০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ জিলহজ ১৪৪৫
`

ঘুরে দাঁড়াতেই পুঁজিবাজারে ক্রেতার চাপ ৯২ শতাংশ

-

- ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা : লেনদেন ৬০০ কোটি টাকা ছাড়াল
- ডিএসইর বাজারমূলধন ফিরেছে ৫,৩৮৩ কোটি টাকা
- ক্রেতা ৭৪ শতাংশ হলেও কেনার চাপ ছিল ৯২ শতাংশ

দীর্ঘ সময়ের পতনের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা দিচ্ছে দেশের লাখ বিনিয়োগকারীর জীবন-জীবিকার মাধ্যম পুঁজিবাজার। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টার কারণে ক্রেতা এখন বাজারমুখী। কিন্তু নেই বিক্রেতা, মাত্র ৮ শতাংশ বিক্রির চাপ। ক্রয় চাপের কারণেই ডিএসইতে দর বৃদ্ধিতে ছিল বেশির ভাগ অর্থাৎ ৬২.১২ শতাংশ কোম্পানি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সব ক’টি মূল্যসূচক বেড়েছে। সেই সাথে এক মাসের বেশি সময় পর ডিএসইতে ৬০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলো। আর সবগুলো সূচক উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধিতে ডিএসইর বাজারমূধন ০.৮৩ শতাংশ ফিরেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আইএমএফ ঋণ অনুমোদনের খবরে গত মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। গতকালও বাজার ইতিবাচক গতিতেই এগোচ্ছিল।
দিনের লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, লেনদেনের সূচনা থেকেই বাজারে গতি ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ক্রেতার চাপে ছিল ডিএসই। কিন্তু ছিল না তেমন বিক্রেতা। বাজারে ইতিবাচক চিত্র ফিরাতে বিক্রেতারা এখন শেয়ার ধরে আছে। দর বৃদ্ধিতে মুনাফা বেশি পাবার আশায়। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬০.৮৮ পয়েন্ট যুক্ত হওয়ায় এখন পাঁচ হাজার ৩০২.৭২ পয়েন্টে, শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৬.২৭ পয়েন্ট যুক্ত হয়ে এক হাজার ১৬৫.৮৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচকে আরো ২৫.৮৯ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯০৩.৮৩ পয়েন্টে উঠে এসেছে। চৌদ্দ কোটি ৯৮ লাখ ৬০ হাজার ১৫৬টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড বেচাকেনা হয়েছে ৬০৫ কোটি ১২ লাখ ২৯ হাজার ৫১৬ টাকা বাজারমূল্যে। লেনদেনে অংশ নেয়া ৪০৪টি কোম্পানির মধ্যে দর বৃদ্ধিতে ২৫১টি বা ৬২.১২ শতাংশ, দর পতনে ৮৯টি এবং দর অপরিবর্তিত ৬৪টি। বাজারমূলধন ০.৮৩ শতাংশ বা পাঁচ হাজার ৩৮৩ কোটি ২০ লাখ টাকা বেড়েছে।
এ দিকে, ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল ৬৬টি কোম্পানির দুই কোটি ৩৭ লাখ ৬৩ হাজার ৯৪৯টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ১২২ কোটি ৭ লাখ ৬১ হাজার টাকায়। সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে সাত কোম্পানির শেয়ার। কোম্পানিগুলো হলো- রেনাটা লিমিটেড, প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্স, ফাইন ফুডস, ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ড, রূপালী লাইফ ইন্সুরেন্স, লাভেলো আইসক্রিম এবং এক্সপ্রেস ইন্সুরেন্স লিমিটেড। এই সাত কোম্পানির মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকারও বেশি। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে রেনাটা লিমিটেডের। কোম্পানিটির সাত লাখ ৬৪ হাজার শেয়ার ৫৮ কোটি ৪৪ লাখ ৬০ হাজার টাকায় লেনদেন হয়েছে। এ ছাড়া প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্সের ৭ কোটি ৪৩ লাখ ৯১ হাজার টাকার, ফাইন ফুডস লিমিটেডের ৫ কোটি ৪৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকার, ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ডের ৪ কোটি ৮৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকার, রূপালী লাইফ ইন্সুরেন্সের ৩ কোটি ৫২ লাখ ২৮ হাজার টাকার, লাভেলো আইসক্রিমের ৩ কোটি ১৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকার এবং এক্সপ্রেস ইন্সুরেন্স লিমিটেডের ৩ কোটি ৫ লাখ ১৮ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
আর চট্টগ্রাম স্টকের সবগুলো সূচকই বেড়েছে। তবে আগের দিনের তুলনায় বেচাকেনা টাকায় অনেক কমেছে। সিএসই-৫০ সূচক ৫.৫৮ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৩৭.১৬ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স ৫৬.০৮ পয়েন্ট এবং সিএএসপিআই ৮৭.৭৫ পয়েন্ট ফিরে পেয়েছে। পুরো লেনদেনে ২৬ লাক ১৯ হাজার ২৭৮টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে ১৪ কোটি ৫২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৮৯ টাকায়। যেখানে আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৪৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকার।
বাজার বিশ্লেষণ নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষক রয়্যাল ক্যাপিটাল বলছে, ধীরে ধীরে হতাশার বিবর্ণ মেঘ সরে নতুন আশার আলো দেখছেন বিনিয়োগকারীরা। গতকাল সূচকের গতিশীলতা নিয়েই ঢাকার শেয়ার বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স শুরু হয়েছিল। যার বৃদ্ধি লেনদেনের শেষ মিনিটগুলোতে প্রায় ৭০ পয়েন্টে গিয়ে পৌঁছায়। সূচক ৫৩০০ পয়েন্টের মনস্তাত্ত্বিক বাধা অতিক্রম করেছে। একই সাথে ৬০০ কোটি টাকার ওপর লেনদেন হয়েছে। কিছু দিন যাবত মূল্যের দিক থেকে বেশ কমে যাওয়া মৌলভিত্তিক শেয়ারগুলোর পাশাপাশি টেকনিক্যালি অবমূল্যায়িত শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখা গিয়েছে। ঢাকার শেয়ার বাজারের প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) ঊর্ধ্বমুখী ছিল। মূলধন গত দিনের তুলনায় ০.৮৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে ভলিউম ১৪ শতাংশ এবং টার্নওভার ১৫ শতাংশ বেড়েছে। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে ১৫টি সেক্টরের বাজার মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ৪টি সেক্টরের বাজার মূলধন হ্রাস পেয়েছে। ফ্লোর প্রাইসে ৬টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ব্লক মার্কেটে ১২২ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা মোট লেনদেনের ২০.১৭ শতাংশ। এসএমই বাজার সূচক (ডিএসএমইএক্স) ২১.৭৭ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৪৬৫.৪২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে এবং লেনদেন হয়েছে ১০.৭ কোটি টাকা, যা গত দিনের তুলনায় ৭৪ শতাংশ কম।


আরো সংবাদ



premium cement