১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১ মাঘ ১৪৩১, ১৪ রজব ১৪৪৬
`

স্বল্পমূলধনী কোম্পানিতে ক্রেতাদের আধিপত্য

-

- বিক্রির চাপ ৫৫ শতাংশ এবং ক্রেতার চাপ ৪৫ শতাংশ
- ঢাকাতে দুটি সূচক বাড়লেও চট্টগ্রামে সবগুলো সূচকই পতনে

দেশের দুই পুঁজিবাজারে ভিন্ন আচরণ দেখা গেছে। ঢাকা স্টকে দুই সূচকে পয়েন্ট ফিরলেও চট্টগ্রামে সবগুলো পয়েন্ট হারিয়েছে। স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোতে ক্রেতাদের আধিপত্য দেখা যায়। পুরো সময়জুড়ে বিনিয়োগকারীদের জাঙ্ক কোম্পানিগুলোতে অবস্থান নিতে দেখা যায়। লেনদেন গত বুধবারের তুলনায় গতকাল ডিএসইতে ১০৮ কোটি টাকা লেনদেন বেড়েছে। ভলিউম ৩ শতাংশ কমেছে এবং টার্নওভার ১৭ শতাংশ বেড়েছে। ১৯ টি সেক্টরের মধ্যে ৯টি সেক্টরের বাজার মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ১০টি সেক্টরের বাজার মূলধন হ্রাস পেয়েছে। বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী মনোভাব লক্ষ করা গিয়েছে। ডিএসইতে গতকাল বিক্রির চাপ ছিল ৫৫ শতাংশ এবং ক্রেতার চাপ ছিল ৪৫ শতাংশ।
দিনের লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ায় লেনদেনের একপর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ৩৪ পয়েন্ট বেড়ে যায়। বেলা ১টার পর দাম বাড়ার তালিকা থেকে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান দর পতনের তালিকায় চলে আসে। ফলে এক দিকে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কমে, অন্য দিকে দাম কমার তালিকা বড় হয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়। অবশ্য এই দরপতনের মধ্যেও কিছুটা ব্যতিক্রম থাকে ওষুধ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। এ খাতের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়েছে।
লেনদেন শেষে ডিএসইতে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১২.৫৫ পয়েন্ট এবং শরিয়াহ সূচক ৪.৭৬ পয়েন্ট ফিরে পেয়েছে। ডিএসই-৩০ সূচক ৭.০৫ পয়েন্ট হারিয়েছে। সব খাত মিলে ৩৯৭টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিলেও দর বৃদ্ধিতে ১৫৮টি, বিপরীতে দর পতনে ১৮১টি এবং ৫৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অন্য দিকে ওষুধ খাতের ২৩টি কোম্পানির শেয়ার দাম বেড়েছে এবং ৯টির দাম কমেছে। ১৭ লাখ ৫০ হাজার ৮৮ হাজার ৭৪৫টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৭৩৩ কোটি ৩৯ লাখ ৫২ হাজার ২১০টাকা বাজার মূল্যে। আগের দিনের তুলনায় লেনদেনে ১০৮ কোটি টাকা বেড়েছে। বাজারমূলধন ০.০৪ শতাংশ বৃদ্ধিতে ডিএসইর বাজারমূলধনের আকার এখন ছয় লাখ ৯৩ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা।
ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল ৩১টি কোম্পানির ৪১ লাখ ১৯ হাজার ৪১৩টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৫৪ কোটি ৭৮ লাখ ৭০ হাজার টাকায়। আবার এরই মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া ১০ কোম্পানি হলো- ইবনে সিনা ফার্মা, বিচ হ্যাচারি, আলহাজ টেক্সটাইল, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, ওরিয়ন ইনফিউশন, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, খান ব্রাদার্স, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, বেক্সিমকো এবং তাওফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসি। এই দশ প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫১ কোটি ৭৭ লাখ টাকারো বেশি। এ ছাড়া সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ইবনে সিনা ফার্মার। কোম্পানিটির ৯০ হাজার ২০০টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে মোট ৩০ কোটি ৫২ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। বিচ হ্যাচারির ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৯৬ হাজার টাকার, আলহাজ টেক্সটাইলের ৩ কোটি ৮১ লাখ ৩২ হাজার টাকার, ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকার, ওরিয়ন ইনফিউশনের ২ কোটি ৩৯ লাখ ১৭ হাজার টাকার, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ২ কোটি ৩০ লাখ ১৭ হাজার টাকার, খান ব্রাদার্সের ১ কোটি ৩৯ লাখ ২৭ হাজার টাকার, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের ১ কোটি ৩৪ লাখ ৪ হাজার টাকার, বেক্সিমকোর ১ কোটি ১১ লাখ ৩৪ হাজার টাকার এবং তাওফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসির ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টকের তিনটি সূচকই পয়েন্ট হারিয়েছে। সিএএসপিআই ২১.৯৪ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স ১৪.৫৬ পয়েন্ট এবং সিএসই-৩০ সূচক ৪৮.৩০ পয়েন্ট হারিয়েছে। ২১১টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিলেও দর বৃদ্ধিতে ছিল ৭২টি, দর পতনে ১০৯টি এবং দর অপরিবর্তিত ৩০টি। ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ২৬৩টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বেচাকেনা হয়েছে মোট আট কোটি ৯৯ লাখ ৮৭ হাজার ১৩৪ টাকা গতকালের বাজারদরে। বুধবারের তুলনায় লেনদেন তিন কোটি ৮ লাখ টাকা বেড়েছে।
ফারইস্ট ইসলামী লাইফে বিনিয়োগে সতর্কবার্তা
তালিকাভুক্ত ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মনিটরিংয়ে উঠে এসেছে। ফলে কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগের আগে বিনিয়োগকারীদের সচেতন হওয়া উচিত বলে প্রতিষ্ঠানটি সতর্কবার্তা জারি করেছে। ডিএসই জানিয়েছে, কোম্পানীর দর বৃদ্ধির কারণ জানতে গত ০৫ সেপ্টেম্বর ডিএসই কর্তৃপক্ষ কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠায়। ডিএসইর চিঠির উত্তরে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, কোনো রকম অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ারটির দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত ২১ আগস্ট কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৩৬ টাকা ৯০ পয়সা। আর গত ৫ সেপ্টেম্বর বাজার শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ টাকা ৮০ পয়সায়। ১১ কর্মদিবসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ১১ টাকা ৯০ পয়সা বা ৩২.২৫ শতাংশ।
বাজার পর্যালোচনায় প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষক রয়্যাল ক্যাপিটাল বলছে, আবার পুনরুজ্জীবিত বাজার। বাড়ল লেনদেনের। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১২.৫৬ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৭২৬ পয়েন্ট হয়েছে। বিশেষ করে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোতে ক্রেতাদের আধিপত্য দেখা যায়। বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী মনোভাব লক্ষ করা গেছে। ঢাকার শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) ঊর্ধ্বমুখী ছিল। মূলধন গত দিনের তুলনায় ০.০৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্লোর প্রাইসে একটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ব্লক মার্কেটে ৫৪.৭ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা মোট লেনদেনের ৭.৪৭ শতাংশ। এসএমই বাজার সূচক (ডিএসএমইএক্স) ৭.৯৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৭৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৪.৭ কোটি টাকা; যা গত দিনের তুলনায় ১৮৪ শতাংশ বেশি।


আরো সংবাদ



premium cement