১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

কোনো রকমে বাড়ল সূচক কমেছে লেনদেন

-

- কিছুটা অনিশ্চয়তার মধ্যে সূচকের পথচলা
- বেচাকেনার চাপ সমান সমানে চলে এসেছে

বেশ কিছু দিন পতনের কব্জায় ছিল দেশের পুঁজিবাজার। পটপরিবর্তনেও বাজারের প্রত্যাশিত উন্নতি ঘটেনি। যার কারণে বিনিয়োগকারীরা হতাশ। গত সপ্তাহ ধরেই পতনে ছিল। চলতি সপ্তাহেও একই অবস্থা। গতকাল দুই বাজারের মূল্যসূচক কিছু পয়েন্ট ফিরে পেয়েছে। সূচকের এই ইতিবাচক মোড় নেয়াতেও নিশ্চয়তা নেই। বেচাকেনার ক্ষেত্রে চাপটা সমান সমান চলে এসেছে। কিন্তু কমেছে শেয়ার বিক্রি ও লেনদেনে টাকার পরিমাণ। দর বৃদ্ধিতে যে পরিমাণ কোম্পানি তার চেয়ে দ্বিগুণ কোম্পানি গতকাল ডিএসইতে দর পতনের শিকার। হারিয়েছে বাজার মূলধনও।

দিনের লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বৃদ্ধি দিয়েই। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে। বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দাম বৃদ্ধির একপর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ৩২ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে লেনদেনের শেষ দিকে দাম বৃদ্ধির তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে। ফলে বড় হয় দাম কমার তালিকা। অবশ্য এর মধ্যেও দাম বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত বড় মূলধনের প্রতিষ্ঠানগুলোর। ফলে দ্বিগুণ প্রতিষ্ঠানের দাম কমার পরও সূচক বেড়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়েছে।
ডিএসইর সূচক ডিএসইএক্স ১২.৫৩ পয়েন্ট, শরিয়াহ সূচক ৭.৪৯ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৮.৩৬ পয়েন্ট ফিরে পেল। লেনদেনে ৩৯৬টি কোম্পানি অংশ নিলেও দর বেড়েছে ১১৩টির, দর পতনে ২২৪টি এবং দর অপরিবর্তিত ৫৯টি। ষোল কোটি ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ১৩৪টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে ৫৫৩ কোটি ৬৫ লাখ ৭২ হাজার ৭৫৬ টাকা বাজারমূল্যে। যেখানে আগের দিন ৬৩৪ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়েছিল। ফলে লেনদেন টাকায় ও শেয়ারে কমেছে।

আর ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল ৩৬টি কোম্পানির এক কোটি ৪৩ লাখ ৯৪ হাজার ৪৮৩টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৪৫ কোটি ৫০ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। ডিএসইর তথ্য বলছে, সর্বোচ্চ পাঁচটি কোম্পানি বেশি লেনদেন হয়েছে। এই পাঁচ কোম্পানির মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকারও বেশি। কোম্পানিগুলো হলো- ইস্টার্ন ব্যাংক, ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, এসবিএসি ব্যাংক এবং প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংকের। ব্যাংকটির পাঁচ লাখ ৩০ হাজারটি শেয়য়ার হাতবদল হয়েছে মোট ১৪ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। এ ছাড়া ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকোর ৯ কোটি ৮১ লাখ ৪৪ হাজার টাকার, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের চার কোটি ১৬ লাখ ২৯ হাজার টাকার, এসবিএসি ব্যাংকের ৪ কোটি ৭ লাখ টাকার এবং প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের ৩ কোটি ৬৭ লাখ ৮৩ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

অন্য দিকে চট্টগ্রাম স্টকের সবগুলো সূচকই পয়েন্ট সংগ্রহ করে গতকাল ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সিএএসপিআই ৪০ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স ২৫.২৬ পয়েন্ট এবং সিএসই-৩০ সূচক ২৪.২৩ পয়েন্ট ফিরে পেয়েছে। সিএসসিএক্স দশ হাজার পয়েন্টের নিচে চলে গেছে সূচকটি। এমনকি সিএএসপিআই সূচকটিও ১৬ হাজার পয়েন্টে কিছু বেশি। ২৩৭টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিলেও দর বেড়েছে মাত্র ৭৪টির, কমেছে ১৩৩টির এবং দর অপরিবর্তিত ৩০টির। ২১ লাখ ১২৭টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে আট কোটি ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ৩২৫ টাকা বাজারমূল্যে।
স্ট্র্যাটেজিক ইকুইটি ম্যানেজমেন্টের অনিয়ম তদন্ত কমিটি : এ দিকে মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনা করা অ্যাসেট ম্যানেজার প্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটেজিক ইকুইটি ম্যানেজমেন্টের অনিয়ম খুঁজতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গত মঙ্গলবার বিএসইসির পরিচালক মাহমুদুল হক সাক্ষরিত এই সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির সদস্য রয়েছেন তিনজন। তারা হলেন- বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আমদাদুল হক, উপপরিচালক মো: রফিকুন্নবি ও সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবু হেনা মোস্তফা। তদন্ত কমিটিকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

তদন্ত কমিটি গঠনের আদেশে বলা হয়েছে, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটেজিক ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট থেকে বিনিয়োগে কোন অনিয়ম হয়েছে কি না, বিনিয়োগ থেকে স্বার্থের সংঘর্ষ হয়েছে কি না, ব্যাংক হিসাব যাচাই, পরিচালন ব্যয় যাচাই, মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা লঙ্ঘন করেছে কি না, ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ানের ভূমিকা নিয়ে প্রতিবেদন নিয়ে জমা দেবে তদন্ত কমিটি।
লেনদেন পর্যালোচনায় ব্রোকারেজ হাউজ ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যালোক রয়্যাল ক্যাপিটাল বলছে, কিছুটা অনিশ্চয়তার মাঝে সূচক। লেনদেন ৫০০ কোটির ঘরে। প্রধান সূচক আজ সারা দিনই ইতিবাচক ছিল। ব্যাংক খাতের কিছু শেয়ার মূল্যবৃদ্ধির তালিকার শীর্ষে অবস্থান করেছে যার বিপরীতে কিছু দিন ধরে মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া স্বল্প মূলধনী কোম্পানির শেয়ারের মূল্য হ্রাস পেয়েছে। আজ ডিএসইএক্স ১২ পয়েন্ট বৃদ্ধির বিপরীতে লেনদেন হ্রাস পেয়েছে ৮০ কোটি টাকা। ভলিউম ১৭ শতাংশ কমেছে এবং টার্নওভার ১৭ শতাংশ কমেছে। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে ৭টি সেক্টরের বাজার মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ১২টি সেক্টরের বাজার মূলধন হ্রাস পেয়েছে। ফ্লোর প্রাইসে ১টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ব্লক মার্কেটে ৪৫.৫ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা মোট লেনদেনের ৮.২ শতাংশ। এসএমই বাজার সূচক (ডিএসএমইএক্স) ২৪.৩৭ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৭৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৯৮ কোটি টাকা, যা গতদিনের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। সারা দিন মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেলেও দিনশেষে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে বাজার শেষ হয়েছে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement