পতন গভীর হচ্ছে পুঁজিবাজারে
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
- লেনদেন দেড় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ৩০২ কোটি টাকা
- ডিএসইর বাজার মূলধন কমলো প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা
দিন যত যাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজারে দরপতনের মাত্রা তত গভীর হচ্ছে। একই সাথে লেনদেন খরা দেখা দিয়েছে। লেনদেনের গতি ধারাবাকিভাবে কমে প্রায় দেড় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। টানা পতন হচ্ছে মূল্যসূচকেরও। ফলে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা দিন দিন ভারীই হচ্ছে। আতঙ্কে আছে বিনিয়োগকারীরা। ডিএসইর লেনদেন কমে এখন ৩০২ কোটি টাকায় এসেছে। ৫৮ শতাংশের বেশি কোম্পানি দর হারিয়েছে। বিক্রির চাপ অনেক বেশি। কিন্তু ক্রেতা নাই বাজারে। ডিএসইর বাজারমূলধন গতকাল আরো এক হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা কমেছে।
দিনের লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইতে সূচক ও দর পতনের মধ্যে দিয়েই লেনদেনের সূচনা হয়। তবে ১০টা ২৩ মিনিটে এক পর্যায়ে দিনের সর্বোচ্চ অবস্থা পাঁচ হাজার ১৮০.২৮ পয়েন্ট চলে আসে ডিএসইএক্স সূচকটি। লেনদেন শুরুর দেড় ঘণ্টায় অর্থাৎ বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান সূচক বা ‘ডিএসইএক্স’ ৪৭.৬০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে পাঁচ হাজার ১৪৯ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক বা ‘ডিএসইএস’ ২.০১ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৪৯ পয়েন্টে আর ‘ডিএসই-৩০’ সূচক ১৬.২৮ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৯০২ পয়েন্টে নেমে আসে। ওই সময়ে ডিএসইতে মোট ৯৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। একই সময়ে সর্বোচ্চ ২০১টি কোম্পানি দর পতনের শিকার হয়। আর এই পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
দিন শেষে দেখা যায়, ডিএসই ব্রড ইনডেক্স (ডিএসইএক্স) গত বৃহস্পতিবারের চেয়ে সূচক আরো ৫১.০৮ পয়েন্ট কমে এখন পাঁচ হাজার ১৪৬.৫০ পয়েন্টে, ডিএসই-৩০ সূচক আরো ১৯.১৪ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৮৯৯.৯০ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক ২.১২ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৪৯.৪৩ পয়েন্টে নেমেছে। লেনদেনকৃত ৩৯২টি কো¤পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১১০টির বা ২৮.৬০ শতাংশের, দর কমেছে ২২৮টির বা ৫৮.১৬ শতাংশের এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৪টি কোম্পানির। মোট ৩৯২টি কো¤পানির ১১ কোটি ২০ লাখ ৭১ হাজার ২৩৭টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে মোট ৩০২ কোটি ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯৭৩ টাকা বাজারমূল্যে। যেখানে গত বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ৩৬৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকার। ফলে লেনদেন কমেছে ৬১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
টাকায় লেনদেন, দরবৃদ্ধি ও পতনে শীর্ষ ১০ : ডিএসইর দেয়া তথ্যানুযায়ী, গতকাল টাকায় লেনদেনের ভিত্তিতে ১০টি শীর্ষ কোম্পানি হলো: এনআরবি ব্যাংক, তৌফিকা ফুড, ফাইন ফুডস, জেনেক্স ইনফোসিস, বিচ হ্যাচারি, বেক্সিমকো ফার্মা, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, স্কয়ার ফার্মা, অগ্নি সিস্টেম ও সোনালি আঁশ। আর দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০টি কো¤পানি হলো: ডরিন পাওয়ার, ভিএএমএল বিডি মি. ফা-১, রিলায়েন্স ১ মি. ফা., জেনেক্স ইনফোসিস, আল-হাজ টেক্সটাইল, আমান কটন, এনআরবি ব্যাংক, জনতা ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স ও অগ্নি সিস্টেম। এছাড়া দর পতনের শীর্ষ ১০টি কো¤পানি হলো: এনার্জিপ্যাক পাওয়ার, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল, স্কয়ার টেক্সটাইল, ফনিক্স ফাইন্যান্স, বিডি ওয়েল্ডিং, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, নিউলাইন, বিডি ফাইন্যান্স, জাহিন টেক্স ও উসমানিয়া গ্লাস।
ব্লক মার্কেটে ৫ কোম্পানির ৮.১০ কোটি টাকার ট্রেড: ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল ৩১টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ৬২ লাখ ৩০ হাজার ৯৫৭টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ১৩ কোটি ৮৮ লাখ ৮২ হাজার টাকায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হতে দেখা গেছে পাঁচ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, লাভেলো আইসক্রিম, ইউনাইটেড ফাইন্যান্স, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স এবং ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি।
এই পাঁচ প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে আট কোটি ১০ লাখ টাকারও বেশি। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের। ব্যাংকটির দুই কোটি ১৭ লাখ ২৮ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লাভেলো আইসক্রিমের এক কোটি ৮১ লাখ ৭৮ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর এক কোটি ৬৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে ইউনাইটেড ফাইন্যান্স।
রেনেটা ৩২৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে: এদিকে, পুঁিজবাজারে তালিকাভুক্ত রেনাটা পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোম্পানিটি এই প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৩২৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে বলে ডিএসই তথ্যটি প্রকাশ করেছে। গত শনিবার অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের ২৩১তম বৈঠকে প্রেফারেন্স ইস্যু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জানা গেছে, উল্লিখিত প্রেফারেন্স শেয়ার হবে নন-পার্টিসিপেটিভ। অর্থাৎ এই শেয়ারের মালিকরা কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অংশ নিতে পারবেন না। এ ছাড়া, তাদের কোনো ভোটাধিকার থাকবে না। এই প্রেফারেন্স শেয়ার মেয়াদ শেষে সম্পূর্ণ অবসায়িত হতে পারে। আবার এটি সম্পূর্ণভাবে সাধারণ শেয়ারে রূপান্তর করার সুযোগও থাকতে পারে। এ বিষয়ে কোম্পানি সিদ্ধান্ত নেবে। প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ কোম্পানিটির বিদ্যমান ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করা হবে।
এদিকে, প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুর বিষয়ে শেযারহোল্ডারদের মতামত জানতে বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) করবে রেনাটা। আগামী ১২ জানুয়ারি দুপুর ১২টায় এই ইজিএম অনুষ্ঠিত হবে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এই ইজিএম অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ ডিসেম্বর। আসন্ন ইজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতি এবং পরবর্তীতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদন পেলে প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যু করার সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
সিএসইতে সেঞ্চুরির বেশি হারে সূচকের পতন: এ দিকে, চট্টগ্রাম পুঁজিবাজারে বা সিএসইতে সবগুলো মূল্যসূচকই উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। তবে তিনটি সূচক কমেছে সেঞ্চুরির বেশি হারে।
সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৬৫.১৫ পয়েন্ট। এছাড়া সিএসই-৩০ সূচক কমেছে ২৫৯.৫৬ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স কমেছে ১০১.৭৮ পয়েন্ট এবং সিএসই-৫০ সূচক ১৪.২২ পয়েন্ট কমেছে। লেনদেনে অংশ নেয়া ২১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৩৩টির এবং ৩১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ১৯ লাখ ৭৮ হাজার ৬৫৮টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে পাঁচ কোটি ৭৭ লাখ ৫৬ হাজার ৯৯৩ টাকায়। যেখানে বৃহস্পতিবার লেনদেন হয় ১২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। ফলে লেনদেন কমেছে সাত কোটি ২১ লাখ টাকা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা