ইতিবাচক পথে বছর শেষ করল পুঁজিবাজার
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
- প্রথম দেড় ঘণ্টায় ১০২ কোটি টাকার লেনদেন
- ব্যাংক হলিডের কারণে আজ লেনদেন বন্ধ
বড় ধরনের কোনো উন্নতি না হলেও ইতিবাচক পথে থেকেই বছর শেষ করল দেশের পুুঁজিবাজার। তবে খুব একটা ভালো বলা যাবে না এ ইতিবাচক পথকে। কারণ লেনদেন কমেছে দুই বাজারে। বেশিরভাগ কোম্পানি দর পতনে ছিল। সূচক কিছুটা ফেরাতে শেয়ার কেনার চাপ ৫৮ শতাংশ এবং বিক্রির চাপ ৪২ শতাংশ ছিল। ডিএসইতে ০.১১ শতাংশ মূলধন বেড়েছে। এর আগে টানা তিন কর্মদিবস পতনের পর বৃহস্পতিবার এবং রোববার উত্থান হয়েছে শেয়ারবাজারে। টানা তিন কর্মদিবস শেয়ারবাজার থেকে ৫২ পয়েন্ট হারিয়ে যায়। তবে শেষ তিন কর্মদিবস উত্থানে শেয়ারবাজারে ফিরেছে ৪৭ পয়েন্ট। আজ ব্যাংক হলিডের কারণে লেনদেন বন্ধ।
দিনের লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডিএসইতে গতকাল মূল্যসূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন হয়। তবে বেলা একটার পর সূচক সর্বনিম্নে নেমে আসে। ডিএসইর লেনদেন শুরুর প্রথম দেড় ঘণ্টায় অর্থাৎ বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ডিএসইএক্স ১৫.৮১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে পাঁচ হাজার ২২০ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ৩.৫৮ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১৬৯ পয়েন্টে আর ‘ডিএসই-৩০’ সূচক ৭.৮৬ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯৩৯ পয়েন্টে চলে আসে। একই সময়ে ডিএসইতে মোট ১০২ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
আর দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১.৬৬ পয়েন্ট বেড়ে পাঁচ হাজার ২১৬.৪৪ পয়েন্টে, ডিএসইএস ২.৫৯ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১৬৮.৯০ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৮.০৫ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯৩৯.৭৩ পয়েন্টে উঠে এসেছে। ডিএসইতে ১১ কোটি ৯৯ লাখ ৬২ হাজার ৬১৮টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বেচাকেনা হয়েছে মোট ৩৭৩ কোটি ৮৬ লাখ ৪৭ হাজার ২১১ টাকায়। রোববার লেনদেন হয়েছিল ৩৭৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকার। লেনদেন ৫০ লাখ টাকার বা ০.১৩ শতাংশ কমেছে। লেনদেন হওয়া ৩৯৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ১৪২টির বা ৩৫.৭৬ শতাংশের, কমেছে ১৮৪টির বা ৪৬.৩৫ শতাংশের এবং দর পরিবর্তন হয়নি ৭১টির বা ১৭.৮৮ শতাংশের।
ব্লক মার্কেটে ২৭ কোম্পানি: আর ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল ২৭টি কোম্পানির ২৯ লাখ ৮১ হাজার ৪২৬টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে। যার গতকালের বাজার মূল্য ছিল মোট ১৪ কোটি ৬ লাখ ৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হতে দেখা গেছে সাত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- সানলাইফ ইন্সুরেন্স, রিলায়ান্স ওয়ান দ্য স্কিম অব রিলায়ান্স ইন্সুরেন্স মিউচুয়াল ফান্ড, লাভেলো আইসক্রিম, বিচ হ্যাচারি, বেক্সিমকো ফার্মা, বিকন ফার্মা এবং ফাইন ফুডস লিমিটেড। এ সাত প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৪৮ লাখ টাকারও বেশি। সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে সানলাইফ ইন্সুরেন্সের। কোম্পানিটির দুই কোটি ৫৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। রিলায়ান্স ওয়ান দ্য স্কিম অব রিলায়ান্স ইন্সুরেন্স মিউচুয়াল ফান্ডের দুই কোটি আট লাখ ৮১ হাজার টাকার ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আর এক কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে লাভেলো আইসক্রিম। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিচ হ্যাচারির এক কোটি ১০ লাখ ১৮ হাজার টাকার, বেক্সিমকো ফার্মার ৯৭ লাখ ২০ হাজার টাকার, বিকন ফার্মার ৯৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার এবং ফাইন ফুডস লিমিটেডের ৮৭ লাখ ৩১ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
