০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ জিলহজ ১৪৪৫
`

পুঁজিবাজারে ক্রেতা খুঁজছে বিক্রেতাকে

-

- ব্লক মার্কেটে ১১৩.৩৮ কোটি টাকার বেচাকেনা
- ক্রেতা ৯৮ শতাংশের বিপরীতে বিক্রেতা মাত্র ২ শতাংশ
- ডিএসইর মূলধন ফিরেছে ৬,৭৯০ কোটি টাকা

ঈদের ছুটির পর গতকাল দ্বিতীয় দিন পুঁজিবাজারে ছিল বিক্রেতার চরম সঙ্কট। শেয়ার কেনার জন্য এখন বিক্রেতাকে হন্নে হয়ে খুঁজছে ক্রেতারা। ৯৮ শতাংশ ক্রেতার বিপরীতে বিক্রেতা মাত্র ২ শতাংশ। শেয়ারের দর বাড়লেও শেয়ার ছাড়তে চাচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা। ১৯টি খাতের মধ্যে মাত্র ব্যাংক, বীমা, মিউচুয়াল ফান্ড, বস্ত্র, ট্যানারি খাতের শেয়ারের যৎসামান্য বিক্রেতা ছিল। সার্বিকভাবে ডিএসইতে বাজারমূলধন ফিরেছে ১ দশমিক ০৭ শতাংশ বা ছয় হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। দুই বাজারেই উল্লেখযোগ্য হারে পয়েন্ট ফিরেছে সূচকে। বিনিয়োগকারীরা এই গতিশীলতাকে স্থায়ী দেখতে চায়। আবার যেন হতাশার কালোমেঘ ছেয়ে না যায়।

এক পর্যালোচনার তথ্য বলছে, উত্থানের এমন বড় চিত্রের মধ্যেও এ দিন ক্রেতা জোটেনি ১৭ কোম্পানির। লেনদেনের শেষভাগে বাজারে যখন চাঙ্গাভাব রাঙাচ্ছিল, তখন ওইসব প্রতিষ্ঠানে শেয়ার ও ইউনিটের ক্রেতারা নিখোঁজ হয়ে যায়। কারণ প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিট বিএসইসির বেঁধে দেয়া সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ দর কমার নিয়মে ক্রেতাশূন্য থাকে। প্রতিষ্ঠানগুলোর দর আজ কমেছে ১.৭৪ শতাংশ থেকে ২.৯৯ শতাংশ পর্যন্ত। কোম্পানিগুলো হলো- গোল্ডেন হার্ভেস্ট, ন্যাশনাল টি, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, পিপলস লিজিং, সাফকো স্পিনিং, মিথুন নিটিং, আইসিবি অগ্রণী-১ মিউচুয়াল ফান্ড, এমবিএল-১ মিউচুয়াল ফান্ড, আইসিবি থার্ড এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড, এমবিএল-১ মিউচুয়াল ফান্ড, প্রাইম ব্যাংক-১ আইসিবি মিউচুয়াল ফান্ড, নূরানি ডাইং, টুংহাই নিটিং, জাহিন টেক্স, তাল্লু স্পিনিং ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।
সারা দিনের লেনদেনের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, লেনদেনে সূচনা থেকেই বাজারের অবস্থা ভালোর দিকেই ছিল। সূচকের বৃদ্ধির গতিও বেশ দ্রুত ছিল। আবার কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরও বাড়ছিল। লেনদেনের ৩২ মিনিটের মাথায় ডিএসইএক্স সূচকে ৬০ পয়েন্ট ফিরে আসে। অন্য সূচকগুলোও বেশ উল্লেখ করার মতো পয়েন্ট ফিরে পায়। ডিএসইতে ৩২ মিনিটের মাথায় দেড় কোটির বেশি শেয়ার হাতবদল হয়। ডিএসইর মূল সূচক ডিএসইএক্স ৮২.৭৪ পয়েন্ট বেড়ে এখন পাঁচ হাজার ২৪৪.১২ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ২৪.৭৪ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১৪৬.০৫ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৩১.৩৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে এক হাজার ৮৭৫.৪৭ পয়েন্টে। এসএমই বাজার সূচক (ডিএসএমইএক্স) ৩৭.৯৬ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪৮৩.৩৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে এবং লেনদেন হয়েছে ৮.২ কোটি টাকা, যা গত দিনের তুলনায় ২৯৩ শতাংশ বেশি।

লেনদেনও টাকায় প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। ১১ কোটি ২০ লাখ ৯২ হাজার ২৯৩টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড হাতবদল হয়েছে ডিএসইতে ৪৫২ কোটি ৯৪ লাখ ২৭ হাজার ৩৫৭ টাকা বাজারমূল্যে। যেখানে ঈদের পর প্রথম লেনদেন হয়েছিল ২৪৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকার। আগের দিনের তুলনায় গতকাল লেনদেন বেড়েছে ২০২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৯৩টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২৮৮টির বা ৭৩.২৮ শতাংশের, দর কমেছে ৫৫টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৫০টির।
ব্লক মার্কেটে জমজমাট ট্রেড : ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল ৪৫টি কোম্পানির এক কোটি ৭১ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৮টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড এবং বন্ড বেচাকেনা হয়েছে মোট ১১৩ কোটি ৩৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকায়। তবে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হতে দেখা গেছে ছয় কোম্পানির শেয়ার। আর কোম্পানিগুলো হলো- ইউনিলিভার কনজ্যুমার, বার্জার পেইন্টস, রেকিট বেনকিজার, ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ড, রূপালী লাইফ ইন্সুরেন্স এবং এক্সপ্রেস ইন্সুরেন্স লিমিটেড। এই ছয় কোম্পানির মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকারও বেশি।
ডিএসইর তথ্য বলছে, কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ইউনিলিভার কনজ্যুমারের। কোম্পানিটির এক কোটি ৮০ লাখ শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ২০ হাজার টাকায়। এ ছাড়া বার্জার পেইন্টসের ৭২ হাজার ৩৯৫টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে মোট ১২ কোটি ৬৬ লাখ ৯১ হাজার টাকায়, রেকিট বেনকিজারের ২৬ হাজার ৫১৭টি শেয়ার ১১ কোটি ৬৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকায়, ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ডের সাড়ে ৭৭ লাখ শেয়ার মোট ১০ কোটি ৩২ লাখ ৭৫ হাজার টাকায়, রূপালী লাইফ ইন্সুরেন্সের চার লাখ ২৯ হাজার ২০০টি শেয়ার মোট ৮ কোটি ২০ লাখ ৫৪ হাজার টাকায় এবং এক্সপ্রেস ইন্সুরেন্স লিমিটেডের ৪ কোটি ৯৪ লাখ ১০ হাজার টাকায়।

আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএই) তিনটি বড় সূচক গড়ে দেড়শ’ পয়েন্ট হারে বেড়েছে। সিএএসপিআই ১৭৮.৩৫ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স ১১৩.২৫ পয়েন্ট এবং সিএসই-৩০ সূচক ১৫৫.৮০ পয়েন্ট ফিরে পেয়েছে। আর সিএসই-৫০ সূচক ১১.২০ পয়েন্ট বেড়েছে। ৯৫ লাখ ৮৭ হাজার ২০০ শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড লেনদেন হয়েছে ১২১ কোটি ৬৩ লাখ ২১ হাজার ৩৭৯ টাকায়। বুধবার ঈদের পর প্রথম দিনে লেনদেন হয়েছিল মাত্র ৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকার। ফলে লেনদেনের ব্যবধান আকাশ-পাতাল। সিএসইতে ১৯৯টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১২২টির, কমেছে ৪৮টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টি প্রতিষ্ঠানের।
বাজার বিশ্লেষক রয়্যাল ক্যাপিটালের বিশ্লেষণ হলো, সূচকের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির দিনে বাড়ল লেনদেন। বিগত চার দিনে ঢাকার শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) প্রায় ১৭৫ পয়েন্ট বেড়েছে। এই দিনগুলোতে সূচকের ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদের কিছুটা বাজারমুখী প্রবণতাকে নির্দেশ করছে। যেসব শেয়ার দীর্ঘদিন যাবত মূল্য সংশোধনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে, সেইসব শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখা গেছে। তবে, সামনের দিনগুলোতে সূচক ৫ হাজার ২৫০ থেকে ৫ হাজার ৩০০ পয়েন্টের মধ্যে রেসিস্টেন্সের সম্মুখীন হতে পারে। ডিএসইর মূলধন গত দিনের তুলনায় ১.০৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে লেনদেনে ভলিউম ৫২ শতাংশ এবং টার্নওভার ৮৪ শতাংশ বেড়েছে। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে সবগুলো সেক্টরের বাজারমূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্লোর প্রাইসে ৬টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ব্লক মার্কেটে ১১৩ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা মোট লেনদেনের ২৫ শতাংশ।

 


আরো সংবাদ



premium cement