পতনে অস্থিরতা বৃদ্ধি : শেয়ার বিক্রিতে মরিয়া বিনিয়োগকারী
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
- বিক্রির চাপ ৭৪ শতাংশ বিপরীতে ক্রেতা ২৬ শতাংশ
- বি ও এন শ্রেণীর কোম্পানির শেয়ার ক্রেতাশূন্য
সব উদ্যোগ বিফলে। অব্যাহত পতনে অস্থিরতায় দেশের পুঁজিবাজার। এ অস্থিরতা বিনিয়োগকারীদের ঘুমকে হারাম করছে। পতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারেনি দেশের শেয়ারবাজার। গত সপ্তাহে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর চলতি সপ্তাহে আবারো টানা পতনের প্রবণতা দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগ বাঁচাতে শেয়ার বিক্রিতে ৭৪ শতাংশ বিনিয়োগকারী মরিয়া হয়ে উঠেছে। বছর শেষকে সামনে রেখে সূচক এবং লেনদেন কমলো। ঢাকার শেয়ার বাজারের প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) নিম্নমুখী ছিল। ডিএসইর মূলধন গত দিনের তুলনায় ০.২৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যেখানে ভলিউম ৩ শতাংশ এবং টার্নওভার ৩ শতাংশ কমেছে। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে ৪টি সেক্টরের শেয়ার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ১৫ সেক্টরের শেয়ার মূল্য হ্রাস পেয়েছে।
লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইর লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ায় একপর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ২৪ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে প্রথম আধা ঘণ্টার লেনদেন শেষ হতেই অর্থাৎ বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বাজার নেতিবাচক ছিল। বাজারের চিত্র বদলে যায়। দাম বাড়ার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম কমার প্রবণতা অব্যাহত থাকে। ফলে এক দিকে দাম কমার তালিকা বড় হয়, অন্য দিকে সব ক’টি মূল্যসূচক কমেই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
ডিএসইর ডিএসইএক্স রোববারের চেয়ে আরো ২৫.৬২ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৭০.৭৯ পয়েন্টে, ডিএসই-৩০ সূচক ১৩.০৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯২২.১১ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক (ডিএসইএস) ৬.২৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৫৫.৯০ পয়েন্টে নেমেছে। লেনদেনকৃত ৩৯৬টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৯৯টির বা ২৫ শতাংশের, দর কমেছে ২১৬টির বা ৫৪.৫৪ শতাংশের এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৮১টি কোম্পানির। মোট ৩৯৬টি কোম্পানির ১০ কোটি ৬২ লাখ ৩৪ হাজার ২৫৪টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে। যার গতকালের বাজারমূল্য ৩০৩ কোটি ২৭ লাখ ৩৬ হাজার ৮২৯ টাকা। রোববার লেনদেন ৩১২ কোটি ৯১ লাখ টাকার। ফলে লেনদেন কমেছে ৯ কোটি টাকা।
টাকায় লেনদেন, দর বৃদ্ধি ও পতনে শীর্ষ ১০ : ডিএসইর দেয়া তথ্য বলছে, গতকাল টাকায় লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ ১০টি কোম্পানি হলো : ওরিয়ন ইনফিউশন, বিএসসি, ফাইন ফুডস, যমুনা অয়েল, রবি এক্সিয়াটা, খান ব্রাদার্স পিপি, আইসিবি, জিপিএইচ ইস্পাত, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মি. ফা. ও রূপালী লাইফ ইন্স্যু.। আর দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০টি কোম্পানি হলো : গোল্ডেন হারভেস্ট, মুন্নু অ্যাগ্রো, সিম টেক্স, দেশবন্ধু পলিমার, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মি. ফা., বিবিএস, সেন্ট্রাল ইন্স্যু., সোনারগাঁও টেক্সটাইল, মেঘনা সিমেন্ট ও ডেফোডিল কম্পিউটার। দর পতনে শীর্ষে ১০টি কোম্পানি হলো : বিডি ওয়েল্ডিং, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, সাফকো স্পিনিং, আইসিবি, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, মেঘনা পেট, আইসিবি এমপ্লয়ী মি.ফা-১ স্কিম-১, নিউ লাইন,এওএলও পিপলস লিজিং।
ব্লক মার্কেটে ২৫ কোম্পানি : এ দিকে ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল ২৫টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের এক কোটি ১৩ লাখ ৫১ হাজার ৮১৬টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ২২ কোটি ৩৬ লাখ ২৩ হাজার টাকায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হতে দেখা গেছে ছয় প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, রেনাটা লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মা, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স এবং আলহাজ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড। এই ছয় প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকারও বেশি।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের। এ দিন ব্যাংকটির সাত কোটি ৩১ লাখ ৫১ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। রেনাটা লিমিটেডের ছয় কোটি ৫৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর দুই কোটি ৩০ লাখ ৭১ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে বেক্সিমকো ফার্মা। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের এক কোটি ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের ৮৩ লাখ টাকা এবং আলহাজ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের ৭৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
সিএসইতে বেচাকেনা ১২৪ কোটি টাকা অতিক্রম :এ দিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সবগুলো সূচক থেকে গতকালও পয়েন্ট খোয়া গেছে। সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৩.৪১ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৫৬.৪৭ পয়েন্ট এবং সিএসসিএক্স ৯.২৪ পয়েন্ট কমেছে। লেনদেনে অংশ নেয়া ২০২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১১টির এবং ৩৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তিন কোটি ৩৯ লাখ ৬৬ হাজার ৬৪৪টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে ১২৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা। রোববার লেনদেন হয় ১১৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ফলে পতনেও বেচাকেনা ৯ কোটি টাকা বেড়েছে।
ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ১৫ লাখ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা : এ দিকে তালিকাভুক্ত আইসিবির করপোরেট উদ্যোক্তা পরিচালক ১৫ লাখ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তথ্যটি প্রকাশ করেছে। করপোরেট উদ্যোক্তা পরিচালক বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের কাছে কোম্পানির ২১ কোটি ৮৪ লাখ ৮৮ হাজার ৭৯৯টি শেয়ার রয়েছে। এখান থেকে এই করপোরেট উদ্যোক্তা পরিচালক ১৫ লাখ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে। আগামী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে ঘোষণাকৃত শেয়ার বিক্রি সম্পন্ন করবে এই করপোরেট উদ্যোক্তা পরিচালক।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা