সার বলেন, ‘সেন্টমার্টিনের কাছাকাছি মাছ ধরা শেষে শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাট দিয়ে ফিরছিলাম। এ সময় নাইক্ষ্যংদিয়া-সংলগ্ন অংশে মিয়ানমার নৌবাহিনীর একটি জাহাজ আমার ট্রলারের দিকে থেকে অতিক্রম করছিল। মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে হঠাৎ আমার ট্রলার লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে আমাদের এক জেলে মারা গেছে আর দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা নাফ নদের বাংলাদেশের পানিসীমায় ছিলাম এবং হাত উচু করে বাংলাদেশী পতাকা দেখিয়ে তাদের গুলি না করতে ইশারা করছিলাম। এরপরও তারা মানেনি। গুলি করতে থাকে।’
আহত জেলে মোহাম্মদ রফিক বলেন, ‘অলি আহমেদ ট্রলার নিয়ে গত চার দিন আগে ১০ জন মাঝিমাল্লা নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যান। বৃহস্পতিবার ফেরার পথে সাগরে মিয়ানমারের অংশে অবস্থান নেয়া মিয়ানমার নৌবাহিনীর একটি জাহাজ সঙ্কেত দিয়ে তাদের দিকে যেতে বলে। ওটা মিয়ানমারের পানিসীমা হওয়ায় তারা সেন্টমার্টিন দ্বীপের দিকে চলে আসতে থাকে। এ সময় গুলিবর্ষণ করে তারা। এ ঘটনায় দু’জন গুলিবিদ্ধ হন। আরেকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। অন্যরা অক্ষত আছে।’
এ ব্যাপারে বিজিবির টেকনাফের ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো: মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সেন্টমার্টিনের অদূরে বঙ্গোপসাগরের মিয়ানমারের সীমান্তে নৌবাহিনীর গুলিতে এক নিহত এবং আরো দুজন আহত হওয়ার খবর পেয়েছি। এ ঘটনায় বিস্তারিত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরীও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, সেন্টমার্টিনের কাছে মিয়ানমার নৌবাহিনীর গুলিতে এক বাংলাদেশী জেলে নিহত ও দুজন গুলিবিদ্ধ হন। ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের ছেড়ে দিয়েছে মিয়ানমার নৌবাহিনী। কোস্টগার্ড গিয়ে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
শাহপরীর দ্বীপ পলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হক জানান, নিহত ও গুলিবিদ্ধ জেলেসহ ১১ জন মাঝিমাল্লা নিয়ে একটি ট্রলার শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটে ফিরেছে। পরবর্তী আইনি কার্যক্রমের জন্য নৌ-পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা