২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

মেরিন ড্রাইভ সড়ক উখিয়ার ইনানীতে যেন থাইল্যান্ডের ছোঁয়া

মেরিন ড্রাইভ সড়ক উখিয়ার ইনানীতে যেন থাইল্যান্ডের ছোঁয়া - নয়া দিগন্ত

পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের কলাতলী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত ৮০ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে এখন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এখন মেরিন ড্রাইভ সড়ক উখিয়ার ইনানীতে যেন থাইল্যান্ডের ছোঁয়া।

কক্সবাজার গেলেই যে কেউ মেরিন ড্রাইভ সড়কটি মিস করতে চায় না। এক পাশে চোখ জুড়ানো উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ আর অন্য পাশে পাহাড়ের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের হাতছানি। পাহাড় ও সমুদ্রের অপরূপ মেলবন্ধন আপনাকে মুগ্ধ করবে।

কক্সবাজারে সমুদ্র দেখতে যাবেন, কিন্তু পুরো সমুদ্র সৈকতের দৃশ্য কেমন তা দেখতে মেরিন ড্রাইভে যাবেন না, তা তো হতেই পারে না। মেরিন ড্রাইভে ঘুরে সমুদ্রের গর্জন আর নীল নীল ঢেউয়ের মাঝে সূর্যাস্তের দৃশ্যে হারিয়ে যাবেন। এমন অবারিত সবুজের পাঠশালায় অবকাশ যাপনের ইচ্ছা তো অনেকের। এই মেরিন ড্রাইভে দাঁড়িয়ে নির্মল বাতাসে উজ্জীবিত হওয়ার সুযোগ নাগরিক জীবনে এনে দিবে অন্যরকম অভিজ্ঞতা। কক্সবাজারে সমুদ্রের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করার এক অপার সুযোগ সৃষ্টি করেছে মেরিন ড্রাইভ।

বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষা নির্মিত এ সড়কটিকে পৃথিবীর বৃহত্তম মেরিন ড্রাইভ সড়ক হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। কক্সবাজার কলাতলী ডলফিন মোড় পার হয়ে একটু সামনে গেলেই মেরিন ড্রাইভ সড়ক। কলাতলী পয়েন্ট থেকে এখানে বেড়াতে উন্মোক্ত ছাদের দ্বিতল বাসে আরোহণ করতে পারেন। এ পথের প্রথম দিকে রয়েছে বিভিন্ন মাছের হ্যাচারি জোন। একটু পরেই রয়েছে দরিয়ানগর ইকোপার্ক বা দরিয়ানগর সমুদ্র সৈকত। আর এ দরিয়ানগর থেকে শুরু রামু উপজেলা। রামু থেকেই মেরিন ড্রাইভের উপভোগ্য সৌন্দর্যের শুরু। মেরিন ড্রাইভের পূর্ব পাশে সারি সারি সুপারি বাগান, অরণ্যে ঘেরা পাহাড়, ঝর্ণা ও পশ্চিমে সমুদ্র সৈকত। এ দু’য়ের মাঝেই পিচঢালা পথ। আরো সামনে গেলেই কক্সবাজার থেকে ১২ কিলোমিটার দূরত্বে এ মেরিন ড্রাইভ সড়কের কাছেই হিমছড়ি সৈকত।

এখানে রয়েছে পাহাড়ি ঝর্ণা ও সুউচ্চ পাহাড় থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করার সুযোগ। মিনি বান্দরবান খ্যাত রেজু খালের পাশে রয়েছে গোয়ালিয়া। রেজুখাল পার হয়ে দেখা যাবে বিশাল ঝাউবাগান আর মাছ ধরার নৌকা। সমুদ্রের গর্জন শুনতে শুনতে সোনারপাড়া, চরপাড়া, নিদানিয়া হয়ে উখিয়ার পাথুরে গাথা ইনানী বিচ। এ বিচের পাশেই রয়েছে পাঁচ তারকা মানের হোটেল। রাত্রি যাপনের বিভিন্ন হোটেলের পাশাপাশি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে ইনানী সমুদ্র সৈকত আপনাকে দেবে অসাধারণ অনুভূতি। সব মিলিয়ে মেরিন ড্রাইভ সড়ক সত্যিই অনন্য।

মেরিন ড্রাইভের পাশে উখিয়ার ইনানীতে তৈরি করা হয়েছে অবকাশকেন্দ্রের পরিবেশ। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশ থাইল্যান্ডের ফুকেটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ ঘুরতে এসে প্রশান্তি অনুভব করেন। ইনানীতে দি ওয়েভ রিসোর্ট যেন ফুকেটের এক নান্দনিক রিসোর্টের প্রতিচ্ছবি।

বর্তমান কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এবং উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সাংসদ ও হুইফ শাহজাহান চৌধুরী বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া উখিয়ার জনসভায় মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে বলে ঘোষণা দেন। ১৯৯৩ সালে সেপ্টেম্বর থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন এবং পর্যটন শিল্পের দ্রুত বিকাশের উদ্দেশে নেয়া অবকাঠামো প্রকল্প এটি। ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্পটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর-১৬ ইঞ্জিনির্য়াস কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের (ইসিবি) মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য পাশ হয়।

তিনি বলেন, এ প্রকল্পটি ২০০০ সালে একনেকের সভায় পাশ হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, প্রকল্পটি তিনটি ধাপে বাস্তবায়িত হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০০৮ সালে প্রথম ধাপে কলাতলী থেকে উখিয়ার ইনানী পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটারের রাস্তা নির্মাণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালের জুন মাসে ইনানী থেকে শিলখালী পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করা হয় ৪৭ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে। আর শিলখালী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা হয় ২০১৮ সালে প্রায় ২০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে। সব মিলিয়ে এ সড়কটি এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। পাশাপাশি উপকূলের জনগণকে জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস হতে রক্ষা, লবণাক্ততার প্রভাব হ্রাস, প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ এবং বঙ্গোপসাগরের মৎস্য শিল্পের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।


আরো সংবাদ



premium cement