মামলার জালে অরক্ষিত বাকল্যান্ড বাঁধ শুল্ক আদায় কেন্দ্র, নেপথ্যে শাজাহান খানের চক্র
টেন্ডার হয় না ৪ বছর- রাকিব হোসেন
- ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:৪৮
ঢাকা শহর রক্ষা বাকল্যান্ড বাঁধ শুল্ক আদায় কেন্দ্র দীর্ঘ দিন ধরে অরক্ষিত রয়েছে। মামলা করে বিনা টেন্ডারে দখল করে রেখেছে সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের আত্মীয় ও আওয়ামী লীগের কিছু সন্ত্রাসী। গত চার বছর টেন্ডার না হওয়ায় সরকার রাজস্ব হারিয়েছে কমপক্ষে চার থেকে ছয় কোটি টাকা। বিআইডব্লিউটিয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, মামলা থাকায় ওপেন টেন্ডার দেয়া যাচ্ছে না। অন্য দিকে বিনা টেন্ডারে দখলদার বিআইডব্লিউটিয়ের ধার্যকৃত টাকা পরিশোধ করে দখলে রেখেছে বাকল্যান্ড বাঁধ শুল্ক আদায়, কেন্দ্রসহ ছয়টি ঘাট। এলাকাবাসীর দাবি বিআইডব্লিউটিয়ের অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে আঁতাতের মাধ্যমে দখলদার মামলা দিয়ে এলাকাটি দখলে রেখেছে। রয়েছে ঘাট শ্রমিক দলের সখ্যতা।
গতকাল ঢাকার সদরঘাট এলাকায় বুড়িগঙ্গার তীরে ঢাকা শহর রক্ষা বাঁধ বাকল্যান্ড বাঁধ এলাকা ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সরজমিন দেখা যায়, ঢাকার সদরঘাট বিআইডব্লিউটিএ টার্মিনালের পশ্চিম পাশে রয়েছে, বিনয় স্মৃতি শ্মশানঘাট। তার এক কিলোমিটার পশ্চিমে বিআইডব্লিউটিসির ঘাট। মধ্যখানে রয়েছে বিনয় স্মৃতি শ্মশানঘাট, বিআইডব্লিউটিসির ওয়াটার বাস ঘাট, নবাববাড়ি পন্টুন , নবাব বাড়ি মসজিদ ঘাট, বাদামতলী ফলঘাট ও বাদামতলী কলাঘাট। এই ঘাটগুলোতে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে একটি মহলের নিয়োগকৃত লোকজন। স্থানীয়রা বলছে, যারা চাঁদা আদায় করছে তারা সবাই সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের আত্মীয় মোকসেদ খান, হারুন অর রশিদ ও করিম শেখ। পাশেই রয়েছে বাকল্যান্ড বাঁধ শুল্ক আদায় কেন্দ্রের দু’টি জেটি। যেখানে বাদামতলি ফল ব্যবসায়ীদের শ্রমিকরা ট্রাকে বসে গলা হাঁকিয়ে ফল নিলামে বিক্রি করছেন। এ সময় একজন ফল বিক্রেতাকে নিলাম সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম না বলা শর্তে তিনি জানান, যেসব ফলে সামান্য পচন ধরেছে অথবা বেশি দিন রাখা সম্ভব নয়, সেসব ফলগুলো তারা নিলামে বিক্রি করেন। এ জন্য তাদেরকে ট্রাকপ্রতি তিন হাজার টাকা করে পরিশোধ করতে হয় বাকল্যান্ড বাঁধ শুল্ক আদায় কেন্দ্র ইজারাদারকে। কে এই ইজারাদার জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমলে সাবেক নৌ ও পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের আত্মীয় মোকসেদ খানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান করিম শেখ বাকল্যান্ড বাঁধ শুল্ক আদায় কেন্দ্র ইজারা নেন। এরপর থেকে ঘাট ও জেটি যাতে অন্য কেউ ইজারা নিতে না পারে সে জন্য বিআইডব্লিউটিয়ের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে আদালতে মামলা করেন। গত চার বছর মামলার জালে ফেলে বিনা টেন্ডারে করিম শেখ বাকল্যান্ড বাঁধ শুল্ক আদায় কেন্দ্রসহ অত্র এলাকার এক কিলোমিটারের ভেতরে আরো ছয়টি নৌঘাট দখলে রেখে চাঁদা আদায় করেছেন। ওই নৌঘাট ও শুল্ক আদায় কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন দুই লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় হয়। ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর সুচতুর করিম শেখ জাতীয় ঘাট শ্রমিক দলের সভাপতি সুমন ভূঁইয়া ও বাদামতলী ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি হারুনুর রশিদকে পার্টনার বানিয়ে বাকল্যান্ড বাঁধ শুল্ক আদায় কেন্দ্রসহ স্থানীয় ছয়টি নৌঘাট দখলে রাখেন। মামলা করে মামলার বেড়াজালে সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাদামতলী এলাকায় নিজের অস্তিত্বকে আরো পাকাপোক্ত করেন ।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ-এর সদরঘাট অফিসে যোগাযোগ করা হলে বিআইডব্লিউটিএ-এর পোর্ট অফিসার কবির হোসেন জানায়, বাকল্যান্ড বাঁধ শুল্ক আদায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ইজারাদার করিম শেখের মামলা রয়েছে। যে কারণে বাকল্যান্ড বাঁধ শুল্ক আদায় কেন্দ্র দীর্ঘ দিন ধরে ওপেন ইজারা দেয়া যাচ্ছে না। আদালত সূত্রে জানা যায়, ইজারাদার করিম শেখ সর্বশেষ ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাকল্যান্ড বাঁধ শুল্ক আদায় কেন্দ্র এক কোটি সাত লাখ টাকায় এক বছরের জন্য ইজার পান। ২০২২ সালে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মর্মে আদালতে মামলা করেন । যার দেওয়ানি মামলা নম্বর ৮৭/২২। এরপর মামলার রেফারেন্সে বিআইডব্লিউটিয়ের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বদৌলতে মাত্র ৯২ লাখ টাকায় ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বিনা টেন্ডারে বাকল্যান্ড বাঁধ শুল্ক আদায় কেন্দ্রের ইজারা ভাগিয়ে নেন। যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে টেন্ডার দেখানো হয় এক কোটি ২০ লাখ টাকা এবং ২০২৪ -২৫ অর্থবছরে নির্ধারণ করা হয়েছে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা।
বাকল্যান্ড বাঁধ শুল্ক আদায় কেন্দ্রের এলাকাবাসী বলছে, বাদামতলী ফলের আরত এলাকায় বিআইডব্লিউটিয়ের বাকল্যান্ড বাঁধ শুল্ক আদায় কেন্দ্রটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিনা টেন্ডারে ইজারা দেয়ায় এখান থেকে সরকার প্রতি বছর এক থেকে দেড় কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। গত চার বছরে কমপক্ষে সরকার চার থেকে ছয় কোটি টাকা এই ঘাট থেকে রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ মতিঝিল প্রধান কার্যালয়ের আইন বিভাগ ও বন্দর পরিচালক আরিফ উদ্দিন জানান, আদালতে বিআইডব্লিউটিএ-এর পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করছেন তাদের নিজস্ব তালিকাভুক্ত আইনজীবী অ্যাডভোকেট সোহেল আহমেদ। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষী পর্যায়ে আছেন এবং আগামী ৫ জানুয়ারি পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ রয়েছে। আইনজীবী সোহেল বলছেন, মামলাটি তদবির করা হলে দ্রুত নিষ্পত্তির সম্ভব কিন্তু বিআইডব্লিউটিয়ের গাফেলতির কারণে এটি নিষ্পত্তি হতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।
এ ব্যাপারে ইজারাদার করিম শেখ চিকিৎসার জন্য ভারতে থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। করিম শেখের ৫ আগস্ট পরবর্তী পার্টনার জাতীয় ঘাট শ্রমিক দলের সভাপতি সুমন ভূঁইয়ার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সাংবাদিক পরিচয় মেসেজ দেয়া হলেও মেসেজের উত্তর দেননি। অন্য দিকে অন্যতম দখলদার ফল ব্যবসায় হারুন অর রশিদ ও মোকসেদ খানের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা থাকায় তারা পলাতক রয়েছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা