২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাবি তুলে ধরতে হবে : রেহমান সোবহান

রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও কথা শোনার আগ্রহ থাকতে হবে, ন্যায্যতা নিশ্চিত করার সংস্কারে এগিয়ে আসতে হবে
-

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডির) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, নিজেদের সমস্যা সমাধান করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে শক্তভাবে দাবি তুলে ধরতে হবে।
শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাথে অংশীদারিত্ব উদযাপন এবং প্রকাশনা উৎসব’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রান্তিক ও বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠী নিয়ে সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (সেড) আটটি প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে ব্রাত্যজন রিসোর্স সেন্টার (বিআরসি) এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এই অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার আয়োজন করে।
অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান কিছু সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্র তুলে ধরে জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘প্রান্তিক গোষ্ঠীর জন্য আলাদা কমিশন না করা হলেও পথ এখানেই শেষ নয়। আপনারা নিজেরা সম্মিলিতভাবে একটি নাগরিক প্লটফর্ম গঠন করেন, আপনাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। আশা করি প্রধান উপদেষ্টা আপনাদের কথা অবশ্যই শুনবেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেডের পরিচালক ফিলিপ গাইন। তিনি জানান, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম থেকে একজন বিধবা মাসে ৫৫০ টাকা পান। এই সামান্য ভাতা দিয়ে তিনি কী করতে পারেন। অনেক বিধবাকে ভিক্ষা করেই খেতে হয়।
আলোচনা সভার সভাপতি ও সঞ্চালক পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বিআরসি অবশ্যই প্রান্তিক গোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করবে, কিন্তু রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও এই কথা শোনার আগ্রহ থাকতে হবে, ন্যায্যতা নিশ্চিত করার সংস্কারে এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের (বিসিএসইউ) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী বলেন, এখন শ্রম আইনের সংশোধনের কথা আসলে আমরা চা শ্রমিকরা আতঙ্কে থাকি। পূর্বে সব সংশোধনেই চা শ্রমিকদের কোনো না কোনো দিক দিয়ে বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে। বর্তমান সংস্কার কমিশন নিয়ে আমরা আশাবাদী; আমরা চাই বর্তমান বাজারমূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে যেন চা শ্রমিকদের বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।

সিএইচটি নারী হেডম্যান কারবারি নেটওয়ার্কের সভাপতি জয়া ত্রিপুরা বলেন, অন্তর্র্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা যেন পার্বত্য চুক্তির যথার্থ বাস্তবায়ন হয়, রেগুলেশনের কোনো পরিবর্তন না হয়।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান বলেন, বর্তমান অন্তর্র্বর্তী সরকারের সাথে কিভাবে এই জনগোষ্ঠীর সংযোগ স্থাপন করা যায় তা নিয়ে ভাবার সময় এখন। সেড, পিপিআরসির মতো সংগঠন আমি মনে করি এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ এম হাশেমী বলেন, এ রকম জনগোষ্ঠীর জন্য যদি সরকার একটি আর্থসামাজিক শুমারি (সোস্যাল ইকোনমিক সেনসাস) করতে পারত তবে তাদের প্রকৃত অবস্থা সবার সামনে উঠে আসত। এ ধরনের আলোচনা সংকীর্ণ পরিসরে রাখলে চলবে না, জোরালো কণ্ঠে সবার সামনে তুলে ধরতে হবে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়–য়া ভূমি সমস্যা নিয়ে মন্তব্য করে বলেন, ২০১৫-১৬ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারের হাজার-হাজার একর জমি পড়ে আছে। এ রকম প্রান্তিক ও ভূমিহীন জনগোষ্ঠীর মধ্যে সরকারের খাসজমি বন্টনের যথেষ্ট সুযোগ আছে। ১৯৮৯ সনের ইনডিজেনাস ও ট্রাইবাল পিপলস কনভেনশনে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করবে এমন আশাই তিনি ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের সভাপতি কৃষ্ণলাল বলেন, সরকারের উপদেশে আমাদের সন্তানদের শিক্ষিত করলাম, কিন্তু দিন শেষে তো সেই ঝাড়– হাতেই তাদের কাজে নামতে হয়। একজন কৃষকের সন্তান যদি সরকারের উচ্চ পদে চাকরি পান, তবে আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সন্তান কেন পাবে না?
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সংস্কার এজেন্ডা নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা হয়। আলোচনার মাধ্যমে সংস্কার এজেন্ডার একটি রূপরেখা তৈরি করা হয়।
হিজড়া সংগঠন কথা কলা কেন্দ্রের মনোরম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রকাশনা ও আলোচনা সভা শেষ হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement