ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স বাতিল ভালো আইপিও আনার দাবি
অর্থনীতি আগালেও ১৪ বছরে পুুঁজিবাজার পিছিয়েছে- বিশেষ সংবাদদাতা
- ১২ জুন ২০২৪, ০০:০৫
গত ১৪ বছরে দেশের সার্বিক অর্থনীতি এগিয়ে গেলেও দেশের পুঁজিবাজার উল্টো পিছিয়ে গেছে। প্রায় চার বছর ধরে শেয়ারবাজারে মন্দা বিরাজ করছে। চার বছর ধরে সবার অবস্থা খারাপ। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা রুগ্ণ হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ক্যাপিটাল গেইনের ওপর যে ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে তা প্রত্যাহার করা উচিত বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারের স্বার্থে। পাশাপাশি ভালো ও মানসম্পন্ন আইপিও বাজারে আনার ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কোনো ধরনের পলিসি সাপোর্ট দেয়া হয়নি।
প্রস্তাবিত বাজেট ও পুুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল মতিঝিলে ডিবিএ ক্লাবে আয়োজিত এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এই দাবি জানিয়ে বলেন, সুশাসনের ঘাটতি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকায় একদিকে যেমন ভালো ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজার বিমুখ হচ্ছে, আর ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত না হওয়ায় নতুন বিনিয়োগকারীও আকর্ষণ করা যাচ্ছে না।
ডিবিএ সভাপতি বলেন, আমরা চার বছর ধরে এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় পাচ্ছি না। এ পরিস্থিতিতে বাজারে সাপোর্ট দেয়ার কথা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের। এই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা রুগ্ণ হয়ে পড়েছে। ২০১০ সাল থেকেই আমরা সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ১৪ বছরে বাজার স্থিতিশীল করতে পারিনি। একটি প্রজন্ম বাজার বিমুখ হয়ে পড়ছে। যে হারে বাজারে পতন হচ্ছে এর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। বিনিয়োগকারীদের ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে মূলধন ৫০ লাখ টাকার অধিক আয়ের ওপর স্তরভিত্তিক করারোপ করা হয়েছে। অন্য দিকে কোনো সিকিউরিটিজ বিনিয়োগের সময়কাল পাঁচ বছর অতিক্রম করলে উক্ত বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর দেয়ার প্রস্তাব করা হয়। গত কয়েক বছর ধরে মন্দাবাজার পরিস্থিতি এবং আর্থিক সঙ্কট বিবেচনা করে মূলধন আয়ের ওপর থেকে করারোপের প্রস্তাব রহিতকরণের জন্য আমরা জোর সুপারিশ করছি।
শেয়ারবাজারের মূল সমস্যা কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ডিবিএ সভাপতি বলেন, ভালো পণ্যের অভাব। গত ১৫ বছর ধরে ১-২টা ছাড়া আমাদের বাজারে ভালো কোনো কোম্পানি আসেনি। ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর গত ১০ বছরে স্টক এক্সচেঞ্জের কোনো উন্নতি হয়েছে? যদি না হয় ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন রিভিউ করা উচিত। আমরা মনে করি ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন রিভিউ করার সময় এসেছে।
ডিবিএর দাবি হলো, ব্রোকারেজ হাউজের রাজস্ব করহার ০.০৫ থেকে ০.০২৫ শতাংশ করা। করপোরেট আয়করকে ব্রোকারেজের জন্য চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনা করা। ব্যক্তিশ্রেণীর সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশের ঊর্ধ্বে অতালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের করপোরেট করহার নির্ধারণ করা। নিয়মিত এবং সম্পূর্ণ আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের শর্তে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের করহার হ্রাস করা। নতুন বিও আইডিগুলোকে তিন বছরের জন্য করমুক্ত রেখে পরিচালনা করার অনুমতি দেয়া। সব নতুন বিও অ্যাকাউন্টগুলোকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগের সীমা সাপেক্ষে তিন বছর পর্যন্ত সময়কালের জন্য কর বহির্ভূত রেখে পরিচালনা করার অনুমতি দেয়া। শিক্ষার্থী, সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী এবং প্রবীণ নাগরিকদের দ্বারা পরিচালিত বিও হিসাবধারীদের লাভের জন্য শূন্য হারে কর উপভোগ করার অনুমতি দেয়া। মার্জিন লসকে করছাড় যোগ্য হিসেবে অনুমতি দেয়া। মূলধন ক্ষতির ওপর আইনের ব্যাখ্যা স্পষ্টীকরণ করা।
ডিবিএ সভাপতি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে মূলধন লাভের ওপর করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ মূলধনী লোকসানের ওপর ৬ বছর পর্যন্ত মূলধনী ক্ষতির জের বহন কিংবা সমন্বয় করার বিধান বিদ্যমান রয়েছে। এরূপ ক্ষেত্রে আমরা বিনিয়োগকারীর মূলধন ক্ষতির বিষয়ে থাকা বিদ্যমান আইনের সুস্পষ্ট ও কার্যকর ব্যাখ্যা প্রদানসহ এটিকে সাত বছর পর্যন্ত প্রদেয় আয়করের বিপরীতে বহন বা সমন্বয় করার সুপারিশ করছি। গত কয়েক বছর ধরে বাজারে মন্দা বিরাজ করায় অধিকাংশ বিনিয়োগকারী লোকসানের কবলে পড়ে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে রয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে ৫০ লাখের অধিক মূলধন লাভের ওপর করারোপের সাথে বিদ্যমান মূলধনী লোকসানের জের বহন কিংবা সমন্বয় করার অনুমতি দিলে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি ধরে রাখতে এবং বাজারের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নে বাজারসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজন লাভবান হবে। এর ফলে বিনিয়োগকারী আর্থিকভাবে শক্তিশালী হয়ে বাজারকে সমৃদ্ধশালী করতে সক্ষম হবে এবং এর ফলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।
তিনি বলেন, গত এক দশকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। আমরা পুঁজিবাজারে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলোকে তালিকাভুক্ত করার জন্য একটি রোডম্যাপ প্রণয়নে অনুরোধ করছি। এ বিষয়ে একটি পরিষ্কার রোডম্যাপ দেয়া হলে বাজার মানসম্পন্ন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজে প্রতিযোগিতামূলক ভালো ব্যবসা তৈরিতে উৎসাহিত হবে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেয়ারবাজারে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজ তালিকাভুক্তির নির্দেশনা দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপাইজ তালিকাভুক্তির বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আশু বাস্তবায়নে সরকার ও বাজার সংশ্লিষ্টদের কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। আমরা বিশ্বাস করি, শেয়ারবাজারে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজ তালিকাভুক্তির ফলে বাজারে তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাজারের প্রসার হবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা