পাহাড়ে নবান্নের প্রস্তুতি, জুমে সোনালী ফসলের হাতছানি
- মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান)
- ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৫, আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৭
বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলার সবুজাভ অরণ্যে এখন চলছে জুমের ফসল তুলার ধুম। জুম ফসলের আনন্দে মাতোয়ারা জুমিয়া পরিবারগুলো। পাহাড়ের পাড়ায় পাড়ায় চলছে নবান্নের প্রস্তুতি। দক্ষিণ বান্দরবানের লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার পাহাড়ি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে জুমের ফসল তোলার উৎসবমুখর পরিবেশ।
পাহাড় ঘুরে দেখা গেছে, জুমে এখন সোনালী ফসলের সমাহার। শরতের হাওয়ায় পাকা ধানের শীষের সাথে আনন্দে দোলা দিচ্ছে জুমিয়াদের মন।
পাহাড়ে বসবাসরত নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর প্রধান পেশা জুমচাষ। সারাবছরের অন্নসংস্থানের আয়োজন হয় পাহাড়ের উৎপাদিত জুম ফসল থেকে। পাহাড়কে ঘিরে বেঁচে থাকার নিত্যদিনের সংগ্রাম জুমচাষীদের।
তঞ্চঙ্গ্যা জনজাতির পরলোকগত সাংবাদিক উচ্চতমনি তঞ্চঙ্গ্যা জুমচাষকে নিয়ে লিখেছেন-
‘ঢেউ খেলানো শ্যামল পর্দায়
আলো আসবে ক’দিন পর,
ব্যস্ত সবাই মঞ্চ সজ্জায়
পাহাড়িকা সাজ ঘর।’
পাহাড়ে উৎপাদিত জুমের ফসলকে ‘আলো’ জুমে স্থাপিত ছোট ঘরকে ‘পাহাড়িকা সাঝ ঘর’ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। পাহাড়ের জীবন-জীবিকার বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায় এ পংক্তি মালায়। পাহাড়িদের পেশা ও জীবন-জীবিকা দেশের অন্য যেকোনো এলাকা থেকে ভিন্নমাত্র যোগ করেছে।
জুমচাষীরা জানান, ফালগুনের শেষ ও চৈত্র মাসের প্রথম দিকে পাহড়ের বন-জঙ্গল কেটে ১৫ থেকে ২০ দিন রাখার পর তা আবার আগুনে পুড়িয়ে পাহাড়ের গায়ে সনাতন পদ্ধতিতে ধান বপন সাথে মিশ্র ফসলের চাষ করা হয়। এ চাষই পাহাড়ে ‘জুমচাষ’ হিসেবে পরিচিত।
শরৎকালে পাহাড়ে জুমের ধান পাকতে শুরু হয়। শরতের স্নিগ্ধ হাওয়ায় দোলা দেয় পাহাড়ে পাকা ধানের শীষ। ধান, মরিচ, আদা, হলুদ, তুলা, ভূট্টা, সিনার, মার্ফা ইত্যাদি ফসল উৎপন্ন হয় জুম চাষে। ফসল তোলার সময় শুরু হলে আনন্দের ফোয়ারা বয়ে যায় পরিবারের সদস্যদের মাঝে। পাকা ধানের সৌন্দর্য্যে অমলিন দৃশ্য ফুটে উঠেছে পার্বত্যাঞ্চলজুড়ে। একেকটি পাহাড় যেন একেকটি পরিবারের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। এ মৌসুমে জুমিয়া পরিবারগুলো ঘুরে দাঁড়াবার স্বপ্ন দেখে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জুম ফসলে ক্ষতিকর কোনো প্রভাব পড়েনি বলে জানান জুমচাষীরা।
আলীকদমে কলারঝিরি, চাইম্প্রা মৌজার রাইতোমনি পাড়া, বৈদ্যপাড়া, রোয়াম্ভু, পূর্নবাসন, কুরুকপাতা, পোয়ামূহুরী লামার মিরিঞ্জা, রুপসীপাড়া প্রভৃতি এলাকায় পাহাড়ি এলাকায় জুমিয়ারা জুমের ফসল তুলতে ব্যস্ত।
বৈদ্যপাড়ার গড়ামনি তঞ্চঙ্গ্যা, পূর্নবাসনের দিবুইয়া মনি, কুরুক পাতার বিদ্যামনি ত্রিপুরা ও পোয়ামূহুরীর মেনচিক ম্রো জানান, এ বছর জুম মৌসুমে তেমন অনুকূল ছিল না। জুমে ধানসহ অন্য ফসলের ক্ষতিও হয়েছে বেশ। জুমের পাকা ধান ইতোমধ্যে কাটা হয়েছে।
জুমিয়ারা বাঁশ-বেতের তৈরি একটি বিশেষ ঝুড়ি ‘থুরম’ দিয়েই জুমের ফসল উত্তোলন করেন।
স্থানীয় তঞ্চঙ্গ্যা জনজাতির শিক্ষিত তরুণ সংবাদকর্মী সুহৃদয় তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, দুর্গম দোছরী, বাকখালী ও রোয়াম্ভু এলাকার অন্য বছরের তুলনায় জুমের ফসল তেমন ভালো হয়নি। তারপরও জুমের ফসল ঘরে তোলতে আশায় বুক বেধেছেন জুমিয়া পরিবারগুলো।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা