উভয় পুঁজিবাজারে কমেছে সূচক ও লেনদেন
সপ্তাহ ব্যবধানে বাজারমূলধন বেড়েছে ৮৯৮ কোটি টাকা- অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
- ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০, আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২:২০
সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের উভয় পুঁজিবাজারে সব সূচকের ঋণাত্মক পরিবর্তনের পাশাপাশি কমেছে গড় লেনদেন। তবে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সপ্তাহ ব্যবধানে বাজারমূলধন বেড়েছে ৮৯৮ কোটি টাকা।
সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২.১৩ পয়েন্ট বা ০.০৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭২৬.৫২ পয়েন্টে।
অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ১৬.৮৭ পয়েন্ট বা ১.৩৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৪৫.৬৮ পয়েন্টে। ডিএসই-৩০ সূচক ১৩.৬১ পয়েন্ট বা ০.৬৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১০০.৭৫ পয়েন্টে।
এ ছাড়া ডিএসএমইএক্স সূচক ৩৪.২৯ পয়েন্ট বা ২.৮৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৭৩.১৮ পয়েন্টে।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৬টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১০৭টি, কমেছে ২৭১টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে ৮৭ কোটি ৮৬ লাখ ২০ হাজার শেয়ার ৮ লাখ ৭১ হাজার ৭০৫ বার হাতবদল হয়। টাকার অঙ্কে যার বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২২১ কোটি ৪৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ৯৯৪ কোটি ৬ লাখ ১০ হাজার টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৭৭২ কোটি ৬০ লাখ ৬০ হাজার টাকা বা ১৯.৩৪ শতাংশ।
সপ্তাহের শুরুতে প্রথম কার্যদিবস লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯২ হাজার ৪৩১ কোটি ১৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৩ হাজার ৩২৯ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকায়।
অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ৮৯৭ কোটি ৮৫ লাখ ২০ হাজার টাকা বা ০.১৩ শতাংশ।
দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৩৮.৭৪ পয়েন্ট বা ১.৪৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ১৪০.০২৪০ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচক সিএসসিএক্স ১৪৬.৩৫ পয়েন্ট বা ১.৪৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৭২৯.৫৩ পয়েন্টে। অপর দুইটি সূচকের মধ্যে সিএসই-৫০ সূচক ১৩.৩৬ পয়েন্ট বা ১.১১ শতাংশ এবং সিএসআই সূচক ৮.৫৫ পয়েন্ট বা ০.৮২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ১৯৪.৫৫ পয়েন্টে এবং এক হাজার ৩০.৬৬ পয়েন্টে। এ ছাড়া সিএসই-৩০ সূচক ৮৭.২১ পয়েন্ট বা ০.৬৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ১২.৬৬ পয়েন্টে।
সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩২৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৬৯টি, কমেছে ২৪২টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১২টির। সপ্তাহটিতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৩৫ কোটি ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৭১৯ টাকার। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৭১ কোটি ৮১ লাখ ৪৩ হাজার ৯৪ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন কমেছে ৩৬ কোটি ২৬ লাখ ৭৯ হাজার ৩৭৫ টাকা বা ১০২.০২ শতাংশ।
গত সপ্তাহের ডিএসইতে লেনদেনে শীর্ষ কোম্পানিগুলোর মধ্যে ছিল যথাক্রমে- লিনডে বাংলাদেশ, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, ব্র্যাক ব্যাংক, অগ্নি সিস্টেমস, এনআরবি ব্যাংক, গ্রামীণফোন, একমি ল্যাবরেটরিজ, ইবনে সিনা ফার্মা, সোনালি আঁশ ও মবিল যমুনা।
মূল্য বৃদ্ধির তালিকায় ছিল যথাক্রমে- ন্যাশনাল টি, খান ওভেন ব্যাগ, লিবরা ইনফিউশন, নর্দান জুট, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, আলহাজ টেক্সটাইল, বিডি সাবমেরিন, এনআরবি ব্যাংক, তমিজ উদ্দিন ও জুট স্পিনার।
ডিএসইতে দর হারিয়েছে- রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এসকে টিম্স, কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, ইনট্রাকো সিএনডি, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, প্রাইম ফিন্যান্স প্রথম মিউ ফান্ড, খুলনা প্রিন্ট, ফারইস্ট ফিন্যান্স, ইউসিবিএল ও সালভো কেমিক্যালস।
খাতভিত্তিক লেনদেনে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ওষুধ এবং রসায়ন খাতে ১৮.৮৫ শতাংশ, তারপরেই ছিল ব্যাংক ১৭.৫৫ শতাংশ, জ্বালানি খাত ১০.১৮ শতাংশ, প্রকৌশল খাত ৮.০০ শতাংশ, টেক্সটাইল খাত ৭.৩৪ শতাংশ, খাদ্য এবং আনুষঙ্গিক খাত ৬.০৮ শতাংশ, বীমা খাত ৪.২১ শতাংশ, সিমেন্ট খাত ২.৮৭ শতাংশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত ১.৬৬ শতাংশ, বিনিয়োগ খাত ১.৫৫ শতাংশ, সিরামিকস খাত ০.৭৭ শতাংশ এবং বাকি অন্যান্য খাতে লেনদেন হয়েছে ২০.৩৯ শতাংশ।
ডিএসইতে ব্লক মার্কেটে ১০ কোম্পানির ১৩৫ কোটি টাকার লেনদেন : গত সপ্তাহে অর্থাৎ (০৮-১২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্লক মার্কেটে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ১০ কোম্পানির।
কোম্পানিগুলো হলো- ইবনে সিনা, লাভেলো আইস্ক্রিম, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, এক্সপ্রেস ইন্স্যুসুরেন্স, ওরিয়ন ইনফিউশন, এসবিএসি ব্যাংক, বিচ হ্যাচারি, খান ব্রাদার্স, ব্র্যাক ব্যাংক, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স ও প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইতে ব্লক মার্কেটে এই ১০ কোম্পানির মোট ১৩৫ কোটি ৪০ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্লক মার্কেটে ইবনে সিনার সবচেয়ে বেশি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে ব্লক মার্কেটে কোম্পানিটির ৩১ কোটি ৩৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বিদায়ী সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বশেষ দর ছিল ৩৪৬ টাকা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লাভেলো আইস্ক্রিমের ২৬ কোটি ৯০ লাখ ২০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বিদায়ী সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বশেষ দর ছিল ৮৩ টাকা ৪০ পয়সা।
তৃতীয় সর্বোচ্চ মিডল্যান্ড ব্যাংকের ২১ কোটি ৩০ লাখ ৩০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বিদায়ী সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বশেষ দর ছিল ৯৫ টাকা ৭০ পয়সা।
সপ্তাহজুড়ে ব্লক মার্কেটে লেনদেন হওয়া অন্য সাতটি কোম্পানির মধ্যে- এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের ১১ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ওরিয়ন ইনফিউশনের ৯ কোটি ৫০ লাখ ৮০ হাজার টাকা, এসবিএসি ব্যাংকের ৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা, বিচ হ্যাচারির ৭ কোটি ২৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা,খান ব্রাদার্সের ৬ কোটি ৮৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা, সান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৬ কোটি ৪৮ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৫ কোটি ৫২ লাখ ৬০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
ডিএসইর পিই রেশিও কমেছে ১.১৮ শতাংশ : গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিই রেশিও (সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত) কমেছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় ডিএসইর পিই রেশিও ১.১৮ শতাংশ বা দশমিক ০.১৩ পয়েন্ট কমেছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইর পিই রেশিও ১০.৮৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের সপ্তাহে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ১১.০১ পয়েন্ট।
খাতভিত্তিক হিসাবে পিই রেশিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যাংক খাতে ৬.৪ পয়েন্ট, সিমেন্ট খাতে ১৩.৮ পয়েন্ট, সিরামিকস খাতে ১১৭.৫ পয়েন্ট, প্রকৌশল খাতে ১৪.৭ পয়েন্ট, আর্থিক খাতে ৩৮.৭ পয়েন্ট, খাদ্য খাতে ১৫.৫ পয়েন্ট, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ১০.৪ পয়েন্ট, সাধারণ বীমা খাতে ১৩.৭ পয়েন্ট, আইটি খাতে ১৭.২ পয়েন্ট, পাট খাতে ১৫.৬ পয়েন্ট, বিবিধ খাতে ৩০.৭ পয়েন্ট, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে ১৫৫.১ পয়েন্ট, কাগজ খাতে ৩৫.৪ পয়েন্ট, ওষুধ খাতে ১৩.৪ পয়েন্ট, সেবা-আবাসন খাতে ১৫.৬ পয়েন্ট, ট্যানারি খাতে ২২.৯ পয়েন্ট, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে ১৩.৩ পয়েন্ট, টেলিকমিউনিকেশন খাতে ১২.৪ পয়েন্ট ও বস্ত্র খাতে ১৯.৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে।