মূলধন ৩৬ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা এক দিনেই নেই
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২৪ মে ২০২৪, ০০:০৫
- বড় মূলধনী কোম্পানির শেয়ার বিক্রির চাপ
- টানা ৯ দিনের পতন ক্রেতা ছিল মাত্র ১৪ শতাংশ
পুঁজিবাজারের পতনকে কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। টানা ৯টি কার্যদিবস ধরে এই পতন অব্যাহত রয়েছে। কমছে সূচক, বাজারমূলধন চলে যাচ্ছে, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বিনিয়োগকারীরা আর বিক্রির চাপে ক্লান্ত পুঁজিবাজার। পতন ও বিক্রির চাপে এক দিনেই ৩৬ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা বা ৫.২৭ শতাংশ ডিএসইর মূলধন চলে গেছে। ৮২ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর পতনের শিকার। গতকালও বাজার ছিল ক্রেতাশূন্য প্রায়। ৮৬ শতাংশ বিক্রির চাপের বিপরীতে ক্রেতা ছিল মাত্র ১৪ শতাংশ। তবে জেড শ্রেণীর কোম্পানির শেয়ার কেনার জন্য অনেক ক্রেতা ছিল। বাজেটকে সামনে রেখে বড় মূলধনী কোম্পানির শেয়ারে বিক্রির চাপে সূচকের অব্যাহত পতন বলে মনে করছে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যালোচক রয়েল ক্যাপিটাল।
লেনদেনের তথ্য থেকে বিশ্লেষণে দেখা যায়, লেনদেনের শুরুতেই সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। মাঝে কিছু সময়ের জন্য সূচক ইতিবাচক হলেও তা খুব বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। বেলা ১২.২০টায় ডিএসইর ও সিএসইর সবগুলো সূচকই বড় অঙ্কের পয়েন্ট হারায়। ডিএসইএক্স ৩৮.৮০ পয়েন্ট, শরিয়াহ সূচক ১০.৯৬ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১১.৮৫ পয়েন্ট হারায়। তখন ২৭৪টি কোম্পানি দরপতনের শিকার ছিল। সিএসইতে ১২২টি কোম্পানি দরপতনের শিকার। প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৯৬.৩৩ পয়েন্ট হারায়। লেনদেনের সময় গড়ানোর সাথে সাথে দরপতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। দিন শেষে বাজারমূল্য পরিবর্তনের ভিত্তিতে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৯৮টি কোম্পানির মধ্যে ৪২টির দর বৃদ্ধি ও ৩১৯টির দর পতন হয়েছে এবং দর অপরিবর্তিত ছিল ২৮টি। আর মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৭টির মধ্যে দরপতনে ২১টি, দর বৃদ্ধিতে ৫টি এবং দর অপরিবর্তিত ছিল ১১টি।
ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৫৮.৭০ পয়েন্ট হারিয়ে ৫ হাজার ৩১২.৩৯ পয়েন্টে নেমে গেছে। আর শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৫.০১ পয়েন্ট হারিয়ে এক হাজার ১৫৯.৫৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২২.২৩ পয়েন্ট হারিয়ে এক হাজার ৯০৭.৬৯ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এগারো কোটি ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ৩৫৮টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড বেচাকেনা হয়েছে ৫০৮ কোটি ৩১ লাখ ২৫২ টাকা বাজারমূল্যে। তবে এই লেনদেনে গত মঙ্গলবারের তুলনায় ৮৩ কোটি টাকা কম। ওই দিন লেনদেন হয় ৫৯১ কোটি ৬২ লাখ টাকার।
ব্লক মার্কেটেই ১৯২ কোটি টাকার ট্রেড : এ দিকে ডিএসইর ব্লক মার্কেটে ৪২টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব কোম্পানির ৭৭ রাখ ৮ হাজার ৬৪টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড মোট ১৯১ কোটি ৯৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকায় হাতবদল হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে দশ কোম্পানির শেয়ার। কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইউনিলিভার কনজুমার, ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো, এসিআই লিমিটেড, মেঘনা সিমেন্ট মিলস, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলাদেশ স্টিল, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স এবং ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি। দশ কোম্পানির মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৮৭ কোটি ৪১ লাখ টাকারও বেশি।
সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ইউনিলিভার কনজুমারের। কোম্পানিটির তিন লাখ ৭১ হাজার ৩৩৯টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে মোট ৮৮ কোটি ৬৭ লাখ ৫৮ হাজার টাকায়। এ ছাড়া ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকোর ১২ লাখ ৯৯ হাজার ৩৩৪টি শেয়ার ৪২ কোটি ৮৮ লাখ টাকায়, এসিআই লিমিটেডের ২৫ লাখ ৯৬ হাজার ৫০০টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ ১০ হাজার টাকায়। আর মেঘনা সিমেন্ট মিলসের ৯ কোটি ৪৪ লাখ ২৫ হাজার টাকার, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের ৪ কোটি ৪৭ লাখ ৩২ হাজার টাকার, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের ২ কোটি ১৭ লাখ ২৩ হাজার টাকার, বাংলাদেশ স্টিলের ১ কোটি ৯৯ লাখ ৪০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
আর চট্টগ্রাম স্টক মার্কেটে সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৫৪.৯৪ পয়েন্ট। এ ছাড়া সিএসসিএক্স কমেছে ৯৬.৬১ পয়েন্ট ও সিএসই-৩০ সূচক কমেছে ১২৭.৬৩ পয়েন্ট। লেনদেনে অংশ নেয়া ২২১টি কোম্পানির মধ্যে ২১টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭৭টির এবং ২৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ৮৫ লাখ ৬৯ হাজার ১৬৩টি শেয়ার ও ইউনিট বেচাকেনা হয়েছে ৬৯ কোটি ১ লাখ ২২ হাজার ৮৪০ টাকায়।
পর্যালোচনায় রয়েল ক্যাপিটালের দিনের বিশ্লেষণ হলো, পুঁজিবাজারের প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) গত সাত কার্যদিবসের মতো গতকালও দিনশেষে নেতিবাচক ধারায় ছিল এবং সূচকে ৫৮.৭০ পয়েন্ট কমেছে। বাজারে বেশির ভাগ মৌলভিত্তিক শেয়ারের দর কমেছে। সেইসাথে লেনদেনের পরিমাণ গত আগের দিনের তুলনায় ১৪ শতাংশ বা ৮৩ কোটি টাকা কমেছে। ঢাকার শেয়ারবাজারে সূচক নিম্নমুখী ছিল। মূলধন গত দিনের তুলনায় ৫.২৭ শতাংশ কমেছে। যেখানে ভলিউম ৩৬ শতাংশ এবং টার্নওভার ১৪ শতাংশ কমেছে। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে সবগুলো সেক্টরের বাজার মূলধন হ্রাস পেয়েছে। ফ্লোর প্রাইসে ৬টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ব্লক মার্কেটে ১৯২ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা মোট লেনদেনের ৩৭.৭৯ শতাংশ। এসএমই সূচক (ডিএসএমইএক্স) ২৫.৬৯ পয়েন্ট কমেছে। ৫৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে এখানে, যা গত দিনের তুলনায় ৪৫ শতাংশ কম।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা