পতনের বৃত্তেই ঘুরপাক লেনদেন তলানিতে
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০৫
- মন্দায় বিক্রির চাপ ৮৪ শতাংশে উন্নীত
- মূলধন ডিএসইর আরো ০.৪৩ শতাংশ কমলো
আশার আলো দেখাচ্ছে না দেশের পুঁজিবাজার। পতনের বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে। অব্যাহত মন্দার কারণে বিক্রির মাধ্যমে শেয়ার ছেড়ে দেয়ার চাপ ৮৪ শতাংশে উন্নীত। কিন্তু ক্রেতা মাত্র ১৬ শতাংশ। প্রায় ৬৯ শতাংশ কোম্পানি দর পতনের শিকার। পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টার কোনো সফলতা পাচ্ছে না। ১৯ খাতের মধ্যে ১৭ খাতেরই শেয়ার মূল্য কমেছে। ডিএসইর লেনদেন শুরুর এক ঘণ্টায় অর্থাৎ বেলা ১১টা পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান সূচক বা ‘ডিএসইএক্স’ ১২ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ৫ হাজার ২৩২ পয়েন্টে। ওই সময়ে ডিএসইতে মোট ৮৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
দিনের লেনদেনের তথ্য থেকে বাজারবিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইতে লেনদেনের শুরুতেই সূচক ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে। তবে আধাঘণ্টার বেশি সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকেনি। প্রথম আধাঘণ্টার লেনদেন শেষ হওয়ার পর দাম বাড়ার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে। লেনদেনের সময় গড়ানোর সাথে সাথে দরপতনের তালিকা বড় হতে থাকে। ফলে মূল্যসূচকের মোটামুটি বড় পতন দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স (ডিএসইএক্স) গত বুধবারের চেয়ে সূচক ৪৭.৬৮ পয়েন্ট কমে এখন পাঁচ হাজার ১৯৭.৫৮ পয়েন্টে, ডিএসই-৩০ মূল্য সূচক ১৫.৫৯ পয়েন্ট কমে এখন এক হাজার ৯১৯.০৫ পয়েন্টে এবং ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক ১০.৯৭ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৫১.৫৬ পয়েন্টে নেমেছে। লেনদেনকৃত কো¤পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৬৬টির বা ১৭.২৩ শতাংশ, দর কমেছে ২৬৩টির বা ৬৮.৬৬ শতাংশের এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৪টি কোম্পানির শেয়ার। মোট ৩৮৩টি কো¤পানির ১৩ কোটি এক লাখ ৩৯ হাজার ৮০টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে মোট ৩৬৩ কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ১১৬ টাকায়। যা বুধবারের তুলনায় ৩০ কোটি টাকা কম। ওই দিন লেনদেন হয় ৩৯৩ কোটি ৭ লাখ টাকার।
লেনদেন, দর বৃদ্ধি ও পতনের শীর্ষে ১০ : ডিএসইতে গতকাল টাকায় লেনদেনের ভিত্তিতে ১০টি কো¤পানি হলো মিডল্যান্ড ব্যাংক, তৌফিকা ফুড, বেক্সিমকো ফার্মা, আইসিবি, ইবিএল, ফাইন ফুডস, অগ্নি সিস্টেম, সোনালি আঁশ, ফারইস্ট নিটিং ও ইসলামী ব্যাংক। দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০টি কো¤পানি হলো খান ব্রাদার্স পিপি, মিডল্যান্ড ব্যাংক, সিএনএ টেক্স, কুইনসাউথ টেক্সটাইল, তৌফিকা ফুড, কেডিএস এক্সেসরিজ, মেঘনা ইন্সুঃ, জিকিউ বলপেন, এসিআই ফরমুলেশন ও নাহী অ্যালুমিনিয়াম। আর দর পতনে শীর্ষ ১০টি কো¤পানি হলো প্রাইম ফাইন্যান্স ১ম মি. ফা., ডরিন পাওয়ার, শাইনপুকুর সিরামিকস, এমারেল্ড অয়েল, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুঃ, অগ্রণী ইন্সুঃ, আইসিবি, শাশা ডেনিমস, অগ্নি সিস্টেম ও ফিনিক্স ইন্সুঃ।
জেড শ্রেণীতে গ্লোবাল হেভি কেমি : এদিকে, তালিকাভুক্ত গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস লিমিটেডের ক্যাটাগরি স্থানান্তর করা হয়েছে বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তথ্য প্রকাশ করেছে। কোম্পানিটিকে ‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। রবিএসইসির শর্ত অনুযায়ী টানা দুই বছরের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে ব্যর্থ হওয়ায় কোম্পানিটিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হয়। আগামী রোববার (২৪ নভেম্বর) থেকে কোম্পানিটি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করবে। এদিকে কোম্পানিটিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করায় ঋণ সুবিধা দিতে ব্রোকার হাউজ এবং মার্চেন্ট ব্যাংককে নিষেধ করেছে ডিএসই। যা আগামী ২৪ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
এমারেল্ড ওয়েলের উৎপাদন বন্ধ : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এমারেল্ড অয়েল কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তথ্য প্রকাশ করেছে। উৎপাদন কার্যক্রম সম্পর্কে সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ সম্পর্কে ডিএসই গত ১৯ নভেম্বর কোম্পানির কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। ডিএসইর চিঠির জবাবে কোম্পানিটি জানিয়েছে, কারখানায় অপর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহের কারণে বর্তমানে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে কোম্পানির উৎপাদন কার্যক্রম পুরোদমে চালিয়ে যেতে ১২ এমটি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭.৫০ চাপের হুস্ক বয়লার আমদানি করেছে। শিগগিরই কারখানায় হাস্ক বয়লার স্থাপনের কাজ শেষ করে উৎপাদনে ফিরে আসবে কোম্পানিটি। বর্তমানে কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ থাকলেও তারা তাদের কোম্পানি থেকে কোনো কর্মী ছাঁটাই করেনি।
পতনেও সিএসইতে লেনদেন দ্বিগুণ : এদিকে, চট্টগ্রাম ষ্টকে সবগুলো সূচকের পতন ঘটেছে। তবে পতনের মাঝেও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৮৭.৮৫ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৭৯.৮৫ পয়েন্ট এবং সিএসসিএক্স ৫৫.৭০ পয়েন্ট কমেছে। লেনদেনে অংশ নেয়া ২১৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৩২টির এবং ৩৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ৪৩ লাখ ৩৭ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৫৮ লাখ ১০ হাজার ৫৭৮ টাকায়। বুধবার লেনদেন হয় ৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ফলে বেড়েছে ৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
রয়্যাল ক্যাপিটাল বলছে, ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও এই চেষ্টার সফলতার কোনো সুস্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেনি এখনো। ডিএসইএক্স ৪৭ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ১৯৭ পয়েন্টে শেষ হয়। ঢাকার শেয়ার বাজারের প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) নি¤œমুখী ছিল এবং মূলধন গত দিনের তুলনায় ০.৪৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যেখানে ভলিউম ৩ শতাংশ বেড়েছে এবং টার্নওভার ৭ শতাংশ কমেছে। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে ২টি সেক্টরের শেয়ারমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ১৭টি সেক্টরের শেয়ার মূল্য হ্রাস পেয়েছে। ফ্লোর প্রাইসে একটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ব্লক মার্কেটে ৩০.৯ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে যা মোট লেনদেনের সাড়ে আট শতাংশ। এসএমই বাজারসূচক (ডিএসএমইএক্স) ১০.৯৬ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে এবং লেনদেন হয়েছে ৭.৮ কোটি টাকা যা গত দিনের তুলনায় ৫ শতাংশ কম।