১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪ মাঘ ১৪৩১, ১৭ রজব ১৪৪৬
`
ইআরএফের সেমিনারে বক্তারা

গ্যাসের দাম ও ভ্যাট বাড়ার প্রভাব পড়বে অর্থনীতি-জনজীবনে

-

নতুন করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি ও ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানোর সমালোচনা করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলেছেন, গ্যাসের দাম ও ভ্যাট বাড়ায় অর্থনীতি এবং জনজীবনে এর প্রভাব পড়বে। সরকার যে নীতি নিচ্ছে এগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের ব্যবসায়ীরা কোথায় যাবেন? গ্যাসের দাম এবং ভ্যাট বৃদ্ধির আগে অর্থনীতি এবং জনজীবনে এর কী প্রভাব পড়বে তা খতিয়ে দেখা হয়নি। ব্যবসায়ীদের সাথে এ নিয়ে কোনো আলোচনা করা হয়নি।
গত বুধবার অর্থ ও বাণিজ্যবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বিনিয়োগের সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
এ দিকে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে সরকার অনেক ব্যবসা থেকে সরে আসবে। কারণ সরকারের ব্যবসা করার দরকার নেই। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে আমরা তার গ্রাউন্ড তৈরি করে দেবো।
অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বিভিন্ন উন্নত দেশে দেখা যায় সরকার মূলত জাতীয় কিংবা জাতীয় নিরাপত্তাজনিত স্বার্থ আছে এমন সংস্থায় সম্পৃক্ত হয়। বাংলাদেশ সরকারের এমন অনেক ব্যবসায় মালিকানা বা পার্টনারশিপ আছে যেখানে আসলে থাকার দরকার নেই। আমরা মনে করি, যে সেক্টরে সরকারের সম্পৃক্ততার দরকার নেই, সেখান থেকে সরকারের বের হয়ে আসা উচিত।
তিনি বলেন, বিডায় আমাদের কাজগুলোকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করেছি। প্রথম ভাগে সমস্যাগুলো শনাক্ত করেছি। বিডার তালিকাভুক্ত বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে হাজারের বেশি সমস্যার তথ্য পেয়েছি। তবে একসাথে এত সমস্যা নিয়ে কাজ করা কঠিন। তাই দ্বিতীয় ভাগে আমরা কোন কোন সেক্টরে কাজ করব তার একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এ তালিকায় ২১টি সমস্যা অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে এবং তিন নম্বর ধাপে আমাদের ভবিষ্যৎ কল্পনা কী হতে পারে তা নিয়ে পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে।
গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই ঘাটতি আমাদের শিল্প-কারখানাগুলোতে একটি বড় ইস্যু। এই ঘাটতির বড় একটি কারণ বিগত সরকারের গোলপোস্ট বা লক্ষ্য ভুল ছিল। ১০০ ইকোনমিক জোন তৈরির উদ্যোগটি মোটেও সময়োপযোগী নয়। আমরা এখন সরকার থেকে পাঁচটি ইকোনমিক জোনে ফোকাস করব। আমাদের এখনো অনেক দূর যাওয়ার আছে। দেশে এত চ্যালেঞ্জ থাকার পরও যারা এখনো ব্যবসা করছেন তাদেরকে ধন্যবাদ দেয়া উচিত। এ বছর আমরা একটা ইনভেস্টমেন্ট সামিট করতে যাচ্ছি। আগামী ৭ থেকে ১০ এপ্রিল এই সামিট অনুষ্ঠিত হবে। সামিটের প্রথম ধাপে আমরা ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন লোকেশন ভিজিট করাব। আর দ্বিতীয় ধাপে আমরা ঢাকায় সামিটের আনুষ্ঠানিকতা করব। আমরা এবার বড় বড় কিছু বিদেশী ইনভেস্টরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। ওনারা এসে বাংলাদেশের বাস্তবিক অবস্থা দেখুক, তারপর বিনিয়োগ করুক।
ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ইকবাল চৌধুরী, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক প্রেসিডেন্ট আবুল কাসেম খান, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) প্রশাসক, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো: হাফিজুর রহমান এবং বিডার বিজনেস ডেভেলপমেন্ট প্রধান নাহিয়ান রহমান রোচি সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
হা-মীম গ্রুপের এমডি এ কে আজাদ বলেছেন, তরুণরা দেখিয়ে দিয়েছে, পরিবর্তন সম্ভব। দেশ পরিবর্তন হতে হবেই, তবে এতে সময় দরকার। বর্তমান সরকারের নেয়া নীতিগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশের চিত্র পাল্টে যাবে। নীতিনির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে পণ্যের উৎপাদন খরচ নিয়ে গবেষণা করা দরকার। সাম্প্রতিক সময় ব্যবসায়ীরা কাঁচামাল আমদানি করতে পারছে না। ব্যবসায়ী হওয়া মানে আমি একজন অপরাধী, সবাই চুষে খায়। নতুন কোনো বিনিয়োগ হচ্ছে না। সব সরকারের চরিত্র একই। সবাই ব্যবসায়ীদের সমস্যাগুলোকে এড়িয়ে যায়।
ডিসিসিআইর সাবেক প্রেসিডেন্ট আবুল কাসেম খান বলেন, সাপ্লাই চেইন পদ্ধতিতে আমরা অনেক দুর্বল। একজন বাংলাদেশী হিসেবে বিনিয়োগের সীমিত সুযোগ পাচ্ছি। সনি, টয়েটা, মিতসুবিশি দিয়ে সবাই জাপানকে চেনে। আমাদের এমন কোনো ব্র্যান্ড নেই, যার মাধ্যমে পুরো পৃথিবী আমাদের চিনবে। দেশের নীতিনির্ধারকরা ন্যারো মাইন্ডেড। তারা মনে করেন সব ব্যবসায়ী দেশ ছেড়ে চলে যাবে টাকা নিয়ে। যারা যাবার তারা চলে গেছেন, আমরা কিন্তু রয়ে গেছি। আমরা যাচ্ছি না কোথাও।
এফবিসিসিআইর প্রশাসক মো: হাফিজুর রহমান বলেন, নতুন উদ্যোগক্তাদের মধে অস্থিরতা কাজ করছে। ইনভেস্ট করবে কি করবে না। তাদেরকে সেই অনিশ্চয়তা থেকে বের করে অনুকূল পরিবেশ দিতে হবে, যাতে তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হয়। যদি কোনো নতুন উদ্যোক্তা ব্যবসা শুরু করতে চায় তার জন্য ইন্স্যুরেন্স নেই। ফেল করলে আর উঠে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। অথচ ফেল করেই তারা শিক্ষালাভ করে, অভিজ্ঞতা বাড়ে। কিন্তু তারা একবার ফেল করলে আর উঠে দাঁড়াবার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। নতুনদের জন্য ট্যাক্স ভীতিকর এক অবস্থা। আমাদের উচিত তাদের জন্য বিষয়টি একটু রিলাক্স করা যায় কি না তা নিয়ে চিন্তা করা। নতুন ও ছোট ব্যাবসায়ীদের জন্য উপযুক্ত পরিবশে তৈরি করা দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement