সূচক বৃদ্ধি : গতিহীন লেনদেন শঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা
অধিকাংশ কোম্পানির দর বাড়লেও বেচাকেনা তিন শ’র নিচে- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
টানা তিন দিন পতনের পর বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এলো পুঁজিবাজার। সূচক ডিএসইতে বাড়লেও চট্টগ্রামে পতনে সেঞ্চুরি। সামান্য পরিমাণে লেনদেন বাড়লেও ডিএসইর লেনদেন এখনো তিন শ’ কোটি টাকার নিচেই পড়ে আছে। গতিহীন এই লেনদেনে শঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা। প্রথম তিন কর্মদিবসে শেয়ারবাজার থেকে ৫২ পয়েন্ট হারিয়ে যায়। আর এক কর্মদিবসে মাত্র ১৫ পয়েন্ট ফিরে আসে। আর বাজার ইতিবাচক হতেই কেনার চাপ ৬৩ শতাংশ এবং বিক্রেতা মাত্র ৩৭ শতাংশ।
ডিএসইর লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, লেনদেনের শুরু থেকে মূল্যসূচকের মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল। ডিএসইর লেনদেন শুরুর প্রথম দুই ঘণ্টায় অর্থাৎ দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রধান সূচক বা ‘ডিএসইএক্স’ ৩.৮৬ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৬৫ পয়েন্টে নেমে আসে। শরিয়াহ সূচক বা ‘ডিএসইএস’ ০.০৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৫৮ পয়েন্টে আর ‘ডিএস-৩০’ সূচক ৪.৯৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯১৮ পয়েন্টে চলে আসে। দুই ঘণ্টায় ডিএসইতে মোট ৯৩ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যেখানে ঊর্ধ্বমুখী বাজারে এক ঘণ্টাতেই দেড় শ’ কোটি টাকা অতিক্রম করে। বেলা ১টার পর থেকে বাজারের ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসে।
দিনশেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স মঙ্গলবারের তুলনায় ১৫.১২ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ১৮৪.৪৪ পয়েন্টে উঠে এসেছে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক মঙ্গলবারের তুলনায় ৭.৯৫ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১৬৬.৬৪ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৪.২৫ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯২৭.২৭ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কিছুটা বেড়েছে। তবে লেনদেনের পরিমাণ তিন শ’ কোটি টাকার ঘর স্পর্শ করতে পারেনি। ৯ কোটি ৪৫ লাখ ১৯ হাজার ৩৮৬টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে ২৮২ কোটি ১৯ লাখ ৩৩ হাজার ৫৪৪ টাকায়। মঙ্গলবার লেনদেন হয় ২৭৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ছয় কোটি ৪৩ লাখ টাকা। আর এসএমই বাজার সূচক (ডিএসএমইএক্স) ১৮.৬৮ পয়েন্ট বেড়ে ১০৯০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৭.৮ কোটি টাকা; যা গত দিনের তুলনায় ২৪ শতাংশ কম।
দর পতনে শীর্ষ ১০ : ডিএসইতে গতকাল সবচেয়ে বেশি দর কমেছে মার্কেন্টাইল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স পিএলসির। কোম্পানিটির শেয়ার দর আগের দিনের তুলনায় ২ টাকা ৫০ পয়সা বা ১০ শতাংশ কমেছে। যার ফলে ডিএসইর দর পতনের শীর্ষ তালিকায় প্রথম স্থানে স্থান নিয়েছে কোম্পানিটির শেয়ার। দর পতনের শীর্ষ তালিকায় থাকা যমুনা অয়েলের শেয়ার দর কমেছে আগের দিনের তুলনায় ১৬ টাকা ১০ পয়সা বা ৮.৬৩ শতাংশ। আর ৯০ পয়সা বা ৮.৪৯ শতাংশ দর কমে যাওয়ায় পতনের শীর্ষ তালিকায় জায়গা নিয়েছে এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড। এ ছাড়া পতনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রায়াল ফাইন্যান্সের ৮.১৩ শতাংশ, আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড মিউচুয়াল ফান্ডের ৪.৭৬ শতাংশ, আনলিমা ইয়ার্ন ডাইংয়ের ৪.২০ শতাংশ, ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের ৪.১০ শতাংশ, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ৪.১০ শতাংশ, বাংলাদেশ ওয়েলডিং ইলেকট্রোডস লিমিটেডের ৩.৯২ শতাংশ এবং ফনিক্স ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট দর ৩.৬৩ শতাংশ কমেছে।
দর বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০ : আর সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এইচ আর টেক্সটাইল লিমিটেডের। কোম্পানিটির দর আগের দিনের তুলনায় ২ টাকা ৫০ পয়সা বা ৯.৩২ শতাংশ বেড়েছে। যার ফলে ডিএসইর দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় প্রথম স্থানে স্থান নিয়েছে কোম্পানিটির শেয়ার। দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় থাকা বিকন ফার্মার শেয়ার দর বেড়েছে আগের দিনের তুলনায় ৭ টাকা ৭০ পয়সা বা ৫.৭৭ শতাংশ। আর ২ টাকা ৪০ পয়সা বা ৪.৭৪ শতাংশ দর বৃদ্ধি হওয়ায় শীর্ষ তালিকায় জায়গা নিয়েছে লিগ্যাসি ফুটওয়্যার লিমিটেড। শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে পাওয়ার গ্রিডের ৪.৩১ শতাংশ, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ৪.২৫ শতাংশ, গোল্ডেন সনের ৪.১০ শতাংশ, ডেসকোর ৩.৬৬ শতাংশ, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৩.৬৫ শতাংশ, আইসিবির ৩.৬৫ শতাংশ এবং রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩.৩২ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে।
লেনদেনের শীর্ষ ১০ : আর লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড। কোম্পানিটির ১৮ কোটি দুই লাখ ৭৬ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। শীর্ষ তালিকায় উঠে এসেছে ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোড লিমিটেড। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ১৪ লাখ ১৪ হাজার টাকার। আট কোটি ৭০ লাখ ১৪ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন নিয়ে শীর্ষ তালিকার তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন। তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে রয়েছে খান ব্রাদার্স, পূবালী ব্যাংক, ডমিনেজ স্টিল, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, আইসিবি এবং রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
ব্লক মার্কেটে ৩৫টির মধ্যে বিকন ফার্মা শীর্ষে : এ দিকে ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল ৩৫টি কোম্পানির ৫৭ লাখ ৮৪ হাজার ৭৬২টি মেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৩২ কোটি ৭১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বাজারমূল্যে। এর মধ্যে পাঁচ কোম্পানির শেয়ার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বলে ডিএসইর তথ্য থেকে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো বিকন ফার্মা, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, বেক্সিমকো ফার্মা ও দ্য ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি। এই পাঁচ প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকারও বেশি। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বিকন ফার্মা। কোম্পানিটির ১৪ লাখ ৮১ হাজার ৮০০ শেয়ার হাতবদল হয়েছে মোট ১৯ কোটি ৫০ লাখ ৩৭ হাজার টাকায়। এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের পাঁচ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর এক কোটি ৮৮ লাখ ৬১ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মার এক কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার টাকার এবং দ্য ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসির ৫৩ লাখ ২৮ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
২৮.৩২ কোটি টাকা বিনিয়োগ বাড়াবে বিএটিবিসি: এ দিকে সক্ষমতা বাড়াতে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি বাংলাদেশের (বিএটিবিসি) পরিচালনা পর্ষদ বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তথ্য প্রকাশ করেছে। কোম্পানিতে নতুন করে ২৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হবে। এই বিনিয়োগ নিজস্ব ফান্ড ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে করবে বিএটিবিসি।
সিএসইতে সূচকের পতনের সেঞ্চুরি : চট্টগ্রাম স্টকে বা সিএসইতে গতকাল সূচকের পতনে সেঞ্চুরি হয়েছে। সিএসই-৩০ সূচক ১০৩.৪১ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স ৩১.৫০ পয়েন্ট এবং সিএএসপিআই ৫৩.৭৮ পয়েন্ট হারিয়েছে। দর পতনের শিকার অধিকাংশ কোম্পানি। এ দিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৮০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৬৬টির, কমেছে ৭৫টির এবং দর পরিবর্তন হয়নি ৩৯টির। আর ১৭ লাখ তিন হাজার ৫২৫টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৯ কোটি ৩০ লাখ তিন হাজার ৪০৫ টাকায়; যা মঙ্গলবারের লেনদেনের তুলনায় ১৩০ কোটি টাকা কম। ওই দিন লেনদেন হয় ১৩৯ কোটি ২০ লাখ টাকার।
প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষক রয়্যাল ক্যাপিটাল বলছে, সূচক বাড়লেও লেনদেনে গতি না আসায় আশঙ্কা রয়ে গেছে। বাজার লেনদেন সাত কোটি টাকা বেড়ে ২৮২ কোটি টাকা হয়েছে। ঢাকার শেয়ার বাজারের প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) ঊর্ধ্বমুখী ছিল। মূলধন গতদিনের তুলনায় ০.১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে ভলিউম ১৩ শতাংশ কমেছে এবং টার্নওভার ৯ শতাংশ বেড়েছে। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে ১৩টি সেক্টরের শেয়ার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ৬ সেক্টরের শেয়ার মূল্য হ্রাস পেয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা