প্রধানমন্ত্রীর এক নির্দেশেই ঘুরে দাঁড়াল পুঁজিবাজার
আস্থার জায়গা খুঁজছে বিনিয়োগকারীরা- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২৮ মে ২০২৪, ০০:০০
দশ দিন ধরে পতনের জালে যে পুঁজিবাজার বন্দী ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক নির্দেশেই সেই বাজার ঘুরে দাঁড়াল। উল্লেখ করার মতো পয়েন্ট ফিরেছে দুই বাজারের সূচকে। পুঁজিবাজারে উন্নয়নে সমন্বয় কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত শনিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাজেট সমন্বয় মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তিনি দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে পুঁজিবাজারকে কাজ লাগাতে ও গতিশীল পুঁজিবাজারে গঠনে এই কমিটি করার নির্দেশ দিয়েছেন তার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে বিষয়টি জানান সভায় উপস্থিত পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। গতকাল সূচক ঊর্ধ্বমুখী ছিল এবং মূলধন গত দিনের তুলনায় ডিএসইতে ০.৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে শেয়ার লেনদনে ভলিউম ৭৩ শতাংশ এবং টার্নওভার ৫৭ শতাংশ বেড়েছে। তবে সিএসইতে বেশির ভাগ কোম্পানি দর পতনের শিকার হয়েছে।
লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, পুঁজিবাজার নিয়ে সরকারপ্রধানের নির্দেশনার সংবাদে গতকাল লেনদেনের সূচনা থেকেই বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকে। বাড়তে থাকে সূচক। সরকারপ্রধান পুঁজিবাজার উন্নয়নে নির্দেশনা দিয়েছেন এটাতে বিনিয়োগকারী ও বাজার উজ্জীবিত। যার কারণে গতকাল ৭০ শতাংশ কোম্পানি দর বৃদ্ধিতে চলে আসে। বেড়ে যায় বেচাকেনা ও বিক্রির পরিমাণ। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে ১৮টি সেক্টরের বাজার মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মাত্র একটি সেক্টরের বাজার মূলধন হ্রাস পেয়েছে। বাজার মূল্য পরিবর্তনের ভিত্তিতে ৩৯৮টি কোম্পানির মধ্যে ২৭৬টির দর বেড়েছে ও ৮৪টির দর পতন হয়েছে এবং অপরিবর্তিত ছিল ৩৪টির দর।
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্সে গতকাল ৫৯.৬৬ পয়েন্ট ফেরাতে সূচকটি পাঁচ হাজার ৩১০.৫১ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ১৩.৭০ পয়েন্ট ফেরাতে এক হাজার ১৬০.১৮ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১১.৯৩ পয়েন্ট ফেরায় এক হাজার ৯০০.৬৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইতে ১৬ কোটি ১১ লাখ ২২ হাজার ৯৪৪টি শেয়ার, মিউচুয়ার ফান্ড ও বন্ড বেচাকেনা হয়েছে ৫০৬ কোটি ১১ লাখ ২৭ হাজার ৯৬৮ টাকায়। রোববার লেনদেন হয়েছিল ৩২২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার। এখানে লেনদেন ৫৭ শতাংশ বা ১৮৪ কোটি টাকা বেশি হয়েছে গতকাল।
আর ডিএসইর ব্লক মার্কেটে ৩৬টি কোম্পানি গতকাল লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব কোম্পানির এক কোটি ২৬ লাখ ২৮ হাজার ১১২৮টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে। যার গতকালের বাজারমূল্য ছিল ৪৯ কোটি ৫৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তবে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়ছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের। কোম্পানিটির ১২ লাখ ৭৪ হাজার ৭২টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ২১ লাখ ৫৩ হাজার টাকায়। বেশি লেনদেনে হয়েছে আট কোম্পানির শেয়ার। কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, বিএসআরএম লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, রিলায়েন্স ওয়ান মিউচুয়াল ফান্ড, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি। এই আট কোম্পানির মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪০ কোটি ৪৮ লাখ টাকারও বেশি।
এখানে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের সাত লাখ ৫৫ হাজার শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে ১৪ কোটি ৯৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকায়। এ ছাড়া অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে-আইএফআইসি ব্যাংকের ৪ কোটি ১ লাখ টাকার, রিলায়েন্স ওয়ান মিউচুয়াল ফান্ডের ২ কোটি ৯০ লাখ টাকার, বিএসআরএম লিমিটেডের ১ কোটি ৯৯ লাখ ৪০ হাজার টাকার, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১ কোটি ৯২ লাখ টাকার, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের ১ কোটি ২৮ লাখ টাকার এবং যমুনা ব্যাংকের ১ কোটি ৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
অন্য দিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএই) ৯৬ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৮টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বেচাকেনা হয়েছে ৭৫ কোটি ৪৬ লাখ ৫৭ হাজার ১৮৬ টাকায়। রোববার লেনদেন হয়েছিল মাত্র ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকার। ৬৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা বেশি লেনদেন হয়েছে। সিএএসপিআই সূচক ৭৯.৭২ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ১০৮.১৪ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স ৫০.৫৮ পয়েন্ট এবং সিএসই-৫০ সূচক ১০.৫১ পয়েন্ট ৯ দিন পর সূচকে যুক্ত হয়েছে। সিএসইতে ২৩৬টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৯৪টির, কমেছে ১২২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টি প্রতিষ্ঠানের।
প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষক রয়েল ক্যাপিটালের মতে, আস্থাহীনতার মাঝে আস্থার জায়গাটি খুঁজছেন বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজারের প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স), নয় কার্যদিবস পর ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। সাম্প্রতিক সময়ে যেসব শেয়ারের দর বেশি কমেছে, বিচক্ষণ বিনিয়োগকারীরা সেসব শেয়ারের দিকে তাদের ক্রয় প্রবণতা দেখিয়েছে। ফলে বাজারে বেশির ভাগ মৌলভিত্তিক শেয়ারের দর বেড়েছে। গতকাল সূচক ৫৯ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে, পাশাপাশি লেনদেন ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, যা গত কার্যদিবসের তুলনায় ৫৭ শতাংশ বা ১৮৪ কোটি টাকা বেশি। সূচক ৫ হাজার ২০০ পয়েন্টের কাছাকাছি এসে সাপোর্ট নেয়ার চেষ্টা করছে। সাপোর্টটি কার্যকার হবে কিনা বিনিয়োগকারীরা সেদিকে নজর রাখবেন। ফ্লোর প্রাইসে ছয়টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ব্লক মার্কেটে ৪৯.৫ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে যা মোট লেনদেনের ৯.৭৮ শতাংশ। এসএমই সূচক (ডিএসএমইএক্স) ১৬.৭ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে ৮ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যা গত দিনের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেড়েছে। দুপুর ১২টার আগ থেকে বাজার প্রকৃত অর্থে ইতিবাচক ধারায় আসে যা শেষ পর্যন্ত বজায় ছিল।