পতনের মাত্রা কমলেও পুঁজি হারানোর আতঙ্ক অব্যাহত
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
- দর বৃদ্ধিতে বস্ত্র ও বীমা খাতের শেয়ারের প্রাধান্য
- একদিনে বাজারমূলধন ৫৭ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা কমলো
- বিক্রির চাপ ৫২ শতাংশ, কেনার চাপ ৪৮ শতাংশ
দেশের পুঁজিবাজারে সূচক ও দর পতনের মাত্রা কিছুটা কমলেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিনিয়োগকৃত অর্থ বা পুঁজি হারানোর আতঙ্ক এখন বিরাজমান। পতনের কবল থেকে বাজার বের হতে পারছে না। লেনদেনের সূচনা উত্থান দিয়ে হলেও শেষ পর্যন্ত পতনের কাছেই হার মানতে হচ্ছে। দুই বাজারে লেনদেনে টাকার পরিমাণ সোমবারের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। তবে পতনের শিকার বেশির ভাগ কোম্পানি। মূল্য বাড়ার তালিকায় বস্ত্র খাতের শেয়ারের পাশাপাশি বীমা খাতের শেয়ারের প্রাধান্য দেখা গিয়েছে। সোমবারের তুলনায় ডিএসইতে লেনদেন ১০৪ কোটি টাকা বেড়েছে। তবে ডিএসইর বাজারমূলধন ৮.০১ শতাংশ বা ৫৭ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা কমেছে। ডিএসইতে শেয়ার বিক্রির চাপ ৫২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তবে কেনার চাপ ৪৮ শতাংশে এসেছে।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডিএসইর দিনের লেনদেন শুরুটা ভালোই থাকে। প্রথম ঘণ্টায় অর্থাৎ বেলা ১১টায় পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান সূচক বা ‘ডিএসইএক্স’ ২৫.৪১ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ১৯২ পয়েন্টে উন্নীত হয়। শরিয়াহ সূচক বা ‘ডিএসইএস’ ৮.৮৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৬২ পয়েন্টে আর ‘ডিএস-৩০’ সূচক ৭.৭৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯১১ পয়েন্টে উন্নীত হয়। ১১টা পর্যন্ত ডিএসইতে মোট ৮২ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ২৬৬টির, দর কমে ৪৪টির এবং দর অপরিবর্তিত ৬২টি কোম্পানির। আর দিনশেষে ডিএসইর ডিএসইএক্স আরো ০.১৫ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৬৬.৮৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক আরো ০.৪৩ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৯০৩.৬২ পয়েন্টে নেমেছে। আর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস সোমবারের চেয়ে ০.৪২ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১৫৪.৫৪ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। লেনদেনকৃত ৪০৫টি কো¤পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৮৫টির বা ৪৫.৬৭ শতাংশের, দর পতনে ১৪৭টি বা ৩৬.২৯ শতাংশ এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৭৩টি কোম্পানির শেয়ার। মোট ৪০৫টি কো¤পানির ১৬ কোটি ৩২ লাখ ৯৩ হাজার ১৭১টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে মোট ৩৮৩ কোটি ৪ লাখ ৭৩ হাজার ১৪ টাকা বাজারমূল্যে।
লেনদেন, দর বৃদ্ধি ও পতনে শীর্ষ ১০ কোম্পানি: ডিএসইতে গতকাল টাকায় লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ ১০টি কো¤পানি হলো : সায়হাম কটন, বেক্সিকো ফার্মা, ওরিয়ন ইনফিউশন, তৌফিকা ফুড, এশিয়াটিক ল্যাব., ড্রাগন সোয়েটার, নিউ লাইন, এনআরবি ব্যাংক, আইসিবি ও ব্র্যাক ব্যাংক।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০টি কো¤পানি হলো : সায়হাম টেক্স, সায়হাম কটন, তাক্কাফুল ইন্সু:, প্যারামাউন্ট টেক্স, মোজাফ্ফর হোসেন স্পিনিং, ক্রিস্টাল ইন্সু:, আইসিবি এমপ্লয়ি প্রভিডেন্ট মি. ফা-১, ভ্যানগার্ড এএমএল বিডি মি. ফা.১, মেঘনা ইন্সু: ও ফিনিক্স ইন্সু:।
আর দর পতনে শীর্ষ প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো : আলিফ ইন্ডা:, এমারেল্ড অয়েল, ওরিয়ন ইনফিউশন, খান ব্রাদাস পিপি, তৌফিকা ফুড, রূপালী লাইফ ইন্সু:, সিনোবাংলা ইন্ডা:, মুন্নু সিরামিকস, প্রাইম ফা: ফার্স্ট মি. ফা ও জেনেক্স ইনফোসিস।
ব্লক মার্কেটে ২৪ কোম্পানি: ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল ২৪টি কোম্পানির মোট ৬৬ লাখ ৯৭ হাজার ৭৭২টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে। যার গতকালের বাজারমূল্য ছিল ১২ কোটি ৬৯ লাখ ৩১ হাজার টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে পাঁচ প্রতিষ্ঠানের। এই পাঁচ প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকারও বেশি। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, জিপিএইচ ইসপাত, সেন্ট্রাল ইন্সুরেন্স এবং রিলায়্যান্স ওয়ান দ্য ফার্স্ট স্কিম অব রিলায়্যান্স ইন্সুরেন্স মিউচুয়াল ফান্ড। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের। ব্যাংকটির ৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আইডিএলসি ফাইন্যান্সের ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর ১ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে জিপিএইচ ইসপাত। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে- সেন্ট্রাল ইন্সুরেন্সের ৬৭ লাখ ৩০ হাজার টাকার এবং রিলায়্যান্স ওয়ান দ্য ফার্স্ট স্কিম অব রিলায়্যান্স ইন্সুরেন্স মিউচুয়াল ফান্ডের ৬৪ লাখ ২২ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
সিএসইতে সূচকের পতনেও লেনদেন বৃদ্ধি: এ দিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধানসহ দুটি সূচকের পতন অব্যাহত রয়েছে। তবে বেড়েছে লেনদেনে টাকার পরিমাণ। সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৩১.৭৮ পয়েন্ট এবং সিএসসিএক্স ১৬.১৪ পয়েন্ট। তবে সিএসই-৩০ সূচকে ৫৩.০২ পয়েন্ট ফিরেছে। লেনদেনে অংশ নেয়া ২০৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৭টির এবং ৩৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ২৬ লাখ ৭৭ হাজার ৪৩৫টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৯৭ লাখ ৩৬ হাজার ১২৬ টাকায়। সোমবার লেনদেন হয় ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ফলে লেনদেন বেড়েছে ৭২ লাখ টাকা।
একমির ২২ লাখ শেয়ার বিক্রি: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একমি ল্যাবরেটরিজের পারভিন আক্তার খানম নামের উদ্যোক্তা ২২ লাখ শেয়ার বিক্রি সম্পন্ন করেছেন বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে। কোম্পানির উদ্যোক্তা পারভিন আক্তার খানমের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ২২ লাখ শেয়ার বিক্রি সম্পন্ন করেছেন। এর আগে গত ২ ডিসেম্বর এবং ৪ ডিসেম্বর শেয়ারগুলো বিক্রির ঘোষণা দিয়েছিলেন এই উদ্যোক্তা।
দর বৃদ্ধির কারণ জানে না মিরাকল: আর তালিকাভুক্ত কোম্পানি মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড অস্বাভাবিকভাবে শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণ জানে না বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) জানিয়েছে কোম্পানিটি। কোম্পানিটির শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে সম্প্রতি নোটিশ পাঠিয়েছে ডিএসই। এর জবাবে কোম্পানিটি জানায় কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ার দর বাড়ছে।
রয়্যাল ক্যাপিটাল বলছে, আশা জাগিয়েও নিরাশ করলো বাজার। সারা দিন ইতিবাচক থাকলেও দিনশেষে নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে বাজার শেষ হয়েছে। বাজার লেনদেন ১০৪ কোটি টাকা বেড়ে ৩৮৩ কোটি টাকায় হয়েছে। মূলধন গত দিনের তুলনায় ৮.০১ শতংশ হ্রাস পেয়েছে। যেখানে ভলিউম ২৮ শতাংশ এবং টার্নওভার ৩৭ শতাংশ বেড়েছে। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে ৭টি সেক্টরের শেয়ার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ১২টি সেক্টরের শেয়ার মূল্য হ্রাস পেয়েছে। ব্লক মার্কেটে ১২.৬ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা মোট লেনদেনের ৩.৩১ শতাংশ। এসএমই বাজার সূচক (ডিএসএমইএক্স) ৬.৬ পয়েন্ট কমে ১১০৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৩.১ কোটি টাকা, যা গত দিনের তুলনায় ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।