পুঁজিবাজারে বেচাকেনায় মন্দাবস্থা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা
সূচক তেমন না বাড়লেও কেনার চাপ ৭১ শতাংশ- বিশেষ সংবাদদাতা
- ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বছরের শেষ প্রান্তে এসে দেশের পুঁজিবাজার বেচাকেনায় খরা ও সার্বিক মন্দা অবস্থা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে। বছরের লেনদেনের দু’দিন হাতে থাকতে কিছুটা উত্তোরণের দিকে ধাবিত হয়ে লেনদেন ৩৫০ কোটি টাকা ছাড়াল। তবে এখনো ২৫ শতাংশেরও বেশি কোম্পানি দর পতনের শিকার। সূচক যে খুব একটা বেড়েছে তা নয়। তবে এই পরিস্থিতিতে এসেও বিনিয়োগকারীরা কেনার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ফলে গতকাল ডিএসইতে কেনার চাপ ছিল ৭১ শতাংশ এবং বিক্রির চাপ ২৯ শতাংশ ছিল। আর বাজারমূলধনে ব্যাংকিং খাতের অংশীদারিত্ব এখন সর্বোচ্চ সাড়ে ১৯ শতাংশ। দিন শেষে ডিএসইর বাজারমূলধন ০.২৬ শতাংশ ফিরেছে বলে ডিএসইর তথ্য থেকে জানা গেছে।
দিনের লেনদেনের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, মূল্যসূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে ডিএসইতে গতকাল লেনদেন চলে। ডিএসইর লেনদেন শুরুর প্রথম দেড় ঘণ্টায় অর্থাৎ বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান সূচক বা ‘ডিএসইএক্স’ ২৭.৫৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৫ হাজার ২১২ পয়েন্টে। একই সময়ে শরিয়াহ সূচক বা ‘ডিএসইএস’ ৫.৫৩ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১৭২ পয়েন্টে আর ‘ডিএসই-৩০’ সূচক ৯.১৩ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯৩৬ পয়েন্টে অবস্থান করে। ওই সময়ে ডিএসইতে মোট ১১৫ কোটি ০৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
আর দিনেশেষে ডিএসইএক্স গত বৃহস্পতিবারের চেয়ে সূচক ২০.৩৩ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ২০৪.৭৮ পয়েন্টে, ডিএসই-৩০ সূচক ৪.৪০ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯৩১.৬৮ পয়েন্টে এবং শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ০.৩৪ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৬৬.৩০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। লেনদেনকৃত ৩৯৯টি কো¤পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২২৫টির বা ৫৬.৩৯ শতাংশের, দর পতনে ১০০টি বা ২৫.০৩ শতাংশ এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৭৪টি কোম্পানির শেয়ার। মোট ৩৯৯টি কো¤পানির ১১ কোটি ৯৯ লাখ ৬৯ হাজার ৭৩৫টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। যার গতকালের বাজারমূল্য ছিল ৩৭৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার ৪৬ টাকা, যা গত বৃহস্পতিবারের তুলনায় প্রায় ১০০ কোটি টাকা বেশি। ওই দিন বেচাকেনা হয় ২৮২ কোটি ১৯ লাখ টাকার।
টাকায় লেনদেন, দর বৃদ্ধি ও পতনের শীর্ষ ১০ : ডিএসইতে গতকাল টাকায় লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ ১০টি কোম্পানি হলো : অরিয়ন ইনফিউশন, বিএসসি, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, খান ব্রাদার্স পিপি, সিটি ব্যাংক, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বিএটিবিসি, রবি অজিহাটা, বীকন ফার্মা ও এশিয়াটিক ল্যাব্রোটোরিজ।
আর সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে লিগ্যাসি ফুটওয়্যার লিমিটেডের। কোম্পানিটির দর আগের দিনের তুলনায় ৫ টাকা ৩০ পয়সা বা ১০ শতাংশ বেড়েছে। যার ফলে ডিএসইর দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় প্রথম স্থানে স্থান নিয়েছে কোম্পানিটির শেয়ার। মার্কেন্টাইল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে আগের দিনের তুলনায় ১ টাকা ৪০ পয়সা বা ৬.২২ শতাংশ। আর ৩ টাকা ৮০ পয়সা বা ৫.৬৬ শতাংশ দর বৃদ্ধি হয়েছে আনোয়ার গ্যালভানাইজিং লিমিটেডের। এ ছাড়া অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে- আফতাব অটোমোবাইলসের ৫.৪৫ শতাংশ, সিটি ইন্স্যুরেন্সের ৪.২৫ শতাংশ, গোল্ডেন হার্ভেস্টের ৫.২৬ শতাংশ, সাউথইস্ট ব্যাংকের ৪.৫৪ শতাংশ, এমএল ডাইংয়ের ৪.৪৯ শতাংশ, নাভানা সিএনজির ৪.৪৬ শতাংশ এবং ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩.৩২ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে।
দর পতনের শীর্ষে প্রধান ১০টি কোম্পানি হলো : রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, জুট স্পিনার্স, এনভয় টেক্সটাইট, জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, সানালাইফ ইন্স্যুরেন্স, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, সাফকো স্পিনিং, এসকে ট্রিমস ও ফনিক্স ফাইন্যান্স।
ব্লক মার্কেটে লেনদেন বেড়েছে : এ দিকে ডিএসইর ব্লক মার্কেটে ৩১টি কোম্পানির এক কোটি ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৩টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বেচাকেনা হয়েছে মোট ৫২ কোটি ১৫ লাখ ১০ হাজার টাকায়। এর মধ্যে পাঁচ কোম্পানির শেয়ার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে। যার বাজারমূল্য হলো ৪০ কোটি ৯৫ লাখ টাকারও বেশি। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- মিডল্যান্ড ব্যাংক, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স এবং লিগ্যাসি ফুটওয়্যার লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে মিডল্যান্ড ব্যাংকের। ব্যাংকটির ৩৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪৫টি শেয়ার ১২ কোটি ৪২ লাখ ৭৯ হাজার টাকায় লেনদেন হয়েছে। আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের ১২ লাখ ১৮ হাজার ৪৯৯টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকায়। আর ৮ কোটি ৬০ লাখ ১৩ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে- এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের ৬ কোটি ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকার এবং লিগ্যাসি ফুটওয়্যার লিমিটেডের ৩ কোটি ৯৩ লাখ ৮১ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
সিএসইতে সূচক বাড়লেও কমেছে লেনদেন: চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সূচকগুলো বাড়লেও লেনদেন অর্ধেকে নেমেছে। সব সূচকই বেড়েছে। সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই ৩৬.১৪ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স ২১.১২ পয়েন্ট এবং সিএএসই-৩০ সূচক ৫৬.৯৯ পয়েন্ট বেড়েছে। লেনদেনে অংশ নেয়া ১৮৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫৭টির এবং ৩৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ১৬ লাখ ১৫ হাজার ৪৬৩টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ৮২ লাখ ৩৯ হাজার ৯৪৯ টাকা বাজারমূল্যে। বৃহস্পতিবারের লেনদেন হয় ৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ফলে লেনদেন কমেছে ৪ কোটি ৪৮ হাজার টাকা।
প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষণ: রয়্যাল ক্যাপিটাল বলছে, বছরের শেষ দিকে এসে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা। সূচক ২০ পয়েন্টের পাশাপাশি লেনদেন প্রায় ১০০ কোটি টাকা বাড়ল। দিনের শেষে বাজার লেনদেন ৯২ কোটি টাকা বেড়ে ৩৭৪ কোটি টাকা হয়েছে। মূলধন গতদিনের তুলনায় ০.২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে ভলিউম ২৭ শতাংশ এবং টার্নওভার ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে ১৪টি সেক্টরের শেয়ার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ৫ সেক্টরের শেয়ার মূল্য হ্রাস পেয়েছে। এসএমই বাজার সূচক (ডিএসএমইএক্স) ২৬.১৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১১৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে এবং লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি টাকা, যা গত দিনের তুলনায় ৬৪ শতাংশ বেশি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা