পতনের স্রোতে পুঁজিবাজার
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৪
- ৩ দিনের পতনে ১১২ পয়েন্ট কমলো ডিএসইতে
- মন্দায় শেয়ার বিক্রির চাপ ৭৬ শতাংশে
- বিক্রির চাপ বেশি ছিল বীমা খাতের শেয়ারগুলোর
পতন থেকে বের হতে না পেরে স্রোতে মিশেছে দেশের পুঁজিবাজার। তিন দিন ধরে পতনের পথ ধরেই আগাচ্ছে। মন্দায় আক্রান্ত হওয়ায় বাজার এখন বিক্রির চাপে। বীমা খাতের শেয়ারগুলোতে গতকাল বিক্রির চাপ দেখা গেছে। আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা তাদের মূলধন তুলে নিচ্ছেন। বিক্রির চাপ এখন ৭৬ শতাংশে। কেনার আগ্রহ মাত্র ২৪ শতাংশের। তিন দিনে ডিএসইর প্রধান সূচকের পয়েন্ট কমেছে ১১২ পয়েন্ট। সার্বিকভাবে গতকাল ডিএসইর মূলধন কমেছে ০.৬৬ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর নানান উদ্যোগের পরও স্থিতিশীলতায় ফিরছে না দেশের শেয়ারবাজার। কোনোভাবেই থামছে না শেয়ারবাজারের অস্থিরতা।
দিনের লেনদেনের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডিএসইতে সূচকের পতনে লেনদেন চলে প্রথম দেড় ঘণ্টায় বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান সূচক বা ‘ডিএসইএক্স’ সূচক ১৮.৭৪ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ২৮১ পয়েন্টে, ‘ডিএসইএস’ ৭.৬৪ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৬৩ পয়েন্টে এবং ‘ডিএস৩০’ সূচক ১০.১৫ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৯৫২ পয়েন্টে চলে আসে। ওই সময় ডিএসইতে ১৮৬ কোটি ২৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। তবে দুপুর ১২.১০টার পর থেকে বাজার আরো অধঃপতনে চলে যায়। গত তিন দিন ধরে বাজারের এই পতনের স্রোত।
বাজারের লেনদেন : দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স (ডিএসইএক্স) গত সোমবারের চেয়ে আরো ৫৭.৪১ পয়েন্ট কমে এখন পাঁচ হাজার ২৪২.৬৬ পয়েন্টে, ডিএসই-৩০ সূচক আরো ২০.১৮ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৯৪২.৯০ পয়েন্টে এবং ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক (ডিএসইএস) আরো ১৭.৫০ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৫৩.৯৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএইএক্স তিন দিনের টানা পতনে ১১২ পয়েন্ট কমেছে। লেনদেনকৃত কো¤পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৭৬টির বা ১৯.৫৮ শতাংশের, দর কমেছে ২৬৭টির বা ৬৮.৮১ শতাংশের এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৫টি কোম্পানির।
লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৮৮টি কো¤পানির ১৬ কোটি ৮০ লাখ ৩১ হাজার ২১৩টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। যার গতকালের বাজারমূল্য ছিল ৫১৪ কোটি ৮৫ লাখ ২২ হাজার ৬৬৯ টাকা। লেনদেনে শেয়ার সংখ্যা সোমবারের তুলনায় কমেছে। কমেছে টাকার পরিমাণ ৩৬ কোটি টাকার বেশি। সোমবার লেনদেন হয়েছিল ৫৫১ কোটি ৩২ লাখ টাকার।
লেনদেন, দর বৃদ্ধি ও পতনে শীর্ষ ১০ : ডিএসইতে গতকাল টাকায় লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ ১০টি কো¤পানি হলো:- ফাইন ফুড, সোনালি আঁশ, যমুনা ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, বিএসসি, অগ্নি সিস্টেম, সামিট পোর্ট এলায়েন্স, বেক্সিমকো ফার্মা, সিটি জেনারেল ইন্সু: ও জিপি। আর দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০টি কো¤পানি হলো:- এমারেল্ড অয়েল, নিটল ইন্সু:, প্রভাতি ইন্সু:, ফাইন ফুড, গোল্ডেন সন, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্সু:, বিডি ফাইন্যান্স, শাইনপুকুর সিরামিকস, যমুনা ব্যাংক ও এপেক্স ফুডস। অন্য দিকে, দর পতনে শীর্ষ ১০টি কো¤পানি হলো:- সোনালি আঁশ, কেপিসিএল, জিলবাংলা সুগার, নাভানা সিএনজি, শ্যামপুর সুগার, অগ্নি সিস্টেম, জিবিবি পাওয়ার, ইউনাটেড পাওয়ার, আরএসআরএম স্টিল ও এমএল ডাইয়িং।
ব্লক মার্কেটে ১৪.২৯ কোটি টাকার ট্রেড : এ দিকে, ডিএসইর ব্লক মার্কেটেও লেনদেন কমেছে। ২৭টি কোম্পানির ৪১ লাখ ৫৯ হাজার ২৮৬টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হতাবদল হয়েছে মোট ১৪ কোটি ২৯ লাখ ১৩ হাজার টাকা বাজারমূল্যে। এর মধ্যে আট কোম্পানির শেয়ার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বলে ডিএসইর লেনদেনের তথ্য থেকে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- বিচ হ্যাচারি, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ফাইন ফুডস, মিডল্যান্ড ব্যাংক, বেক্সিমকো, ইস্টার্ন ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক এবং সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল লিমিটেড। এই আট প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৭৮ লাখ টাকারও বেশি।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বিচ হ্যাচারির। কোম্পানিটির ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৩৯ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ২ কোটি ১৯ লাখ ২২ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর ২ কোটি ১৩ লাখ ২৩ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে ফাইন ফুডস। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে- মিডল্যান্ড ব্যাংকের ১ কোটি ৬৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকার, বেক্সিমকোর ৬৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকার, ইস্টার্ন ব্যাংকের ৪৭ লাখ ৮০ হাজার টাকার, পূবালী ব্যাংকের ৪৪ লাখ ২ হাজার টাকার এবং সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল লিমিটেডের ৪১ লাখ ৪০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
সিএসইতে সূচকের পতনে সেঞ্চুরি : আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই কমেছে ১২৫.৯০ পয়েন্ট। সূচকটির আকার এখন ১৪ হাজার ৬৭১.০৫ পয়েন্ট। আর সিএসই-৩০ সূচক থেকে ১১৮.৭৬ পয়েন্ট হারিয়ে এখন ১২ হাজার ১৭৭.৫৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। সিএসিএক্স কমেছে ৭১.৬৫ পয়েন্টে। সূচকটি এখন আট হাজার ৯৪৬.৬৬ পয়েন্ট। লেনদেনে অংশ নেয়া ২১৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৩৪টির এবং ২৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ২৪ লাখ ২১ হাজার ২৯৩টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ১০ লাখ ৮৪ হাজার ৫৫৭ টাকা বাজারমূল্যে। সোমবার লেনদেন হয় ৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকার। ফলে সূচক কমলেও লেনদেন দ্বিগুণ হয়েছে শুধু বিক্রির চাপে।
বাজার বিশ্লেষণে প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষক রয়্যাল ক্যাপিটাল বলছে, দৈনিক চার্ট অনুযায়ী, সূচক ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বুধবার দিনটি গুরুত্বপূর্ণ। তবে সূচক ৫ হাজার ২১০ থেকে ৫ হাজার ২৩০ পয়েন্টের কাছাকাছি এসে সাপোর্ট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডিএসইএক্স ৫৭ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ২৪৩ পয়েন্টে শেষ হয়। অপর দিকে, বাজার লেনদেন ৩৭ কোটি টাকা কমে ৫১৫ কোটি টাকা হয়েছে। ভলিউম ৪ শতাংশ এবং টার্নওভার ৭ শতাংশ কমেছে। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে ৫টি সেক্টরের শেয়ার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ১৪টি সেক্টরের শেয়ার মূল্য হ্রাস পেয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা