পতনের বৃত্তেই চলছে পুঁজিবাজারের ঘুরপাক
লেনদেন নেমে এসেছে ৪০০ কোটি টাকার নিচে- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
পতনের জাল ও বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। প্রতিদিনের পতনে সূচক হারাচ্ছে পয়েন্ট। আর বিনিয়োগকারী হারাচ্ছে তার বিনিয়োগকৃত শেয়ারের দর। গেল সপ্তাহের পাঁচ লেনদেন দিবসের চার দিনই পতনের জালে আটকে ছিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি গ্যারান্টির বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) দেয়া তিন হাজার কোটি টাকা ঋণে উচ্চ সুদ নির্ধারণ করার খবরে ফের চাপে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। বাজারে অব্যাহত পতন ঠেকাতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) সভরেন গ্যারান্টির বিপরীতে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ প্রদানের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
দিনের লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডিএসইতে লেনদেন শুরুর প্রথম ঘণ্টায় বা বেলা ১১টা পর্যন্ত কমেছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর। বেলা ১১টা পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান সূচক বা ‘ডিএসইএক্স’ সূচক ১৩.৫০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে পাঁচ হাজার ১৭৯ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ‘ডিএসইএস’ ৩.৬৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান নেয় এক হাজার ১৬৩ পয়েন্টে এবং ‘ডিএস৩০’ সূচক ৭.৩০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে এক হাজার ৯০৮ পয়েন্টে। ওই সময় পর্যন্ত ডিএসইতে ১০৬ কোটি ৫১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
আর লেনদেন শেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স (ডিএসইএক্স) গত বৃহস্পতিবারের চেয়ে সূচক আরো ৭.৫৫ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ১৮৫.০৫ পয়েন্টে, ডিএসই-৩০ সূচক আরো ৫.২০ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৯১১.০৪ পয়েন্টে এবং ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক আরো ১.৩৬ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৬৫.৫৪ পয়েন্টে নেমেছে। লেনদেনকৃত ৩৯৫টি কো¤পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৪৮টির বা ৩৭.৭৪ শতাংশের, দর কমেছে ১৭৫টির বা ৪৪.৩০ শতাংশের এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৭২টি কোম্পানির শেয়ার। আর ৩৯৫টি কো¤পানির ১৬ কোটি ৭০ লাখ ৬৬ হাজার তিন শ’টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে ৩৯৭ কোটি ৩২ লাখ ১০ হাজার ৩৩৫ টাকা বাজারমূল্যে। গত বৃহস্পতিবারের তুলনায় এই লেনদেন ১৬ শতাংশ বা ৭৭ কোটি টাকা কমেছে। ওই দিন লেনদেন হয় ৪৭৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকার।
বাজারমূলধন ০.৩৮ শতাংশ কমে এখন ছয় লাখ ৬১ হাজার ৮৫৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকায় নেমেছে।
দরবৃদ্ধি ও পতনে শীর্ষ ১০: ডিএসইর দেয়া তথ্য বলছে, গতকাল দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০টি কোম্পানি হলো: প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মি.ফা., মুন্নু ফ্যাব্রিক্স, এমারেল্ড অয়েল, দেশবন্ধু পলিমার, ড্রাগন সোয়েটার, ডমিনেজ স্টিল, এইচআর টেক্স, সাইফ পাওয়ার, ফু-ওয়াং সিরামিকস ও গোল্ডেন সন্স। দর পতনের শীর্ষ ১০টি কোম্পানি হলো: আইসিবি এএমসিএল ২য় মি. ফা., তাক্কাফুল ইন্স্যুরেন্স, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, নরদার্ন ইন্স্যুরেন্স, বিআইএফসি, পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বিএসসি, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ওয়াটা কেমিক্যাল ও তুংহাই নিটিং অ্যান্ড ডাইয়িং।
লেনদেনের শীর্ষে এনআরবি ব্যাংকসহ ১০: ডিএসইতে গতকাল লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে এনআরবি ব্যাংক পিএলসি। ব্যাংকটির ১৮ কোটি এক লাখ ২৭ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে বলে ডিএসইর দেয়া তথ্য থেকে জানা গেছে। শীর্ষ তালিকায় উঠে এসেছে এমারেল্ড অয়েল। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৯০ লাখ ৮২ হাজার টাকার। ১০ কোটি ২৮ লাখ ১৬ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন নিয়ে শীর্ষ তালিকায় এসেছে সি পার্ল হোটেল। অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- জেনেক্স ইনফোসিস, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ইনট্রাকো রিফুয়েলিং, অগ্নি সিস্টেমস, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, মিডল্যান্ড ব্যাংক এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)।
ব্লক মার্কেটে ১১.৮৮ কোটি টাকার ট্রেড: এদিকে, ডিএসইর ব্লক মার্কেটে ২৩টি কোম্পানির ৩২ লাখ ৫৭২টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে। যার গতকালের বাজারমূল্য ছিল ১১ কোটি ৮৮ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে পাঁচটি কোম্পানির সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে। যার পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ১৬ লাখ টাকারও বেশি। আর প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- বেক্সিমকো ফার্মা, ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল টি, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স এবং রিলায়ান্স ওয়ান দ্য ফার্স্ট স্কিম অব রিলায়ান্স ইন্স্যুরেন্স মিউচুয়াল ফান্ড। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো ফার্মার। কোম্পানিটির চার কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ট্রাস্ট ব্যাংকের দুই কোটি ৬১ লাখ ৩২ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর ৯১ লাখ ৩৫ টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে ন্যাশনাল টি কোম্পানি। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে- এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের ৮৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার এবং রিলায়ান্স ওয়ান দ্য ফার্স্ট স্কিম অব রিলায়ান্স ইন্স্যুরেন্স মিউচুয়াল ফান্ডের ৪৭ লাখ ৮০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
সিএসইতে ৩টির পতন, প্রধান সূচকের উত্থান: এদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ২.৪৮ পয়েন্ট। তবে অন্য তিনটি সূচক থেকে পয়েন্ট ঝরেছে। সিএসই-৫০ সূচক থেকে ৫.২৮ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক থেকে ৩১.৭৮ পয়েন্ট এবং সিএসসিএক্স থেকে ৪.৫৮ পয়েন্ট কমেছে। লেনদেনে অংশ নেয়া ২০২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৪টির এবং ২৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ২৩ লাখ ৭২ হাজার ৫৭৭টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে পাঁচ কোটি ৮৪ লাখ ৭৩ হাজার ৬৮৪ টাকায়। যেখানে গত বৃহস্পতিবার লেনদেন হয় পাঁচ কোটি ৬০ লাখ টাকার। ফলে গতকাল লেনদেন ২৪ লাখ টাকা কমেছে।
প্রাতিষ্ঠানিক পর্যালোচনা: বিশ্লেষণে রয়্যাল ক্যাপিটাল বলছে, সূচক ও লেনদেন নিম্নমুখী ছিল। বাজারে বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় থাকায় বাজারের প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) ৮ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ১৮৫ পয়েন্টে শেষ হয়। ঢাকার শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) নিম্নমুখী ছিল। মূলধন গত দিনের তুলনায় ০.৩৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যেখানে, ভলিউম ৫ শতাংশ এবং টার্নওভার ১৬ শতাংশ কমেছে। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে ৭টি সেক্টরের শেয়ার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ১২টি সেক্টরের শেয়ারমূল্য হ্রাস পেয়েছে। ফ্লোর প্রাইসে একটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ব্লক মার্কেটে ১১.৮ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে যা মোট লেনদেনের ২.৯৯ শতাংশ। এসএমই বাজারসূচক (ডিএসএমইএক্স) ১.০১ পয়েন্ট কমে ১০৯০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে এবং লেনদেন হয়েছে ৮.৪ কোটি টাকা যা গত দিনের তুলনায় ৩২ শতাংশ কম। দিনশেষে বাজার গতকাল নেতিবাচক ধারায় শেষ হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা