উত্থান টেকসই হলো না : পতনে ৬৪ ভাগ
পুঁজিবাজারে ১৬ পয়েন্ট হারাতেই বিক্রির চাপ ৫৩ শতাংশে- বিশেষ সংবাদদাতা
- ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
দুই দিনের বেশি উত্থান টেকসই হলো না। টিকে থাকতে পারল না উত্থানের পথে। তৃতীয় দিনে এসেই ১৬ পয়েন্টের বেশি হারাতে হলো। আর পতনের শিকার হলো ৬৪ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার। টাকা ও শেয়ার লেনদেনও কমেছে। বি, এন ও জেড শ্রেণীর কোম্পানির শেয়ারগুলো ছিল বিক্রির চাপে। পতনের আগের দিন যেখানে ১২ শতাংশ বিক্রেতা ছিল সেখানে পতনের ফলে গতকাল এটা ৫৩ শতাংশে উন্নীত হলো। ক্রেতার চাপও ৮৮ শতাংশ থেকে কমে এখন ৪৭ শতাংশে নেমেছে। কিন্তু চট্টগ্রামের বাজারে লেনদেন বেড়েছে, যা ঢাকায় উল্টো কমেছে।
লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইতে মূল্যসূচকের মিশ্রাবস্থার মধ্য দিয়ে চলে লেনদেন। তবে বেড়েছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর। ডিএসইর লেনদেন শুরুর দেড় ঘণ্টায় অর্থাৎ বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান সূচক বা ‘ডিএসইএক্স’ ০৩.৭৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ৫ হাজার ২২০ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক বা ‘ডিএসইএস’ ০.৩৯ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১৬৭ পয়েন্টে আর ‘ডিএসই-৩০’ সূচক ৩.২১ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯৩২ পয়েন্টে চলে আসে। লেনদেনের দেড় ঘণ্টায় ডিএসইতে মোট ১৫৬ কোটি ১৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। ডিএসইতে যে পরিমাণ প্রতিষ্ঠানের দাম বেড়েছে তার চেয়ে তিন গুণের বেশি পরিমাণ প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে।
আর দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স (ডিএসইএক্স) মঙ্গলবারের চেয়ে সূচক ১৬.৩৮ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ২০৮.২১ পয়েন্টে, ডিএসই-৩০ সূচক ০.৫৬ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯৩০.০৬ পয়েন্টে এবং ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক (ডিএসইএস) ৩.৮০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৬২.৯৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। লেনদেনকৃত ৪০৩টি কো¤পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৭৯টির বা ১৯.৬০ শতাংশের, দাম কমেছে ২৫৮টির বা ৬৪.০১ শতাংশের এবং দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৬টি কোম্পানির শেয়ার। মোট ৪০৩টি কো¤পানির ১৩ কোটি ৪৯ লাখ ৪৪ হাজার ৫৫২টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে ৪০২ কোটি ৪৩ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯৭ টাকা বাজারমূল্যে। টাকা ও শেয়ার লেনদেন মঙ্গলবারের চেয়ে কমেছে। মঙ্গলবার ৪৫০ কোটি ১৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়। ফলে গতকাল ৪৮ কোটি টাকা লেনদেন কম হয়েছে। আর বাজারমূলধন ০.০১ শতাংশ কমে এখন ছয় লাখ ৫৯ হাজার ৫৮৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকায় অবস্থান করছে।
টাকায় লেনদেন, দর বৃদ্ধি ও পতনে শীর্ষ ১০ : ডিএসইর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ডিএসইতে টাকায় লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ ১০টি কোম্নপানি হলো- রবি এক্সিয়াটা, একমি ল্যাব, বিএসসি, স্কয়ার ফার্মা, অগ্নি সিস্টেম, জিপি, ড্রাগন সোয়েটার, ওরিয়ন ইনফিউশন, বেক্সিমকো ফার্মা ও ফাইন ফুডস। আর দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০টি কো¤পানি হলো- আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, পাওয়ার গ্রিড, রবি এক্সিয়াটা,আল-হাজ টেক্স, দেশ গার্মেন্ট, আইএসএন লিমিটেড, মিডল্যান্ড ব্যাংক, আইএফআইসি প্রথম মি. ফা., এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স ও আমান ফিড। এ ছাড়া দর পতনের শীর্ষ ১০টি কোম্পানি হলো- সাফকো স্পিনিং, কেপিপিএল, ফ্যামিলি টেক্স, ইনডেক্স অ্যাগ্রো, এইচআর টেক্স, নিউ লাইন, হামি ইন্ডা:, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, এওএল ও জুট স্পিনার্স।
ব্লক মার্কেটে ১৯ কোম্পানি : ডিএসই’র ব্লক মার্কেটে ১৯টি কোম্পানির মোট ১৪ লাখ ২৫ হাজার ৩৫৬টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড হতবদল হয়েছে মোট ১০ কোটি ১১ লাখ ৫৪ হাজার টাকায়। এর মধ্যে পাঁচ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হতে দেখা গেছে। এই পাঁচ প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে সাত কোটি ৯২ লাখ টাকারও বেশি। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- বিকন ফার্মা, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, ফাইন ফুডস, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ এবং ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বিকন ফার্মার। কোম্পানিটির চার কোটি ৪৯ লাখ ২৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের এক কোটি ২৬ লাখ ৪২ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর এক কোটি দুই লাখ ৬১ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে ফাইন ফুডস। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে- এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের ৬৭ লাখ ৪১ হাজার টাকা এবং ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেডের ৪৭ লাখ ২৪ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
পতনেও চট্টগ্রামে লেনদেন বাড়ল : এ দিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের পতনেরও লেনদেন বেড়েছে আগের দিনের তুলনায় সোয়া পাঁচ কোটি টাকার। সবগুলো সূচকই পতনের কবলে ছিল। সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৮ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক কমেছে ৪৪.১০ পয়েন্ট এবং সিএসসিএক্স ১১.৫২ পয়েন্ট।
প্রধান সূচক সাড়ে ১৪ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছে। লেনদেনে অংশ নেয়া ১৮৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯২টির বা ৪৮.৯৩ শতাংশের এবং ৩১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ৩২ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫১টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি দুই লাখ ৪৮ হাজার ৭১৭ টাকায়। মঙ্গলবার লেনদেন হয় ৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ফলে লেনদেন কমেছে পাঁচ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দিন শেষে বাজার নেতিবাচক ছিল। গত দুই দিন ইতিবাচক থাকার পর পতনে। শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক দুটো নিম্নমুখী ছিল এবং ডিএসইর মূলধন গত দিনের তুলনায় ০.০১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যেখানে ভলিউম ৮ শতাংশ এবং টার্নওভার ১১ শতাংশ কমেছে। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে তিনটি সেক্টরের শেয়ার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ১৬ সেক্টরের শেয়ার মূল্য হ্রাস পেয়েছে।