২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
বিক্রির চাপ ৫৬ শতাংশ আর ক্রয় ৪৪

দরপতন অব্যাহত পুঁজিবাজারে

বড় মূলধনী কোম্পানির মূল্য ধরে রাখায় বাজার ইতিবাচক
-

দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। আগের সপ্তাহেও একই অবস্থা পার করেছে বাজার। সপ্তাহের শুরুটাও সেই পতন দেখল। তবে লেনদেনের সূচনা ভালো ছিল। মাঝপথে এসে সেই ধারা ধরে রাখতে পারেনি। ফলে পতনেই শেষ হলো কেনাবেচা। এখনো বাজারে বিক্রির চাপটাই বেশি। ৫৬ শতাংশ বিক্রির চাপের বিপরীতে ক্রেতার চাপ ৪৪ শতাংশ। পতনের কারণেই ডিএসইর বাজার মূলধন থেকে আরো ০.০৩ শতাংশ তারল্য চলে গেছে। বিগত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর প্রধান সূচক বেড়েছে প্রায় ২৩ পয়েন্ট। এর বিপরীতে গতকাল সংশোধন হয়েছে ১৪ পয়েন্ট। অপরদিকে সূচকের চার্টে পাঁচ হাজার ৬৯০ থেকে পাঁচ হাজার ৬৯৭ পয়েন্টের মধ্যকার ৭ পয়েন্টের ব্যবধান পূর্ণ করেছে, যা একটি ইতিবাচক দিক। বড় মূলধনী কোম্পানির শেয়ারের মূল্য ধরে রাখায় বাজার এক অর্থে ইতিবাচক ছিল।
দিনের লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই দাম কমার তালিকায় চলে আসে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকে। শুরুর প্রথম ঘণ্টায় অর্থাৎ বেলা ১১টা পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান সূচক বা ‘ডিএসইএক্স’ ১০ দশমিক ৮১ পয়েন্ট কমে যায়। শরিয়াহ সূচক বা ‘ডিএসইএস’ ০ দশমিক ৫০ পয়েন্ট কমে আর ‘ডিএস-৩০’ সূচক ৯ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট কমে যায়।
দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স (ডিএসইএক্স) আগের কার্য দিবসের চেয়ে ১৪.৭৪ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ৭১১.৭৭ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ মূল্যসূচক ১৫.২২ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ৮৫.৫৩ পয়েন্টে নেমেছে। আর ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক (ডিএসইএস) এক পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ২৪৬.৬৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেনকৃত কো¤পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৬৯টির, কমেছে ১৮২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৬টি কোম্পানির শেয়ার। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মোট ৩৯৭টি কো¤পানির ১৭ কোটি ৬৭ লাখ ৫২ হাজার ১৫৮টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে। যার গতকালের বাজারমূল্য ৬৬৮ কোটি ৯৫ লাখ ৫৫ হাজার ২১৮ টাকা। গত বৃহস্পতিবার ৭৩৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়। ফলে লেনদেন কমেছে মোট ৬৫ কোটি টাকা।
লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো, লিন্ডে বিডি, সোনালি আঁশ, জিপি, অগ্নি সিস্টেম, অরিয়ন ইনফিউশন, সি পার্ল, এনআরবি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক ও সোনালি পেপার। দরবৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো: এসকে ট্রিমস, দেশ গার্মেন্ট, ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোড, সি পার্ল, এমারেল্ড অয়েল, এইচ আর টেক্স, সেন্ট্রাল ফার্মা, অরিয়ন ইনফিউশন, সোনালি পেপার ও কেডিএস এক্সেসরিজ। দর পতনের শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো: ট্রাস্ট ব্যাংক প্রথম মি. ফা., এনটিসি, ইবিএল প্রথম মি. ফা., অ্যাম্বি ফার্মা, কোহিনুর কেমিক্যাল, প্রিমিয়ার লিজিং, প্রাইম ফাইন্যান্স, এমবিএল প্রথম মি. ফা., অ্যাপোলো ইস্পাত ও রিজেন্ট টেক্সটাইল।
এদিকে, ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল ৩২টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নেয়। এদের ৬৯ লাখ ১৬ হাজার ৬৭২টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৩৭ কোটি ৪৩ লাখ ১৭ হাজার টাকায়। সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া সাত কোম্পানি হলো, ইবনে সিনা ফার্মা, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, বিচ হ্যাচারি, মিডল্যান্ড ব্যাংক, এসবিএসি ব্যাংক এবং ফাইন ফুডস লিমিটেড। এই দশ প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকারও বেশি। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ইবনে সিনা ফার্মার শেয়ার। কোম্পানিটির তিন লাখ পাঁচ হাজার শেয়ার হাতবদল হয়েছে মোট ১০ কোটি ৩৫ লাখ ১৫ হাজার টাকায়। প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ছয় কোটি ৩২ লাখ ১২ হাজার টাকার, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের চার কোটি ৬ লাখ এক হাজার টাকার, বিচ হ্যাচারির দুই কোটি ৯৮ লাখ সাত হাজার টাকার, মিডল্যান্ড ব্যাংকের দুই কোটি ৪৪ লাখ ১০ হাজার টাকার, এসবিএসি ব্যাংকের দুই কোটি ২০ হাজার টাকার এবং ফাইন ফুডস লিমিটেডের এক কোটি সাত লাখ ৮৭ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টকে তিনটি সূচকই গতকাল পতনের শিকার হয়। সিএসই-৩০ সূচক ৮৫.৪৫ পয়েন্ট, সিএএসপিআই ২১.৩০ পয়েন্ট এবং সিএসসিএক্স ১২.৫৪ পয়েন্ট হারিয়েছে। ২১৩টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েও দর বেড়েছে ৯৬টির, দর কমেছে ৯৭টির এবং দর অপরিবর্তিত ছিল ২০টির। ষোলো লাখ ৮৮ হাজার ৪০৩টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট পাঁচ কোটি ৮৩ লাখ ৮২ হাজার ২৫৯ টাকায়। যা গত বৃহস্পতিবারের তুলনায় তিন কোটি ১৬ লাখ টাকা কম। সেদিন আট কোটি ৯৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়।
বাজার বিশ্লেষণে রয়্যাল ক্যাপিটাল বলছে, লম্বা সময়ের সংশোধনের পর ফিরে এসেছে স্বল্পমূলধনী কোম্পানির শেয়ার। ডিএসইএক্স ১৪ পয়েন্ট কমার পাশাপাশি লেনদেন হ্রাস পেয়েছে ৬৪ কোটি টাকা। ঢাকার শেয়ার বাজারের প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) নি¤œমুখী ছিল। মূলধন গত দিনের তুলনায় ০.০৩ শতাংশ কমেছে। যেখানে ভলিউম ১ শতাংশ বেড়েছে। আর টার্নওভার ৯ শতাংশ কমেছে। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে ১০টি সেক্টরের বাজার মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ৯টি সেক্টরের বাজার মূলধন হ্রাস পেয়েছে। ফ্লোর প্রাইসে একটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ব্লক মার্কেটে ৩৭.৪ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা মোট লেনদেনের ৫.৫৯ শতাংশ। এসএমই বাজারসূচক (ডিএসএমইএক্স) ০.০৪ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৭৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা, যা গত দিনের তুলনায় ৬৫ শতাংশ বেশি।


আরো সংবাদ



premium cement