১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪ মাঘ ১৪৩১, ১৭ রজব ১৪৪৬
`

নতুন বছরেও সুখবর নেই শেয়ারবাজারে

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট কমেছে
-

নতুন বছরে দেশের শেয়ারবাজার নিয়ে অনেক প্রত্যাশা থাকলেও নি¤œমুখী প্রবণতা থেকে বের হতে পারছে না। এদিকে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে গতকাল প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের দরপতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এর মাধ্যমে চলতি বছরে লেনদেন হয়া ১২ কার্যদিবসের মধ্যে ৯ কার্যদিবসেই মূল্যসূচক ছিল নি¤œমুখী। টানা পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
গতকাল বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডিএসই ও সিএসইতে আগের কার্যদিবসের তুলনায় টাকার পরিমাণে লেনদেন কমেছে। একইসাথে উভয় শেয়ারবাজারে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দাম নি¤œমুখী প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।
গতকাল দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৮ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট কমেছে। দিন শেষে ডিএসইএক্সের অবস্থান ছিল পাঁচ হাজার ১৩৩ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৬ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৫০ পয়েন্টে অবস্থান করতে দেখা গেছে। একই সাথে ডিএস-৩০ সূচক ৪ দশমিক ০৩ পয়েন্ট কমেছে। দিন শেষে ডিএস-৩০ এর অবস্থান ছিল এক হাজার ৮৯৪ পয়েন্টে।
গতকাল ডিএসইতে মোট ৩৯৯টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট হাতবদল হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৪১টি কোম্পানির, কমেছে ১৯৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬২টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের। গতকাল ডিএসইতে মোট ৩৬৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট হাতবদল হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৪০৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায় গতকাল চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক আগের দিনের তুলনায় ২২ দশমিক ৬২ পয়েন্ট কমে আট হাজার ৭২৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩৭ দশমিক ৯১ পয়েন্ট বেড়ে ১৪ হাজার ৩৫১ পয়েন্টে অবস্থান করতে দেখা গেছে। দিন শেষে শরিয়াহ সূচক ৫ দশমিক ১৪ পয়েন্ট বেড়ে ৯৩৪ পয়েন্ট এবং সিএসই-৩০ সূচক ৫৫ দশমিক ৩১ পয়েন্ট কমে ১১ হাজার ৭৫৯ পয়েন্টে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
গতকাল সিএসইতে ১৭৮টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট হাতবদল হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৫৭টি কোম্পানির, কমেছে ৯৬টির এবং অপরিবর্তিত আছে ২৫টি কোম্পানির শেয়ার। গতকাল দিনশেষে সিএসইতে চার কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট হাতবদল হয়েছে। আগের কার্যদিবসে হাতবদল হয়েছিল ৯ কোটি ৪০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।
যুক্তরাষ্ট্রে অফিস খুলছে এনভয় টেক্সটাইল : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি এনভয় টেক্সটাইলস লিমিটেড যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক নগরী নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটানে লিয়াজোঁ অফিস খুলছে। কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সূত্রে বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়েছে।
কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, ম্যানহাটানের এক হাজার ৫৬ বর্গফুটের একটি লিয়াজোঁ কার্যালয় খুলবে প্রতিষ্ঠানটি। কার্যালয় ভাড়া, পরিষেবা বিল ও অন্যান্য খরচসহ এই কার্যালয়ের পেছনে মাসে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার। বর্তমান বিনিময় হারে দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ছয় লাখ টাকা। কোম্পানিটি বলছে, বিদ্যমান বিদেশী ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ বাড়াতে এবং বাজার সম্প্রসারণে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কোম্পানিটির বিদেশী ক্রেতারা দীর্ঘদিন ধরে এই দাবি জানিয়ে আসছিল।
কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে নিজস্ব কার্যালয় স্থাপন করা হলে তাতে ক্রেতাদের সাথে যেমন যোগাযোগ বাড়বে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এনভয়ের বাজার সম্প্রসারণের কাজটিও সহজ হবে। সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার যথাযথ অনুমোদনের ভিত্তিতে কার্যালয় খোলার কাজটি সম্পন্ন করা হবে বলেও জানিয়েছে কোম্পানিটি।
প্রসঙ্গত, এনভয় টেক্সটাইল ২০১২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এটি দেশের পরিবেশবান্ধব কারখানাগুলোর মধ্যে একটি। সর্বশেষ গত বছরের জুনে সমাপ্ত আর্থিক বছর শেষে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।
লেনদেনের শীর্ষে সেন্ট্রাল ফার্মা : গতকাল সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে সেন্ট্রাল ফার্মা লিমিটেড। গতকাল সেন্ট্রাল ফার্মার ১৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। তাতে লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসে কোম্পানিটি।
গতকাল লেনদেনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা ওরিয়ন ইনফিউশনের ১১ কোটি ২৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এ দিকে ১০ কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডস। এ দিকে লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ফাইন ফুডস, খান ব্রাদার্স, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, খুলনা প্রিন্টিং, আফতাব অটো, মিডল্যান্ড ব্যাংক এবং জিকিউ বলপেন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
দরবৃদ্ধির শীর্ষে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স: এ দিকে গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দরবৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। দিনশেষে ডিএসইতে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় তিন টাকা ২০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেড়েছে।
এ দিকে দরবৃদ্ধির দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রহিমা ফুড করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়েছে। টপটেন গেইনার তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা নর্দার্ন ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ। গতকাল দরবৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসা অপর কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, পিপলস লিজিং, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডস এবং চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
দরপতনের শীর্ষে মিডল্যান্ড ব্যাংক: গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দরপতনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে মিডল্যান্ড ব্যাংক পিএলসি। গতকাল মিডল্যান্ড ব্যাংকের শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমেছে তিন টাকা বা ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। তাতে দরপতনের শীর্ষে জায়গা নিয়েছে কোম্পানিটি।
দর হারানোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ কমেছে। আর শেয়ারদর ৮ দশমিক ৮২ শতাংশ কমে যাওয়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে ফারইস্ট ফাইন্যান্স। গতকাল ডিএসইতে দর পতনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ওয়েস্টার্ন মেরিন, ফাইন ফুডস, অলিম্পিক এক্সেসরিজ, ফাইন ফুডস, এমারেল্ড অয়েল, গ্লোবাল হেভি এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড।
‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামলো সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল: শেয়ারবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল লিমিটেডের ক্যাটাগরি পরিবর্তন করা হয়েছে। কোম্পানিটিকে ‘বি’ থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গতকাল শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হবে। সে অনুযায়ী কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ এমজিএম করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই এখন থেকে কোম্পানিটি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করবে বলে জানানো হয়েছে।
এ দিকে ক্যাটাগরি পরিবর্তনের কারণে কোম্পানিটিকে ঋণসুবিধা দিতে ব্রোকার হাউজ এবং মার্চেন্ট ব্যাংককে নিষেধ করেছে ডিএসই। গত ২০ মে বিএসইসির জেড শ্রেণী নিয়ে জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়- পরপর দুই বছর বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ না দিলে, আইন অনুযায়ী নিয়মিত এজিএম না করলে, সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়া ছয় মাসের বেশি উৎপাদন বা কার্যক্রম বন্ধ থাকলে, পুঞ্জীভূত লোকসান পরিশোধিত মূলধনের বেশি হলে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঘোষিত লভ্যাংশের ন্যূনতম ৮০ শতাংশ বিতরণ না করলে কোনো কোম্পানিকে ‘জেড’ শ্রেণীভুক্ত করা যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement