ইতিবাচক পথে ফেরায় বিনিয়োগকারীরা সরব
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
- কেনার চাপ ৭৮ শতাংশে, বিক্রেতা মাত্র ২২
- আইসিবিকে দেয়া ঋণের সুদ কমানোয় ইতিবাচক বাজার
পতনের জালে আটকা ছিল দেশের পুঁজিবাজার। কোনোভাবেই বের হতে পারছে না। কয়েক দিন হলো সেই জাল থেকে বের হয়েছে। লেনদেন পাঁচ শ’ কোটি টাকাকে অতিক্রম করেছে। ইতিবাচক পথে ঘুরে দাঁড়াতেই বিনিয়োগকারীরা সরব। ফলে শেয়ার কেনার চাপ ৭৮ শতাংশে পৌঁছেছে। যেখানে বিক্রেতা মাত্র ২২ শতাংশ। তবে ‘বি’ শ্রেণীর শেয়ারের কোনো ক্রেতা ছিল না গতকাল। আইসিবিকে দেয়া ঋণের সুদ ৪ শতাংশ নির্ধারণের খবরে আবারো ইাতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের শেয়ারবাজার। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে ১৩টি সেক্টরের শেয়ার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ছয়টি সেক্টরের শেয়ার মূল্য হ্রাস পেয়েছে।
দিনের ঘটনায় দেখা যায়, পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) সভরেন গ্যারান্টির বিপরীতে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ঋণে সুদ নির্ধারণ করা হয় ১০ শতাংশ। ঋণ অনুমোদনের খবরে প্রথমে চাঙ্গা হয়ে ওঠে শেয়ারবাজার। সুদ বেশি নির্ধারণ হওয়ায় চাপের কারণে কিছুটা ধসে পড়ে শেয়ারবাজার। তবে সব চাপকে দূরে ঠেলে সোমবার উত্থান হয়েছে শেয়ারবাজারে।
ডিএসইর লেনদেনের তথ্য থেকে বাজারবিশ্লেষণে দেখা যায়, লেনদেন শুরুর প্রথম দেড় ঘণ্টায় বেড়েছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান সূচক বা ‘ডিএসইএক্স’ সূচক ২.৩৯ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ২০৪ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ‘ডিএসইএস’ ১.৩৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৬৯ পয়েন্টে এবং ‘ডিএসই-৩০’ সূচক ২.৯১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯১০ পয়েন্টে চলে আসে। দেড় ঘণ্টায় ডিএসইতে ১৭৭ কোটি দুই লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
আর দিনশেষে ডিএসইর ডিএসইএক্স গত সোমবারের চেয়ে সূচক ২৪.১১ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ২২৬.০৫ পয়েন্টে, ডিএসই-৩০ সূচক ৭.৬৫ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯২১.১৬ পয়েন্টে এবং ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক ৬.১১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৭৪.৫৪ পয়েন্টে উঠে এসেছে। এসএমই বাজার সূচক (ডিএসএমইএক্স) ৭.১৪ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৭.৭ কোটি টাকা; যা গত দিনের তুলনায় ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। লেনদেনকৃত ৪০২টি কো¤পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২০৩টির বা ৫০.৪৯ শতাংশের, দর পতনে ১২৮টি বা ৩১.৮৪ শতাংশ এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৭১টি কোম্পানির শেয়ার। ৪০২টি কো¤পানির ২২ কোটি ৭ লাখ ১৪ হাজার ৬৪০টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে ৫১২ কোটি ৪৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬৫৬ টাকায়; যা গত সোমবার ছিল ৫০০ কোটি টাকা। ফলে লেনদেন বেড়েছে ১২ কোটি টাকা। সার্বিকভাবে বাজার মূলধন ০.৩৩ শতাংশ বেড়ে এখন ছয় লাখ ৬৭ হাজার ২১৪ কোটি ৪১ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
টাকায় লেনদেন, দর বৃদ্ধি ও পতনে শীর্ষ ১০ : ডিএসইতে গতকাল টাকায় লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ ১০টি কোম্পানি হলো : এশিয়াটিক ল্যাব., এনআরবি ব্যাংক, আইসিবি, ফাইন ফুডস, জিপি, ড্রাগন সোয়েটার, জেনেক্স ইনফোসিস, রবি এক্সিয়াটা, গোল্ডেন সন্স ও ব্র্যাক ব্যাংক। আর দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো : ড্রাগন সোয়েটার, এস আলম কোল্ড, দেশবন্ধু পলিমার, সাইফ পাওয়ার, ফু-ওয়াং ফুড, বিপিএমএল, ইন্ট্রাকো রি-ফুয়েলিং, এমএল ডাইয়িং, তসরীফা ইন্ডা. ও কাশেম ইন্ডা.। দর পতনের শীর্ষ ১০টি কোম্পানি হলো : এমারেল্ড অয়েল, ডেফোডিল কম্পিইটারস, বিআইএফসি, প্রাইম ফিন্যান্স, এনআরবি ব্যাংক, উত্তরা ফাইন্যান্স, প্রাইম টেক্স, স্টান্ডার্ড সিরামিকস, ফার্স্ট জনতা ব্যাংক মি. ফা. ও ইবিএল এনআরনি মি. ফা.।
ব্লক মার্কেটে লেনদেনে উন্নতি : এ দিকে ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল ২৬টি কোম্পানির ৫১ লাখ ৯০ হাজার ৫১৭টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে। যার গতকালের বাজারমূল্য ছিল মোট ১৪ কোটি ৩২ লাখ ৩২ হাজার টাকা। এর মধ্যে পাঁচ কোম্পানির সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে। যার পরিমাণ হলো ১০ কোটি ৩২ লাখ টাকারও বেশি। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ম্যারিকো বাংলাদেশ, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, স্টান্ডার্ড ব্যাংক ও ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং সিস্টেমস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ম্যারিকো বাংলাদেশের। এ দিন কোম্পানিটির তিন কোটি ৪৬ লাখ ৮১ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের তিন কোটি ২২ লাখ ২৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর দুই কোটি ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্টান্ডার্ড ব্যাংকের ৮১ লাখ ৬৮ হাজার টাকার এবং ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং সিস্টেমস লিমিটেডের ৬৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
সিএসইর সূচকে পয়েন্ট ফেরত : এ দিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের বা সিএসইর সবগুলো সূচকই পয়েন্ট ফিরে পেয়েছে। বাজার ইতিবাচক হলেও লেনদেন সোমবারের তুলনায় কিছুটা কমেছে। সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৪৩ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ২৫.২৮ পয়েন্ট এবং সিএসসিএক্স ২৪.১৮ পয়েন্ট বেড়েছে। লেনদেনে অংশ নেয়া ২০৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬৮টির এবং ৩৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ৩০ লাখ ৭৪ হাজার ৯২৩টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ছয় কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সোমবার লেনদেন হয় ছয় কোটি ৫১ লাখ টাকা। ফলে লেনদেন কমেছে ১৭ লাখ টাকা। বাজার মূলধন বেড়ে এখন সাত লাখ এক হাজার ৭৩৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকায় অবস্থান করছে।
জমি বিক্রি করবে আমরা নেটওয়ার্কস : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড জমি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত সোমবার অনুষ্ঠিত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে ঢাকা স্টকের প্রকাশিত তথ্য থেকে এটি জানা গেছে। আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ উপজেলার পূর্ব নাসিরাবাদ শিল্প এলাকায় অবস্থিত একটি প্লট বিক্রি করবে। প্লটটির নাম্বার ৪০। এর আয়তন ৯৮. ৩০ ডেসিমেল। প্লটির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২২ কোটি টাকা। শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতিসাপেক্ষে জমি বিক্রি করার এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
জেড শ্রেণীতে নামলো কনফিডেন্স সিমেন্ট : তালিকাভুক্ত আরো এক কোম্পাানি যুক্ত হলো ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে বলে জানিয়েছে ডিএসই। কোম্পানিটি হলো কনফিডেন্স সিমেন্ট। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে অনুমোদিত ডিভিডেন্ড বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণ না করার কারণে কোম্পানিটিকে ‘এ’ থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করায় কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করার জন্য স্টক ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংকার্সদের আগামী ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ বিতরণ বন্ধ রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে। আগামী ৪ ডিসেম্বর থেকে কোম্পানিটির লেনদেন ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে শুরু হবে।