২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

মিশ্র আচরণ দুই পুঁজিবাজারে কিছু পয়েন্ট ফিরল সূচকে

-

- ডিএসইর মূলধনে ৮৩০ কোটি টাকা ফিরল
- গড়ে ৬০ শতাংশের বেশি দর পতনের শিকার

স্থিতিশীল হতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। দুই দিন ভালো তো তিন দিন পতনের জালে। গতকাল কোনো রকমে ইতিবাচক দেখালেও ৬০ শতাংশের বেশি কোম্পানির শেয়ার দুই বাজারেই পতনের শিকার। ০.১২ শতাংশ বা ৮৩০ কোটি টাকা মূলধন ডিএসইতে ফিরলেও লেনদেনে কমেছে ২২০ কোটি টাকা। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে সাতটি সেক্টরের বাজার মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ১২টি সেক্টরের বাজার মূলধন হ্রাস পেয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম সপ্তাহে করপোরেট তথা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ভালো ভূমিকা ছিল। যে কারণে লেনদেনে ও শেয়ার দামে ভালো গতিশীলতা দেখা গেছে। কিন্তু পরের সপ্তাহেই তাদের ভূমিকা শ্লথ হয়ে পড়ে। পুঁজিবাজারের লেনদেন ও শেয়ার দামে ছন্দপতন দেখা যায়। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর বিএসইসির কমিশন এখনো পুরোপুরি গঠিত হয়নি। এ ছাড়া দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা ও চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা পদত্যাগ করেছেন। স্টক এক্সচেঞ্জ দুটির পরিচালনা পর্ষদও এখনো গঠিত হয়নি।
লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, দিনভরই সূচকের গতিপথ ছিল জোয়ারভাটার উত্থান পতনের মতো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সামান্য পয়েন্ট যুক্ত হয়ে ইতিবাচক হিসেবে শেষ করে। ডিএসইর প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ০.৬৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৭০০.৫৮ পয়েন্টে, ‘ডিএসইএস’ বা শরিয়াহ ১.৯১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২২০.৯৯ পয়েন্ট এবং ‘ডিএসই-৩০’ সূচক ২.৪৫ পয়েন্ট হারিয়ে ২ হাজার ৮৮.১২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইতে ২০ কোটি ৮১ লাখ ৮৭ হাজার ৯৬৫টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৫৫৮ কোটি তিন লাখ ২৯ হাজার ৪৫৪ টাকা বাজারমূল্যে। বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ৭৭৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। লেনদেন হওয়া ৩৯৮টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১২৪টির, দর কমেছে ২৪০টির বা ৬০.৩০ শতাংশের এবং ৩৪টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। আর ৩৭টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৬টির, পতন হয়েছে ১২টির এবং দর অপরিবর্তিত ৯টির। বাজার মূলধন ০.১২ শতাংশ বা ৮৩০ কোটি টাকা যুক্ত হওয়ায় এখন ডিএসইর বাজার মূলধনের আকার ছয় লাখ ৯৩ হাজার ৬৬১ কোটি ৮৭ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
এ দিকে ডিএসইর ব্লক মার্কেটে ৩৩টি কোম্পানির এক কোটি ৫৯ লাখ ৩১ হাজার ৬৫৪টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বেচাকেনা হয়েছে মোট ৩৬ কোটি ৫৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকায়। সবচেয়ে বেশি লেনদেন হতে দেখা গেছে যে আট কোম্পানির, সেগুলো হলো সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মিডল্যান্ড ব্যাংক, তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, বিচ হ্যাচারি, এসএস স্টিল এবং ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। এই আট প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে ৩০ কোটি ৩৮ লাখ টাকারও বেশি। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের। ব্যাংকটির ৯৭ লাখ ৯ হাজার ৩৩৮টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে মোট ১০ কোটি ৩৮ লাখ ৯০ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এ ছাড়া প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাত কোটি ৭৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকার, মিডল্যান্ড ব্যাংকের চার কোটি ৪৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকার, তাকাফুল ইন্স্যুরেন্সের তিন কোটি ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকার, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের এক কোটি ৬১ লাখ ২৫ হাজার টাকার, বিচ হ্যাচারির এক কোটি ২৬ লাখ দুই হাজার টাকার, এসএস স্টিলের ৯৯ লাখ টাকার এবং ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৮৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
আর চট্টগ্রাম পুঁজিবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২.২৭ পয়েন্ট। এ ছাড়া সিএসই-৩০ সূচক ১১১.৬১ শতাংশ বেড়েছে। লেনদেনে অংশ নেয়া ২০১টি কোম্পানির মধ্যে ৫৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৩১টির বা ৬৫ শতাংশ এবং ১৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর ৪৬ লাখ ৮৮ হাজার ৯৫২টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে ২৯ কোটি ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৪০২ টাকা বাজারমূল্যে। গত বৃহস্পতিবার লেনদেন হয় ১৩ কোটি ২২ লাখ টাকা।
বাজারের পরিস্থিতি পর্যালোচনায় রয়্যাল ক্যাপিটাল বলছে, সূচকের দিনব্যাপী উত্থান-পতন চোখে পড়ার মতো ছিল। ব্যাংকিং সেক্টরের আধিপত্য থাকলেও এর প্রবণতা কিছুটা কমেছে। ডিএসইএক্স ০.৬৭ পয়েন্ট বৃদ্ধির বিপরীতে লেনদেন কমেছে ২২০ কোটি টাকা। ঢাকার শেয়ার বাজারের প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) উর্ধ্বমূখী ছিল। মূলধন আগের দিনের তুলনায় ০.১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে ভলিউম ২৬ শতাংশ এবং টার্নওভার ২৮ শতাংশ কমেছে। ফ্লোর প্রাইসে ৪ টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ব্লক মার্কেটে ৩৬.৫ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে; যা মোট লেনদেনের ৬.৫ শতাংশ। এসএমই বাজার সূচক (ডিএসএমইএক্স) ২৪.৬ পয়েন্ট কমে এক হাজার ২০৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৪.৬ কোটি টাকা; যা গত দিনের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি। সারাদিন মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেলেও দিনশেষে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে বাজার শেষ হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement