আবারো পতনের বৃত্তে পুঁজিবাজার
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
- দর হারাল ৫০ শতাংশ কোম্পানি
- বিক্রির চাপ বেড়ে ৬৩ শতাংশে
পতনের ধারা পুঁজিবাজারকে ছাড়ছে না। পতনের বৃত্তে প্রবেশের মধ্য দিয়েই গতকাল নতুন সপ্তাহ শুরু হলো দেশের পুঁজিবাজারের। কিঞ্চিৎ আলোয় বিনিয়োগকারীরা আশায় যখন বুক বাঁধে ঠিক তখনই পতনের আঘাত তাদের সেই আশাকে নস্যাৎ করে দেয়। সূচকের সাথে দর পতনের ফলে গতকালও বাজার মূলধন কমেছে। গড়ে ৫০ শতাংশ কোম্পানি দর পতনের শিকার হয়েছে। শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে এখন ৬৩ শতাংশে উঠেছে। যেখানে ক্রেতার চাপ মাত্র ৩৭ শতাংশ। ক্রেতাশূন্য বি শ্রেণীর কোম্পানির শেয়ার। বিশেষ করে টেলিকম ও ভ্রমণ খাতের কোম্পনির শেয়ার ক্রেতা শূন্য ছিল। বাজার মূলধন ডিএসইতে ০.১৯ শতাংশ কমেছে বলে ডিএসইর তথ্য থেকে জানা গেছে।
দিনের লেনদেনের তথ্য থেকে দুই পুঁজিবাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইতে সূচকের উত্থানে লেনদেন শুরু হয়। কিন্তু সেটি শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। প্রথম দেড় ঘণ্টায় বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান সূচক বা ‘ডিএসইএক্স’ সূচক ২.৫৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান পাঁচ হাজার ৩৫৭ পয়েন্টে উঠে আসে। আর শরিয়াহ সূচক ‘ডিএসইএস’ ১.৩২ পয়েন্ট এবং ‘ডিএসই-৩০’ সূচক ০.৩৬ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। সূচক ও শেয়ার দর বৃদ্ধিতে ডিএসইতে প্রথম দেড় ঘণ্টায় ২০০ শ’ কোটি চার লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। কিন্তু শেষে এখন পতনের জালেই জড়িয়ে পড়ল। আর দিনশেষে ডিএসইএক্স গত বৃহস্পতিবারের চেয়ে সূচক ২৬.৯৯ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ৩২৮.৩৩ পয়েন্টে, ডিএসই-৩০ সূচক ৯.৪৯ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৯৭৬.৯২ পয়েন্টে এবং শরিয়াহ সূচক ৬.৫৭ পয়েন্ট কমে এখন এক হাজার ১৮২.৯৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
লেনদেনকৃত ৩৮৩টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৫০টির বা ৩৯.১৬ শতাংশের, দর কমেছে ১৮৫টির বা ৪৮.৩০ শতাংশের এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৮টি কোম্পানির শেয়ার। টাকায় ও শেয়ার লেনদেন গত বৃহস্পতিবারের তুলনায় গতকাল কমেছে। ১৭ কোটি ৭২ লাখ ৮২ হাজার ৫৩১টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৫০৫ কোটি ৯৭ লাখ ৭৬ হাজার ৮৯০ টাকা বাজার মূল্যে। গত বৃস্পতিবার লেনদেন হয় ১৯ কোটির বেশি শেয়ার মোট ৫৭৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকার বেশি। ফলে লেনদেন কমেছে ৭০ কোটি টাকার বেশি। বাজারমূলধন ০.১৯ শতাংশ কমে এখন ছয় রাখ ৭৩ হাজার ৪০৭ কোটি টাকায় নেমেছে।
টাকায় লেনদেন, দর বৃদ্ধি ও পতনে শীর্ষ ১০: ডিএসইর দেয়া তথ্যানুযায়ী গতকাল টাকায় লেনদেনের ভিত্তিতে ১০টি কো¤পানি হলো- ফারইস্ট নিটিং, বিএসসি, সানলাইফ ইন্সুঃ, বেক্সিমকো ফার্মা, ইসলামী ব্যাংক, আইটিসি, অগ্নি সিস্টেম, তৌফিকা ফুড, জিপি ও ওরিয়ন ফার্মা। আর দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০টি কো¤পানি হলো- স্টাইলক্র্যাফট, ফার্স্ট প্রাইম ফাইন্যান্স মি. ফা., ডরিন পাওয়ার, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট, নাভানা ফার্মা, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুঃ, এমএল ডাইং, কনফিডেন্স সিমেন্ট, আমান কটন ও এসএস স্টিল। অন্য দিকে দর পতনে শীর্ষ ১০টি কো¤পানি হলো- ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, বেস্ট হোল্ডিং, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, লিগেসী ফুটওয়্যার, বিবিএস, দেশবন্ধু পলিমার, জেমিনী সি ফুড, ফারইস্ট নিটিং, এলআরবিডিএল ও এনসিসিবিএল মি. ফা-১।
আজ লেনদেনে ফিরছে ১৭ কোম্পানি
রেকর্ড ডেটের পর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৭ কোম্পানি আজ সোমবার থেকে আবার শেয়ার লেনদেনে ফিরবে বলে ডিএসই জানিয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো- মীর আক্তার হোসেন, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, সাইফ পাওয়ারটেক, তিতাস গ্যাস, এডিএন টেলিকম, রানার অটোমোবাইলস, এমজেএল বাংলাদেশ, ইনফর্মেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, বিডি ল্যাম্পস, ইনটেক অনলাইন, বিডিকম, মতিন স্পিনিং, এসিআই, ডমিনেজ স্টিল, এসিআই ফর্মুলেশন এবং দেশ গার্মেন্ট। জানা গেছে, রেকর্ড ডেট সংক্রান্ত কারণে রোববার কোম্পানিগুলোর শেয়ার লেনদেন বন্ধ ছিল।
ব্লক মার্কেটে ৬ কোম্পানির ১০ কোটি টাকার ট্রেড: এ দিকে ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল ৩০টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। কোম্পানিগুলোর ৪৫ লাখ ৬৭ হাজার ১১৭টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ১৬ কোটি ২১ লাখ ৪২ হাজার টাকায়। এর মধ্যে ছয়টি কোম্পানির শেয়ার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে। তাদেরই শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৩১ লাখ টাকারও বেশি। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- বিচ হ্যাচারি, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, ইস্টার্ন ব্যাংক, লাভেলো আইসক্রিম, শেফার্ড ইন্ডাস্টিজ এবং সামিট পাওয়ার লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বিচ হ্যাচারির। কোম্পানিটির দুই কোটি ৬৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের দুই কোটি ৪৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর এক লাখ ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে ইস্টার্ন ব্যাংক। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে- লাভেলো আইসক্রিমের এক কোটি ৩৬ লাখ পাঁচ হাজার টাকার, শেফার্ড ইন্ডাস্টিজের এক কোটি পাঁচ লাখ টাকার এবং সামিট পাওয়ার লিমিটেডের এক কোটি এক লাখ ৪৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
স্পট মার্কেটে ফিরল ৯ কোম্পানি: এ দিকে ১৯ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন আজ সোমবার থেকে স্পট মার্কেটে হবে বলে ডিএসই তথ্য প্রকাশ করেছে। কোম্পানিগুলো হলো- তশরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, একমি ল্যাবরেটরিজ, অ্যাডভেন্ট ফার্মা, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, বিডি অটোকার্স, বসুন্ধরা পেপার, ডরিন পাওয়ার, ফু-ওয়াং সিরামিক, জেনেক্স ইনফোসিস, জিকিউ বলপেন, খান ব্রাদার্স, লুব-রেফ, মেঘনা সিমেন্ট, শাশা ডেনিমস, মেঘনা কনডেন্স মিল্ক, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, মেট্রো স্পিনিং, অলিম্পিক এক্সেসরিজ এবং উসমানিয়া গ্লাস।
অন্য দিকে কোম্পানিগুলোর মধ্যে তশরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, একমি ল্যাবরেটরিজ, অ্যাডভেন্ট ফার্মা, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, বিডি অটোকার্স, বসুন্ধরা পেপার, ডরিন পাওয়ার, ফু-ওয়াং সিরামিক, জেনেক্স ইনফোসিস, জিকিউ বলপেন, খান ব্রাদার্স, লুব-রেফ, মেঘনা সিমেন্ট ও শাশা ডেনিমসের লেনদেন ১৮ থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত আর মেঘনা কনডেন্স মিল্ক, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, মেট্রো স্পিনিং, অলিম্পিক এক্সেসরিজ ও উসমানিয়া গ্লাসের লেনদেন ১৮ থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত স্পট মার্কেটে হবে। স্পট মার্কেটে লেনদেন শেষে রেকর্ড ডেট সংক্রান্ত কারণে : তশরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, একমি ল্যাবরেটরিজ, অ্যাডভেন্ট ফার্মা, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, বিডি অটোকার্স, বসুন্ধরা পেপার, ডরিন পাওয়ার, ফু-ওয়াং সিরামিক, জেনেক্স ইনফোসিস, জিকিউ বলপেন, খান ব্রাদার্স, লুব-রেফ, মেঘনা সিমেন্ট ও শাশা ডেনিমস লেনদেন ২০ নভেম্বর আর মেঘনা কনডেন্স মিল্ক, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, মেট্রো স্পিনিং, অলিম্পিক এক্সেসরিজ ও উসমানিয়া গ্লাসের লেনদেন ২১ নভেম্বর বন্ধ থাকবে।
সিএসইতে লেনদেন কমে অর্ধেকে: এ দিকে চট্টগ্রাম স্টক মার্কেটেও সবগুলো সূচকের পতন ঘটেছে। প্রায় ৫২ শতাংশ কোম্পানি দর পতনের শিকার ছিল। প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২০.৯৪ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৭.২২ পয়েন্ট এবং সিএসসিএক্স ১৫.৫৬ পয়েন্ট কমেছে। লেনদেনে অংশ নেয়া ২১৪টি কোম্পানির মধ্যে দর পতনের শিকার ১১১টি কোম্পানি। দর বেড়েছে মাত্র ৭৬টির এবং দর অপরিবর্তিত ছিল ২৭টি কোম্পানির। ২৩ লাখ ৪৪ হাজার ২৪৯টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট পাঁচ কোটি তিন লাখ ১৯ হাজার ৪৫০ টাকা বাজারমূল্যে। যেখানে গত বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ৯ কোটি ১০ লাখ টাকার। ফলে লেনদেন কমেছে চার কোটি সাত লাখ টাকা। সাত লাখের বেশি শেয়ার লেনদেন কমেছে আগের দিনের তুলনায়।