১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ময়মনসিংহে ৬ মেগাওয়াট বর্জ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে

২০ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ ক্রয়ে সরকারের ব্যয় হবে ১,৯৫১ কোটি টাকা
-

বেসরকারি খাতে স্থাপিতব্য ৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বর্জ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২০ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ কিনবে সরকার। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এই বিদ্যুৎ ক্রয় করবে। ২০ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ কেনার জন্য সরকারকে ব্যয় করতে হবে এক হাজার ৯৫১ কোটি টাকা।
আজ বুধবার অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবিত এ ট্যারিফ হার অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপিত হবে এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় বর্জ্য সরবরাহ করবে সংশ্লিষ্ট করপোরেশন। বিল্ড-ওন-অপারেট (বি-ও-ও) ভিত্তিতে এবং নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট শর্তে সম্পূর্ণ নিজ খরচে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করবে যুক্তরাজ্যের ডিপি ক্লিনটেক ইউকে লিমিটেড এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠান ইমপেক্ট এনার্জি গ্লোবাল লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে গঠিত একটি কনসোর্টিয়াম। প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ হার ধরা হয়েছে ০.২০৯১ ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১১১ টাকা হিসাবে) ২৩.২১০১ টাকা।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে বেসরকারি খাতে বি-ও-ও ভিত্তিতে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ বিভিন্ন উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রাপ্ত চারটি প্রস্তাব বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠায়। পরবর্তীতে তিনটি কোম্পানির পূর্ণাঙ্গ কাগজপত্র পাওয়া যায়। এর মধ্যে মনোনীত কনসোর্টিয়াম ছাড়া অপর দু’টি প্রস্তাবে কারিগরি ও আর্থিক যোগ্যতায় ঘাটতি থাকায় সেগুলো নন-রেসপনসিভ হিসেবে বিবেচিত হয়।
সূত্র জানায়, মনোনীত স্পন্সর কোম্পানি তথা কনসোর্টিয়াম নিজ উদ্যোগে, নিজ খরচে ও দায়িত্বে জমির সংস্থান ও প্রকল্প ব্যয় বহন করবে। প্রকল্প এলাকা হচ্ছে- ময়মনসিংহের চর ঈশ্বরদিয়া মৌজার চর কালীবাড়ি ও শম্ভুগঞ্জ রোড। বিদ্যুৎ সরবরাহে স্পন্সর কোম্পানিকে প্রকল্প স্থান থেকে শম্ভুগঞ্জ ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্রের ৩৩ কেভি বাস পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার ইভাকুয়েশন লাইন এবং ৩৩ কেভি বে নির্মাণ করতে হবে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম পিডিবির মতামত অনুযায়ী সম্পাদন করা হবে।
জানা গেছে, স্পন্সর কোম্পানি শুরুতে ২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বর্জ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে চেয়েছিল। পরবর্তীতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষমতা বাড়িয়ে ৬ মেগাওয়াটের প্রস্তাব দেয় এবং এটি চূড়ান্ত করা হয়। অন্য দিকে প্রাথমিক দর প্রস্তাবে প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ হার ০.২১৫৮ ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ২৩.৯৫৩৮ টাকা) উল্লেখ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে দরকষাকষির মাধ্যমে এটি কমিয়ে প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ হার ০.২০৯১ ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ২৩.২১০১ টাকা) চূড়ান্ত করা হয়।
সূত্র জানায়, ইতোপূর্বে চারটি বর্জ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে একই শর্তে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করেছে পিডিবি। বর্তমান স্পন্সর কোম্পানির প্রস্তাবিত ট্যারিফ হার পূর্বের সম্পাদিত চুক্তিগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এ ছাড়াও পূর্বের সম্পাদিত চুক্তিগুলোর মধ্যে ২০২০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বর্জ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করা হয়। এর ট্যারিফ হার হচ্ছে প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা ০.২০৯১ ডলার। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করছে ইউডি গ্রিন এনার্জি (এনসিসি বাংলাদেশ) কোম্পানি লিমিটেড।
একই বছর (২০২০ সাল) ১২ নভেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪২.৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বর্জ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করা হয়। এর ট্যারিফ হার হচ্ছে প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা ০.২১৭৮ ডলার। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করছে চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন।
গত ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪২.৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বর্জ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করা হয়। এর ট্যারিফ হার হচ্ছে প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা ০.২১৫০ ডলার। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করছে ক্যানভেস এনভায়রনমেন্টাল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড।
সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় ১১ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বর্জ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার একটি চুক্তি করা হয়। এর ট্যারিফ হার হচ্ছে প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা ০.১৯১০ ডলার। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করছে যৌথভাবে সিদ্দিকী ফেব্রিক্স লিমিটেড-ইনটেক এনার্জিস জিএমবিএইচ-সৌদিয়া জার্মান পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেড।


আরো সংবাদ



premium cement