উত্থানের পুঁজিবাজারেও ৫২.২৮ শতাংশ কোম্পানি দর পতনে
খারাপ কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে পুঁজিবাজারের এই দশা : ডিএসই- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
দুই দিন ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর পুঁজিবাজারে গতকাল বেশির ভাগ কোম্পানি দরপতনের শিকার হয়। তবে সূচক কিছুটা বেড়েছে। এখনো শেষ হয়নি পতনের সম্ভাবনা। বেচা ও কেনার চাপ প্রায় সমান সমান ছিল। বি ও এন শ্রেণীর কোম্পানির শেয়ারের কোনো ক্রেতা না থাকলেও বিক্রেতা ছিল সরব। ৫১ শতাংশ বিক্রির চাপের বিপরীতে ৪৯ শতাংশ ছিল কেনার আগ্রহ। সার্বিকভাবে ডিএসইর বাজারমূলধন কমেছে ০.০৬ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতীতে বেশ কিছু খারাপ কোম্পানি তালিকাভুক্ত হবার কারণে শেয়ারবাজার বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে। আশা করি আগামীতে ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হবে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল লেনদেন শুরুর প্রথম দেড় ঘণ্টায় বেড়েছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান সূচক বা ‘ডিএসইএক্স’ সূচক ১৪.৮৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৫ হাজার ২৪০ পয়েন্টে। আর শরিয়াহ সূচক ‘ডিএসইএস’ ১.৩৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৭৫ পয়েন্টে এবং ‘ডিএসই-৩০’ সূচক ৭.৮৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১ হাজার ৯২৯ পয়েন্টে। দেড় ঘণ্টায় ডিএসইতে ১৮৫ কোটি ৩১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
দিনশেষে ডিএসইএক্স মঙ্গলবারের চেয়ে সূচক ১২.৩২ পয়েন্ট বেড়ে পাঁচ হাজার ২৩৮.৩৭ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৬.৭২ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯২৭.৮৮ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। আর ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ২.২৯ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৭২.২৫ পয়েন্টে নেমেছে। লেনদেনকৃত ৩৯৪ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৩৯টির বা ৩৫.২৭ শতাংশের, দর পতনের শিকার ২০৬টি বা ৫২.২৮ শতাংশ এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৯টি কোম্পানির শেয়ার। ৩৯৪টি কোম্পানির ২১ কোটি ৮৩ লাখ ৪৩ হাজার ৫৪১টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে। যার গতকালের বাজারমূল্য ৪৭৬ কোটি ৫১ লাখ ৩২ হাজার ৪১৯ টাকা। মঙ্গলবারের তুলনায় এই লেনদেন ৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা কম। মঙ্গলবার মোট ৫১২ কোটি ৪৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়।
লেনদেন, দর বৃদ্ধি ও পতনে শীর্ষ ১০ : ডিএসইতে গতকাল টাকায় লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ ১০টি কোম্পানি হলো : এনআরবি ব্যাংক, ই-জেনারেশন, জেনেক্স ইনফোসিস, স্কয়ার ফার্মা, এশিয়াটিক ল্যাব:, বিএসসি, আইসিবি, ড্রাগন সোয়েটার, অগ্নি সিস্টেম ও জিপি। আর দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০টি কোম্পানি হলো : আইসিবি এএমসিএল সোনালি ব্যাংক মি. ফা., ফার্স্ট জনতা ব্যাংক মি. ফা., জুবলী মি. ফা., ইবিএল এনআরবি মি. ফা., এলআর গ্লোবাল মি. ফা-১, আইসিবি এএমসিএল ফার্স্ট অগ্রনী মি. ফা., সিএপিএম বিডিবিএল মি. ফা., ইবিএল ফার্স্ট মি. ফা., এসইএমএল লেকচার ইকুইটি মি. ফা. ও গ্রামীন ওয়ার স্কিম-২। তবে দর পতনে শীর্ষ ১০টি কোম্পানি হলো : এমারেল্ড অয়েল, জুট স্পিনার্স, এইচ আর টেক্স, পদ্মা অয়েল, দেশবন্ধু পলিমার, বিবিএস, সিএনএ টেক্স, কনফিডেন্স সিমেন্ট, হামিদ ফেব্রিকস ও মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজ।
ব্লক মার্কেটে ৩৫.৯০ কোটি টাকার ট্রেড : এ দিকে ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল ৩৩টি প্রতিষ্ঠান এক কোটি ১৯ লাখ চার হাজার ৮৭২টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে। যার বাজারমূল্য ছিল ৩৫ কোটি ৯০ লাখ ১১ হাজার টাকা। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে পাঁচ প্রতিষ্ঠানের। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- একমি ল্যাবরেটরিজ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ম্যারিকো বাংলাদেশ, ডমিনেজ স্টিল এবং রিলায়েন্স ওয়ান দ্য ফার্স্ট স্কিম অব রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স মিউচুয়াল ফান্ড। এই পাঁচ প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৯ কোটি ৩ লাখ টাকারও বেশি। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে একমি ল্যাবরেটরিজের। কোম্পানিটির ১৩ কোটি ৪০ লাখ ১০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ৬ কোটি ৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৩ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে ম্যারিকো বাংলাদেশ। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে- ডমিনেজ স্টিলের ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকার এবং রিলায়েন্স ওয়ান দ্য ফার্স্ট স্কিম অব রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স মিউচুয়াল ফান্ডের ১ কোটি ৪৭ লাখ ১১ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একমি ল্যাবরেটরিজের উদ্যোক্তা পারভিন আক্তার খানম ২০ লাখ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে বলে ডিএসই জানিয়েছে। কোম্পানির উদ্যোক্তা পারভিন আক্তার খানমের কাছে ৬৫ লাখ ১৯ হাজার ১৫৮টি শেয়ার রয়েছে। এখান থেকে তিনি ২০ লাখ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে শেয়ারগুলো বিক্রি সম্পন্ন করবেন এই উদ্যোক্তা।
হিমাদ্রি নিয়ে ডিএসইর সতর্কবার্তা : তালিকাভুক্ত এসএমই খাতের হিমাদ্রি লিমিটেডের শেয়ার দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে বলে ডিএসই মনিটরিংয়ে উঠে এসেছে। ফলে কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগের আগে বিনিয়োগকারীদের সচেতন হওয়া উচিত বলে প্রতিষ্ঠানটি সতর্কবার্তা জারি করেছে। ডিএসই জানিয়েছে, কোম্পানির শেয়ার দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে ডিএসই কর্তৃপক্ষ কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠায়। ডিএসইর চিঠির উত্তরে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে ৩ ডিসেম্বর জানিয়েছে, কোনো রকম অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ারটির দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২১ নভেম্বর হিমাদ্রি লিমিটেডের শেয়ার দাম ছিল ৯৯৭ টাকা ৪০ পয়সায়, যা ৩ ডিসেম্বর লেনদেন শেষে ক্লোজিং দাম হয়েছে ১ হাজার ৫২৪ টাকা ৭০ পয়সায়। কোম্পানিটির শেয়ার দাম এভাবে বাড়াকে অস্বাভাবিক মনে করছে ডিএসই।
সিএসইতে সূচক বৃদ্ধিতে সেঞ্চুরি : চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৪২ পয়েন্ট। তবে সিএসই-৩০ সূচক ১১৪.৮১ পয়েন্ট এবং সিএসসিএক্স ৩২.২১ পয়েন্ট বেড়েছে। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৩৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১১টির এবং ২২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ২৫ লাখ ৮১ হাজার ২২৮টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। মঙ্গলবার লেনদেন হয় ৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ফলে লেনদেনে কমেছে এক কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
বিশ্লেষকদের বাজার পর্যালোচনা : ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমনের অভিমত হলো, গত ১৫ বছরে শেয়ারবাজারে অনেক নিম্নমানের আইপিও এসেছে, যা শেয়ারবাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এ জন্য নিম্নমানের আইপিও বন্ধের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ করা হয়েছে। যেটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
রয়্যাল ক্যাপিটাল ফিনান্সিয়াল পোর্টালের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, সূচক কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও কমেছে লেনদেন। টেকনিক্যাল চাট অনুযায়ী আজ সূচক একটি গুরুত্বপূর্ণ সাপোর্ট লেভেলে এসে শেষ হয়েছে। তবে পুনরায় পতনের সম্ভাবনা এখনো শেষ হয়নি। ঢাকার শেয়ার বাজারের প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) ঊর্ধ্বমুখী ছিল। মূলধন গত দিনের তুলনায় ০.০৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যেখানে ভলিউম ১ শতাংশ এবং টার্নওভার ৭ শতাংশ কমেছে। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে ৫টি সেক্টরের শেয়ার মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে এবং ১৪টি সেক্টরের শেয়ার মূল্য হ্রাস পেয়েছে। এসএমই বাজার সূচক (ডিএসএমইএক্স) ১৫ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১০৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৯.৯ কোটি টাকা। যা গত দিনের তুলনায় ৪৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা