ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে শেয়ারবাজার
ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে ২২ পয়েন্ট- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে শেয়ারবাজার। একই সাথে টানা দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসার আভাস দিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। বিনিয়োগকারীরা ‘পুঁজি রক্ষার’ দাবিতে আন্দোলনে নামার পর শেয়ারবাজারে টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। একই সাথে বাড়ছে লেনদেনের গতি। ফলে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পরিমাণও কিছুটা কমে আসছে।
গতকাল বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায় আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বেড়েছে মূল্যসূচক। একই সাথে বেড়েছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম। পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে।
গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মতো চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে এ বাজারটিতেও বেড়েছে মূল্যসূচক। একই সাথে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের চার কার্যদিবসেই মূল্যসূচক বাড়ল। এর আগে শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক দরপতন দেখা দিলে আন্দোলনের ডাক দেন বিনিয়োগকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যায়।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। লেনদেনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকে। ফলে দাম বাড়ার তালিকা বড় হওয়ার পাশাপাশি সব কয়টি মূল্যসূচক বেড়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
গতকাল দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ২০৭ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২৯টির। এ ছাড়া ৬৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২২ পয়েন্ট বেড়ে পাঁচ হাজার ১৭০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯১৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১৪৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। গতকাল দিন শেষে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৪৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ২৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে টানা তিন কার্যদিবস ডিএসইতে চার শ’ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলো। গতকাল লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে মিডল্যান্ড ব্যাংকের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ১২ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৩৩ লাখ টাকার। এ ছাড়া ১২ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে অগ্নি সিস্টেমস।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বিচ হ্যাচারি, গ্রামীণফোন, কোহিনুর কেমিক্যাল, সেন্ট্রাল ফার্মা, ম্যারিকো বাংলাদেশ, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং। অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৩৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ১৯৮ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬৭টির এবং ১৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে পাঁচ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় চার কোটি ২১ লাখ টাকা।
খুলনা প্রিন্টিংয়ের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি, তদন্তের নির্দেশ : শেয়ারবাজারে পেপার ও প্রিন্টিং খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার কারণ এবং অধিক পরিমাণ শেয়ার লেনদেনের বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সম্প্রতি এই বিষয়ে নির্দেশ দিয়ে ডিএসইর চিফ রেগুলেটরি অফিসার বরাবর চিঠি পাঠিয়েছে বিএসইসি। ডিএসইকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে কমিশন। বিএসইসির উপপরিচালক মুহাম্মদ নানু ভুঁইয়া স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ও লেনদেন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটির পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ আছে কিনা সেটি খুঁজে বের করতে হবে। এ ছাড়া, কোম্পানির লেনদেনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের কারসাজি বা ইনসাইডার ট্রেডিং অথবা অনৈতিক কোনো লেনদেনের ঘটনা ঘটছে কিনা সেটিও তদন্তের নির্দেশ দেয়া হলো। কোম্পানিটির গত ২৩ জানুয়ারির ৭ দশমিক ২০ টাকার শেয়ারটি ৪ ফেব্রুয়ারি লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ২০ টাকায়। অর্থাৎ এই সময়ের ব্যবধানে শেয়ারটির দর বেড়েছে ২৬ টাকা বা ৩৬১ শতাংশ।
বেক্সিমকোর আরো ৪ কারখানা লে-অফ ঘোষণা : শেয়ারবাজারে বিবিধ খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেডের আরো চারটি কারখানা (ইউনিট) লে-অফ ঘোষণা করা হয়ছে। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) এসব কারখানার উৎপাদন বন্ধ ও শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। গাজীপুরের কাশিমপুরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ইয়ার্ন ইউনিট-২, টেক্সটাইল, ডেনিম ও নিটিং বিভাগ বন্ধ করে শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হয়েছে। তবে এ শিল্পগোষ্ঠীর অন্যান্য বিভাগ, যেমন: রূপগঞ্জের ইয়ার্ন ইউনিট-১ এর কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে পাঠানো চিঠিতে বেক্সিমকো লিমিটেড জানিয়েছে, উল্লিখিত ইউনিটগুলো বাদে কোম্পানির বাকি ইউনিটগুলোতে উৎপাদনকার্যক্রম চালু আছে। এর আগেও বেক্সিমকোর কয়েকটি কারখানা লে-অফ করা হয়েছে। এরপর গত সপ্তাহে সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, বেক্সিমকো শিল্প পার্কের লে-অফে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে একেবারে বন্ধ করে দেয়া হবে ১২টি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো ফার্মা ও শাইনপুকুর সিরামিকের বন্ধকি শেয়ার বিক্রি করে দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাগুলোর কর্মীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা