আবারো পতনের ছোবল পুঁজিবাজারে ১৮টি খাতই লোকসানে
কেনার কেউ নেই, আতঙ্কে বিক্রেতা ঘুরছে শেয়ার নিয়ে- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০৫
তারল্যসঙ্কটে আবারো পতনের ছোবলের কবলে দেশের পুঁজিবাজার। সূচকরে বড় ধরনের পতনের কারণে আতঙ্কে ৯৩ শতাংশ বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করার জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছে। কিন্তু বাজারে কোনো ক্রেতা নেই। ৭৯.৩৪ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর হারিয়েছে। ঢাকা স্টক থেকে আরো পাঁচ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা চলে গেছে। দু’দিনে ৬৬ পয়েন্ট পেলেও এক দিনেই গতকালের চেয়ে বেশি ৬৮.৩২ পয়েন্ট হারাল ডিএসইর প্রধান সূচক। প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারের ১৯টির মধ্যে মাত্র একটি সেক্টর ছিল লাভে, সেটি হলো তথ্যপ্রযুক্তি। ১৮টি সেক্টর লোকসানে। সেগুলো হলো- ব্যাংক, বীমা, পাট, মিউচুয়াল ফান্ড, পেপার ও প্রিন্টিং, ওষুধ ও কেমিক্যালস, সেবা ও রিয়েল স্টেট, চামড়াশিল্প, টেলিকম, বস্ত্র, ভ্রমণ, সিমেন্ট, সিরামিক্স, প্রকৌশলী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, খাদ্য, জ্বালানি ও তেল এবং বিবিধ।
সূচকের এমন বড় পতনের নেপথ্যে ছিল ১০ কোম্পানির শেয়ার বলে মনে করছে লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স অ্যানালাইসিস পোর্টালের গবেষণা। কোম্পানিগুলো হলো- রেনাটা, বেক্সিমকো ফার্মা, বিকন ফার্মা, ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো, ব্র্যাক ব্যাংক, রবি আজিয়াটা, ওরিয়ন ফার্মা, পূবালী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক এবং সিটি ব্যাংক পিএলসি। কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর কমার কারণে ডিএসইর সূচকের পতন হয়েছে ৩১ পয়েন্টের বেশি। আর রয়েল ক্যাপিটালের পর্যবেক্ষণ হলো- ডিএসইতে সেলার ছিল ৭২ শতাংশ এবং ক্রেতা ছিল মাত্র ১৭ শতাংশ। আর ১১ শতাংশ বেচাকেনায় ছিল না। তবে বিক্রির চাপ ছিল ৯৩ শতাংশ। যেখানে ক্রেতা ছিল মাত্র ৭ শতাংশ।
লেনদেনের তথ্য থেকে দেখা যায়, ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৮.৩২ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ৭৬১.৩৭৮ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ১৪.৬৬ পয়েন্ট কমে এক হাজার ২৫১.৬৪৮ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৩.৯৬ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ৭.৩৩ পয়েন্টে রয়েছে। ১৪ কোটি ৮৯ লাখ দুই হাজার ২৭৬টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড গতকাল ডিএসইতে ৪৬৮ কোটি ৮২ লাখ ১১ হাজার ৯১৫ টাকায় হাতবদল হয়েছে। গত রোববার লেনদেন হয়েছিল ৪৬৭ কোটি টাকার। আগের দিনের চেয়ে লেনদেন বেড়েছে ৫৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা। সূচক ও দরপতনে বাজারমূলধন ০.৮২ শতাংশ বা পাঁচ হাজার ৬২৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা কমে এখন ছয় লাখ ৭৭ হাজার ৬৭৪ কোটি ৫০ টাকায় অবস্থান করছে। ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৯৭টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৪৭টির, কমেছে ৩১৫টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৫টির।
আর ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল পতনেও ৩৫টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব কোম্পানির ৫৮ লাখ ২৫ হাজার ২১টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড মোট ২১ কোটি ৭৩ লাখ ১৩ হাজার টাকায় বেচাকেনা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, শাইনপুকুর সিরামিকস এবং এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। আজ এই তিন কোম্পানির মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৩৪ লাখ টাকারও বেশি। এই তিন কোম্পানির মধ্যে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের ছয় কোটি ৩৮ ৭৮ হাজার টাকার, শাইনপুকুর সিরামিকসের তিন কোটি ৪২ লাখ ৮১ হাজার টাকার এবং এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এক কোটি ৯২ লাখ ৭৬ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
অন্য দিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবগুলো সূচকই পতনের কবলে। সিএসএপিআই ১১৭.০৪ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স ৭২.২৮ পয়েন্ট এবং সিএসই-৩০ সূচক ৪১.৭২ পয়েন্ট খোয়া গেছে। ২৫ লাখ সাত হাজার ৭৫২টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড হাতবদল হয়েছে মোট আট কোটি ১৬ লাখ টাকায়। রোববার লেনদেন হয়েছিল ১১ কোটি ৯২ লাখ ২১ হাজার টাকার। ফলে তিন কোটি টাকার বেশি লেনদেন কম হয়েছে। সিএসইতে ২১৬টি কোম্পানি গতকাল লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৬২টির, কমেছে ১৩৬টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পতনের চাপে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা প্রতিদিন নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে, আর নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা নতুন নতুন আইপিও ও বন্ড ইস্যু করার কাজে মত্ত। বাজার ইতিবাচক করার জন্য যেসব বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগ প্রয়োজন, সেসব উদ্যোগ নেই।