২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সিলেটে সক্রিয় সিন্ডিকেট চক্র : কাঁচা মরিচ ৫০০ টাকা, সবজির সেঞ্চুরি

সিলেটে সক্রিয় সিন্ডিকেট চক্র : কাঁচা মরিচ ৫০০ টাকা, সবজির সেঞ্চুরি - সংগৃহীত

সিলেটে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছে দুষ্ট সিন্ডিকেট চক্র। বাজারে যেন আগুনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। সবকিছু ছাপিয়ে কাঁচা মরিচের দাম বাজারের ঝাল বাড়িয়ে তুলেছে।

সোমবার সকালে কাঁচামরিচের কেজি খুচরা বাজারে ৫০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। সবজির বাজারেও আগুন জ্বলছে। টমেটো দেড় শ’ টাকা, আর বেগুন ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সবগুলো সবজির দামই এক শ’ টাকায় ওঠানামা করছে।

খুচরা বাজারের বিক্রেতারা জানান, হঠাৎ পাইকারি বাজারে আড়তদাররা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাই তাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এসব বাজারে কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যে যেভাবে পারে দাম বাড়ায়, কমায়।

সিলেটের পাইকারি আড়তের বাজার সোবহানীঘাটের ট্রেড সেন্টারে সোমবার সকালে দেখা যায়, কাঁচা মরিচ কেজিতে ৩৫০, ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় এবং ধনেপাতা কেজিতে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে কাঁচা মরিচ ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এর পাশাপাশি অন্য শাকসবজির দামেও আগুন। সবজি সর্বোচ্চ দেশ শ’ টাকা থেকে নিম্নে ৬০-৭০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে।

তবে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের কাছ থেকে দুই-চার টাকা কমে কেনা যায় সব ধরনের শাকসবজি। যদিও সেগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

সিলেটের খুচরা বাজারগুলোতে টমেটো প্রতি কেজি ১৫০, শিম ২৫০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৫০, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৬০, ঢেঁড়স ৬০, ঝিঙে ৮০, কাঁকরোল ৮০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, মুলা ৯০, পটোল ৮০, বেগুন ১০০, আমড়া ১০০, শসা ১০০, গাজর ৮০, কচুরমুখী ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কাঁচকলা এক হালি ৬০ টাকা, লতা এক আঁটি ৬০, মিষ্টিলাউ প্রতি পিস ছোট ১০০ টাকা, মাঝারি ৮০ টাকা, বড় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

সোমবার সিলেটের বন্দর বাজার, ব্রম্মময়ী বাজার, শিবগঞ্জের কিচেন মার্কেট, রিকাবি বাজার, আম্বরখানার তরকারি বাজারসহ বিভিন্ন সবজি বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে বিক্রেতারা বলছেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভারতের উজানে টানা কয়েক দিন ভারী বৃষ্টিতে শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সবজির ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় বাজারে সবজির চাহিদা মেটাতে পারছে না।

এমন পরিস্থিতিতে আড়তে সরবরাহ কম আসছে, তাই সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে।

অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, সব ধরনের পণ্যে এখন ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছামতো দাম বাড়ান। আগে সিন্ডিকেট করে চাল, তেল, পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হতো। এখন সবজি ব্যবসায়ীরাও সিন্ডিকেট করে নিজেদের ইচ্ছামতো শাকসবজির দাম বাড়াচ্ছে।

সোমবার সকালে সিলেট নগরীর টুকেরবাজার, সোবহানিঘাট সবজির আড়ত ও মদিনা মার্কেট, বন্দরবাজার, কাজীরবাজার এবং রিকাবীবাজার এলাকার সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, তুলনামূলক ক্রেতার আনাগোনা অনেক কম।

সবজি কিনতে আসা বন্দর বাজার এলাকার প্রাচীনতম সবজি মার্কেট ব্রম্মময়ী মার্কেটে ফাহমিদা আক্তার নামের ক্রেতা বলেন, ‘আমরা নিজে তরতাজা শাকসবজি কিনতে বিখ্যাত এই সবজি বাজারে কিছু কিনতে এসেছিলাম। ৭০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। কাঁচা মরিচ, ধনিয়াপাতা, টমেটো, শসা, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি ও গাজরের দামে তো আগুন। অথচ আগে এই সময়ে আমরা অনেক কম দামে শাকসবজি কিনেছি।’

নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকার সবজি ব্যবসায়ী আনছার আলী বলেন, ‘এই দু’দিন বৃষ্টি ছিল। তাই ক্রেতা অনেক কম ছিল। শাকসবজির দাম একটু বেশি এখন। তবে কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা ও টমেটোর দাম বেশি। কারণ আড়ত থেকে আমাদের বেশি দামে কিনতে হয়েছে।’

এদিকে পাইকারি বাজারেও সবজির দাম বেড়ে যাওয়া ও মুনাফা বেশি না হওয়ায় অনেক ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা এখন শাকসবজি বাদ দিয়ে ফল বিক্রি শুরু করেছেন। এমনই এক ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহ থেকে আড়তে শাকসবজির দাম বেশি। সবজি বিক্রিতে যেমন মুনাফা কম অন্যদিকে ঝুঁকিও বেশি। কারণ বিক্রি কমে গেলে সবজি খুব তাড়াতাড়ি পচে যায়। আমরা ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা বেশি মূল্যে সবজি কিনলে খুব একটা লাভ হয় না।’

তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে লাভ তো দূরের কথা, কেনা দামই ওঠে না। তাই কয়েক দিন ধরে আর সবজি বিক্রি করছি না। এখন চিন্তা করেছি কয়েক দিন বিভিন্ন মৌসুমী ফল- কলা, আমড়া, পেয়ারা, ড্রাগন বিক্রি করব। আমার মতো সবজিতে লোকসানের কারণে অনেক ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা এখন ফল বিক্রি শুরু করেছেন।’


আরো সংবাদ



premium cement