১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ৬ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

টানা ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল

কক্সবাজার - নয়া দিগন্ত

হঠাৎ বৃষ্টি, আবার মিষ্টি রোদ, আকাশে মেঘের ঘটা। সমুদ্রের গর্জন মানুষের মনকে করেছে উদ্বেলিত। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে উৎসব মুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন উদযাপন করছে তাদের ধর্মীয় মহোৎসব। সরকার পরিবর্তনের সময়ের মন্দা কাটিয়ে পর্যটন শিল্পে আশার আলো দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। দুর্গাপূজার বন্ধের সাথে সাপ্তাহিক ছুটি এবং নির্বাহী আদেশ মিলিয়ে চার দিনের ছুটির ফাঁদে পড়ছে দেশ। এ সময়টা কাজে লাগাতে বরাবরের মতো এবারো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নেমেছে ভ্রমণপ্রেমীদের ঢল।

পার্বত্য তিন জেলায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার কারণে সবার লক্ষ্য এবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।

ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, এবার ২০ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটক সমাগম থাকবে কক্সবাজারে। ইতোমধ্যে ১০-১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ৯০-৯৮ শতাংশ হোটেল বুকিং হয়েছে। আর ১৪-২০ অক্টোবর পর্যন্ত ৮০-৮৫ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। তবে পর্যটক টানতে প্রায় প্রতিটি হোটেলে চলছে ৪০-৪৫ শতাংশ ছাড়।

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণ পিপাসুদের আগমনে মুখরিত হয়ে ওঠে সমুদ্র সৈকত। শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা ও ভ্রমণে আনন্দ উপভোগ করতে প্রশাসন সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধ্যা পয়েন্ট ও কলাতলী পয়েন্টে ঘুরে দেখা গেছে, পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে সৈকতের সর্বত্র জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাজারো পর্যটক। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধ্যা পয়েন্টের প্রবেশ মুখে বিশালাকারের গর্ত ও ভাঙনে স্পটটি তার সৌন্দর্য হারিয়েছে। আগে সেখানে বালুকাময় স্পটে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে নানান আয়োজন ছিল। এবার সেটি সমুদ্রের ভাঙনে প্রবেশমুখে সবার দৃষ্টিগোছর হয়েছে।

ভ্রমণকে স্বরণীয় করার জন্য প্রিয় মানুষকে সাধ্যমতো উপহার কিনে দিতে ভিড় দেখা গেছে রাখাইন বার্মিজ মার্কেটগুলোতে। কেউ আবার মোবাইল ফোনে বিভিন্ন ভঙ্গিতে ছবি তুলে ভ্রমণকে স্মৃতিময় করে রাখছেন।

টানা ছুটি উপলক্ষে যাত্রীদের সুবিধার্থে ঢাকা-চট্রগ্রাম-কক্সবাজার রুটে সাতটি বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) থেকে রোববার (১৩ অক্টোবর) পর্যন্ত এই বিশেষ ট্রেনগুলো চলবে।

নিয়মিত দুই জোড়া ট্রেনের পাশাপাশি এই বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে।

কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা মো: গোলাম রব্বানী জানান, ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে ১০ অক্টোবর রাত ১১টায় কক্সবাজারগামী প্রথম বিশেষ ট্রেনটি ছেড়ে পরদিন সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে কক্সবাজার পৌঁছাবে। এছাড়া ১১-১৩ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিন কক্সবাজার থেকে দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে বিশেষ ট্রেনগুলো ছাড়বে এবং রাত ১০টায় কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছাবে। টানা তিন দিনের সরকারি ছুটির কারণে যাত্রীদের ব্যাপক চাহিদার কথা মাথায় রেখে চার দিনে মোট সাতটি বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন বিভাগের কক্সবাজার অফিস প্রধান ইমতিয়াজ নুর সুমেল বলেন, ‘দীর্ঘদিন মন্দা যাওয়া পর্যটনের হয়তো সতেজতা ছড়াবে বৃহস্পতিবার হতে শুরু হওয়া চার দিনের ছুটি। হঠাৎ ছুটি পেয়ে ভ্রমণপিপাসুরা পরিবার নিয়ে কক্সবাজার আসতে আগাম বুকিং দিয়েছেন। চার দিনের ছুটিতে আমরা এখন পর্যন্ত ৯৫ শতাংশ বুকিং পেয়েছি। এরপর ২০ অক্টোবর পর্যন্ত বুকিং রয়েছে ৮০-৮৫ ভাগ রুম। নিঃস্প্রাণ পর্যটনে সতেজতা ফেরাতে আমরা বেশিভাগ ৪০-৪৫ শতাংশ এবং ক্ষেত্র বিশেষে ৫০ শতাংশ ছাড়ও দিয়েছি।’

পর্যটকদের ভোজনে ভিন্নস্বাদ দিতে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ উৎসবের আয়োজন রয়েছে। যেকেউ চাইলে স্বল্পমূল্যে আট ক্যাটাগরির ইলিশ রান্নার স্বাদ নিতে পারেন।

ট্যুর অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (টুয়াক) সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, ‘কক্সবাজারে হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস রয়েছে প্রায় পাঁচ শ’। এসব আবাসনে দৈনিক প্রায় সোয়া লাখ পর্যটকের রাত যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। পূজার ছুটি দিয়ে এবারের পর্যটন মৌসুমটা চাঙ্গা হয়ে উঠবে বলে আশা করছি।’

কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘কক্সবাজারের আবাসিক প্রতিষ্ঠান সাজিয়ে রাখা হয়েছে পর্যটকদের জন্য। ভ্রমণপিপাসুদের সেবা দিতে আমরা সব সময় প্রস্তুত।’

হোয়াইট অর্কিড হোটেলের জি এম রিয়াদ ইফতেখার বলেন, ‘কক্সবাজার দিয়ে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব আয় করে সেভাবে পর্যটনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন নেই। এরপরও দীর্ঘ সৈকত, হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী, মহেশখালী, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ জেলায় কিছু পর্যটন স্পট থাকায় লোকজন আসেন। ভ্রমণ পিপাসুদের জন্যে আরও সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা দরকার।’

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মাহফুজুল ইসলাম জানান, কক্সবাজারসহ সব পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে।


আরো সংবাদ



premium cement