টাকায় লেনদেন, দর বৃদ্ধি ও পতনে শীর্ষ ১০: ডিএসইতে গতকাল সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে লিনডে বাংলাদেশ লিমিটেডের। কোম্পানিটির দর সোমবারের তুলনায় ৬০ টাকা ১০ পয়সা বা ৬.২৬ শতাংশ বেড়েছে। যার ফলে ডিএসইর দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় প্রথম স্থানে স্থান নিয়েছে কোম্পানিটির শেয়ার। তালিকায় থাকা শাশা ডেনিমসের শেয়ার দর বেড়েছে আগের দিনের তুলনায় ১ টাকা বা ৫.৬৮ শতাংশ। আর ৪ টাকা বা ৪.৯২ শতাংশ দর বৃদ্ধি হওয়ায় শীর্ষ তালিকায় এডিএন টেলিকম লিমিটেড। তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে হাক্কানি পাল্পের ৪.৮১ শতাংশ, লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের ৪.৮০ শতাংশ, মার্কেন্টাইল ইসলামী ইন্সুরেন্সের ৪.৬০ শতাংশ, গ্রামীণ ওয়ান : স্কিম টু’র ৪.৩৪ শতাংশ, বিচ হ্যাচারির ৪.৩২ শতাংশ, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলের ৪.১২ শতাংশ এবং সিএপিএম আইবিবিএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ডের ৩.৪৪ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে।
আর সবচেয়ে বেশি দর কমেছে মিথুন নিটিং এন্ড ডাইং লিমিটেডের। কোম্পানিটির শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ৮০ পয়সা বা ৫.৭১ শতাংশ কমেছে। যার ফলে ডিএসইর দর পতনের শীর্ষ তালিকায় প্রথম স্থানে স্থান নিয়েছে কোম্পানিটির শেয়ার। শীর্ষ তালিকায় থাকা আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ার দর কমেছে আগের দিনের তুলনায় ১ টাকা বা ৫.১৮ শতাংশ। আর ১০ পয়সা বা ৪.৩৪ শতাংশ দর কমে যাওয়ায় পতনের শীর্ষ তালিকায় জায়গা নিয়েছে পিপলস লিজিং এন্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড। শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে আরামিট সিমেন্টের ৪.২৩ শতাংশ, এইচ.আর টেক্সটাইলের ৩.৮১ শতাংশ, খান ব্রাদার্সের ৩.৮০ শতাংশ, এসকে ট্রিমসের ৩.৭৭ শতাংশ, ডরিন পাওয়ারের ৩.৬২ শতাংশ, গোল্ডেন হার্ভেস্টের ৩.৩৩ শতাংশ এবং প্রিমিয়ার লিজিং এন্ড ফাইন্যান্স লিমিটেডের শেয়ার দর ৩.২২ শতাংশ কমেছে।
ডিএসইতে গতকাল লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড। কোম্পানিটির ২৪ কোটি ৩৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় উঠে এসেছে ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৮৪ লাখ ৮১ হাজার টাকার। ১১ কোটি ৫৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন নিয়ে শীর্ষ তালিকায় উঠে এসেছে রূপালী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানি মধ্যে রয়েছে ফাইন ফুডস, পূবালী ব্যাংক, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, সিটি ব্যাংক, লিনডে বাংলাদেশ, লাভেলো আইসক্রিম এবং মিডল্যান্ড ব্যাংক পিএলসি।
সিএসইতেও লেনদেনের পতন: চট্টগ্রাম স্টক বা সিএসইতে গতকাল আঠারো লাখ ৩০ হাজার ৩৭১টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ৪ কোটি ১৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪৪ টাকায়, যা রোববার থেকে ৬৪ লাখ টাকা কম। ওই দিন চার কোটি ৮২ লাখ টাকার লেনদেন হয়। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ৮৩টির, দর কমেছে ১০০টির এবং দর পরিবর্তন হয়নি ২৭টির। সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪৮৬ পয়েন্টে।
বেক্সিমকো, সাইফ পাওয়ার ও জেনেক্সের বি ক্যাটাগরিতে নামল: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানির ক্যাটাগরি স্থানান্তর করা হয়েছে বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তথ্য প্রকাশ করেছে। কোম্পানি তিনটি হলো বেক্সিমকো লিমিটেড, সাইফ পাওয়ারটেক এবং জেনেক্স ইনফোসিস। সমাপ্ত বছরে বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দেয়ায় বেক্সিমকোকে ‘এ’ থেকে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে কোম্পানিটির কার্যক্রম ‘বি’ ক্যাটাগরিতে হবে। আর সমাপ্ত বছরে বিনিয়োগকারীদের ১ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়ায় সাইফ পাওয়ারটেককে ‘এ’ থেকে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে কোম্পানিটির কার্যক্রম ‘বি’ ক্যাটাগরিতে হবে। অন্য দিকে সমাপ্ত বছরে জেনেক্স ইনফোসিস বিনিয়োগকারীদের ৩ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়ায় ‘এ’ থেকে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে কোম্পানিটির কার্যক্রম ‘বি’ ক্যাটাগরিতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা