৪ মাসে প্রায় ৩২ হাজার বিও হিসাব ব্যালেন্স শূন্য
‘নেতিবাচক রিটার্নের কারণে বাজার ছাড়ছে বিনিয়োগকারীরা’- হামিদ সরকার
- ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ক্ষমতার পটপরিবর্তন হয়েছে চার মাসের বেশি সময়। কিন্তু দেশের স্পর্শকাতর ও প্রায় অর্ধকোটি বিনিয়োগকারীর আস্থা ফেরানো যায়নি। ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পুঁজিবাজার। উল্টো মন্দা বাড়ছে, খরায় আক্রান্ত হচ্ছে। আর শেখ হাসিনার সরকারের পলায়নের পর থেকে চার মাসের বেশি সময়ে ৩১ হাজার ৮৬৫টি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব ব্যালেন্স শূন্য বা খালি হয়ে গেছে। বিও হিসাব ব্যবহার হচ্ছে না এমন সংখ্যা আরো ২ হাজার ৭৩৭টি বেড়েছে। আর চার মাসে আরো ২৩ হাজার বিও হিসাবে শেয়ার শূন্য হয়েছে। এক বছরে বিও হিসাব কমেছে ১ লাখ ১ হাজার ৩৮১টি। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) সর্বশেষ তথ্য থেকে এটা জানা গেছে। নেতিবাচক রিটার্নের কারণে বিনিয়োগকারীরা বাজার ছেড়ে চলে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।
উল্লেখ্য, বিও হলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্রোকারেজ হাউজ অথবা মার্চেন্ট ব্যাংকে একজন বিনিয়োগকারীর খোলা হিসাব। এই বিও হিসাবের মাধ্যমেই বিনিয়োগকারীরা শেয়ার লেনদেন করেন। বিও হিসাব ছাড়া শেয়ারবাজারে লেনদেন করা সম্ভব না।
১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের জনজোর ও আন্দোলনের মুখে পতনের পর দেশের পুঁজিবাজারের কোনো অগ্রগতি ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জিত হয়নি। উল্টো দর পতনের স্রোতে বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ নিয়ে শঙ্কিত। যদিও বিও হিসাব ব্যবহার বা অপারেটিং বিও হিসাব বেড়েছে চৌদ্দ শ’। বেড়েছে ব্যালেন্স শূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা। হাসিনা সরকারের পতনের পর দিন ৬ আগস্ট ব্যালেন্স শূন্য বিও হিসাব ছিল তিন লাখ ১০ হাজার ৯১৭টি। অন্তর্বর্তী সরকারের চার মাসের বেশি সময় অতিক্রম করলেও ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই বিও হিসাব আরো ৩১ হাজার ৮৬৫টি ব্যালেন্স শূন্য হওয়ায় ব্যালেন্সহীন বিও এখন বেড়ে তিন লাখ ৪২ হাজার ৭৮২টিতে পৌঁছেছে।
আর ব্যবহার হয়নি বিও হিসাব এদের সংখ্যা এই সরকারের চার মাসের বেশি সময়ে ২ হাজার ৭৩৭টি বেড়ে ৬৪ হাজার ২২১টিতে দাঁড়িয়েছে। যেখানে গত ৬ আগস্ট ছিল ৬১ হাজার ৪৮৪টি। একই সময়ে শেয়ার আছে এমন বিও হিসাব ছিল ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৭৬৮টি। গত চার মাসে শেয়ার ছেড়ে দেয়ার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে ২৩ হাজার ৫২টি হিসাব শেয়ার শূন্য হওয়ায় এখন শেয়ার আছে এমন হিসাব করে ১২ লাখ ৭২ হাজার ৭১৬টিতে নেমেছে।
সিডিবিএলের তথ্য বলছে, সার্বিকভাবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়লেও বিদেশী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমছে। বর্তমানে বিদেশী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব আছে ৪৬ হাজার ৬৯৯টি। শেখ হাসিনার সরকার পতনের সময় এই সংখ্যা ছিল ৪৭ হাজার ৮৩টি। আর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার সময়ে কমে ৪৭ হাজার ৮১টি। অর্থাৎ বিদেশী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ধারাবাহিকভাবে কমেছে। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে কমেছে ৩৮৪টি।
সিবিএলের তথ্য থেকে জানা গেছে, ব্যক্তিগত বিও হিসাব এই সময়ে এসে আগের শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সময় থেকে বেড়েছে। ৬ আগস্ট ছিল ১১ লাখ ৮৩ হাজার ৮০৪টি। যা ২৪ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের চার মাসের বেশি সময়ে ১৫ হাজার ৩৪৪টি বেড়ে হয়েছে ১১ লাখ ৯৯ হাজার ১৪৮টি। নারী ও পুরুষ মিলে বিও হিসাব ১৩ হাজার ৬৬৬টি বেড়ে এখন ১৬ লাখ ৬৪ হাজার ৬৮৪টি।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর পুঁজিবাজারে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়তে দেখা গেলেও তার আগে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়েছেন। চলতি বছরের শুরুতে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিল ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫১টি। আর বর্তমানে বিও হিসাব আছে ১৬ লাখ ৮২ হাজার ১৭০টি। অর্থাৎ চলতি বছরে বিও হিসাব কমেছে এক লাখ এক হাজার ৩৮১টি।
বিও হিসাব শেয়ার ও ব্যালেন্স শূন্য হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, চার কারণে আজ এই অবস্থা। গত এক দুই বছরে কোনো আইপিও বা প্রাথমিক শেয়ার আবেদন আসেনি বাজারে। পুঁজিবাজারে কোনো শেয়ার বা ইউনিটের সরবরাহ নেই। উচ্চ সুদ হার এবং মূল্যস্ফীতির নাভিশ^াস। তিনি বলেন, আমাদের ইক্যুইটি বাজারে নেতিবাচক রিটার্ন। ফলে সব ধরনের বিনিয়োগকারী ইক্যুইটি ছেড়ে বা বিক্রি করে দিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। তারা মানি মার্কেটে চলে গেছে। তার মতে, তারা আইপিও আবেদন করে শেয়ার পেলে বেশ কিছুদিন ধরে রাখে। আইপিও নাই, উচ্চ সুদ হার, নেতিবাচক রিটার্ন সাথে যুক্ত হয়েছে মূল্যস্ফীতি। ফলে মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য জীবন চালানো চালেঞ্জ। ফলে তারা খরচ চালাতে শেয়ারকে ছেড়ে টাকা তুলে নিচ্ছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা