স্থির হতে পারছে না পুঁজিবাজার
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৫
- ফের পতনে সূচক কমেছে দুই বাজারেই
- ব্লক মার্কেটে টানা দুই দিন ধরে লেনদেনে শীর্ষে বেক্সিফার্মা
অস্থিরতার মধ্যেই চলছে দেশের পুঁজিবাজার। কোনোভাবেই স্থির হতে পারছে না। এক দিন উত্থানে যে পরিমাণ সূচক ফিরে আসে, পরের দিন পতনে তার চেয়ে বেশি হারিয়ে যাচ্ছে। প্রায় দিনই কিছুটা উত্থানে বাজারের লেনদেন শুরু হলেও ঘণ্টা দুয়েক পরেই পতনের পথ অনুসরণ করছে। ফলে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার হারাচ্ছে। দু-এক দিনের উত্থানে যে পরিমাণ দর বাড়ছে, এক দিনের পতনেই বেশির ভাগ কোম্পানি তার চেয়ে বেশি দর হারাচ্ছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশার মেঘ দেখা দিয়েছে। গতকালও ৫৫ শতাংশ কোম্পানি দর পতনের শিকার হয়। যদিও ডিএসইতে মূলধন বেড়েছে ০.১৬ শতাংশ।
দিনের লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মূল্যসূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয়। এ সময় বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর বাড়তে ছিল। লেনদেন শুরুর দেড় ঘণ্টায় অর্থাৎ বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান সূচক বা ‘ডিএসইএক্স’ ৩৪.৩৯ পয়েন্ট বেড়ে পাঁচ হাজার ৩৬৭ পয়েন্টে পৌঁছায়। শরিয়াহ সূচক ৫.৩০ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ২০০ পয়েন্টে আর ‘ডিএস-৩০’ সূচক ১০.৬৯ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯৮৮ পয়েন্টে উঠে আসে। এ সময়ে ডিএসইতে মোট ২২০ কোটি ৬১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। কিন্তু দুপুর ১২.১০টার পর বাজার পতনের পথ ধরে। সেই পতনেই দিনের লেনদেন শেষ হয়। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিন সোমবারের তুলনায় গতকাল ৩৫.০৫ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ২৯৮.৩৬ পয়েন্টে, ডিএসই-৩০ সূচক ৭.৩৪ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৯৭০.১০ পয়েন্টে এবং শরিয়াহ সূচক ১২.২৯ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৮৩ পয়েন্টে নেমে গেছে। এ দিন ১৭ কোটি ১৯ লাখ ৮২ হাজার ৮৮৩টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৫৭৭ কোটি ৬৬ লাখ ছয় হাজার ৭৫৭ টাকায়। আগের দিনের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে এক কোটি ১০ লাখ টাকা। যেখানে শেয়ার বেচাকেনা প্রায় এক কোটি কমেছে। গতকাল ডিএসইতে মোট চার শ’ কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিলেও দর পতনের শিকার হয় ২১৬টি বা ৫৪ শতাংশ, দর বৃদ্ধিতে ছিল ১৩৬টি বা ৩৪ শতাংশ, আর দর অপরিবর্তিত ছিল ৪৮টি কোম্পনির শেয়ার। বাজার মূলধন ০.১৬ শতাংশ বেড়ে ছয় লাখ ৭২ হাজার দুই কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
ব্লক মার্কেটে শীর্ষে বেক্সিফার্মা : এ দিকে গতকাল ডিএসইর ব্লক মার্কেটে ৩২টি কোম্পানির ৫০ লাখ ৩১ হাজার ৮০টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৩২ কোটি ৩০ লাখ ৭২ হাজার টাকায়। এর মধ্যে ছয় কোম্পানির শেয়ার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো- বেক্সিমকো ফার্মা, বিচ হ্যাচারি, এমজেএল বিডি, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স এবং ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস। এই ছয় প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকারও বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার। এ দিন কোম্পানিটির ২০ লাখ ৭৫ হাজার শেয়ার হাতবদল হয়েছে ১৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। বিচ হ্যাচারির ৪ কোটি ১৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর এক লাখ ৯৬ লাখ ২৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে এমজেএল বিডি। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের এক কোটি ৭২ লাখ টাকার, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের এক কোটি ৩৫ লাখ টাকার এবং ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসের এক কোটি দুই লাখ ৪০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
দর বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০ : ডিএসইতে গতকাল সর্বোচ্চ দর বেড়েছে বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির। কোম্পানিটির শেয়ার দর আগের দিনের তুলনায় ৩ টাকা ১০ পয়সা বা ৯.৭১ শতাংশ বেড়েছে। ফলে গতকাল ডিএসইর দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় প্রথম স্থানে ছিল কোম্পানিটির শেয়ার। মার্কেন্টাইল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ২ টাকা ২০ পয়সা বা ৯.৬৯ শতাংশ। আর ২ টাকা বা ৯.২১ শতাংশ দর বাড়ায় তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। এ ছাড়া শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের ৮.৭৪ শতাংশ, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালসের ৮.৫৯ শতাংশ, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের ৭.৬৯ শতাংশ, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের ৭.২৪ শতাংশ, রানার অটোমোবাইলসের ৭.০২ শতাংশ, নর্দান ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের ৬.৭৬ শতাংশ ও সি পার্ল রিসোর্টের ৬.৫৮ শতাংশ দর বেড়েছে।
দর পতনের শীর্ষ ১০ : ডিএসইতে গতকাল সবচেয়ে বেশি দর কমেছে ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেডের। কোম্পানিটির শেয়ার দর আগের দিনের তুলনায় ২২ টাকা ৫০ পয়সা বা ৭.২১ শতাংশ কমেছে। ফলে ডিএসইর দর পতনের শীর্ষ তালিকায় প্রথম স্থান নিয়েছে কোম্পানিটির শেয়ার। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার দর কমেছে আগের দিনের তুলনায় ৯০ পয়সা বা ৬.৫৬ শতাংশ। আর ১৬ টাকা ৮০ পয়সা বা ৫.৭০ শতাংশ দর কমেছে সোনালি আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের। এ ছাড়া শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডের ৫.৭০ শতাংশ, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ৫.৬৩ শতাংশ, সোনারগাঁও টেক্সটাইলের ৫.৪৭ শতাংশ, ইভিন্স টেক্সটাইলের ৫.৪০ শতাংশ, মনোস্পুল পেপারের ৫.১৭ শতাংশ, ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ৫.১২ শতাংশ এবং ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেডের শেয়ার দর ৫.০৫ শতাংশ কমেছে।
আজ স্পট মার্কেটে যাচ্ছে ১১ কোম্পানি : তালিকাভুক্ত ১১ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন আজ থেকে স্পট মার্কেটে হবে বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) জানিয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো বিডিকম, বিডি ল্যাম্পস, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক, এমজে বাংলাদেশ, রানার অটোমোবাইলস, এডিএন টেলিকম, তিতাস গ্যাস, সাইফ পাওয়ারটেক, সোনারগাঁও টেক্সটাইল ও মীর আক্তার হোসেন। কোম্পানিগুলোর শেয়ার লেনদেন ১৩ থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত স্পট মার্কেটে হবে। স্পট মার্কেটে লেনদেন শেষে রেকর্ড ডেটসংক্রান্ত কারণে ১৭ নভেম্বর কোম্পানিগুলোর শেয়ার লেনদেন বন্ধ থাকবে।
চট্টগ্রাম স্টকে সূচকে মিশ্রভাব : ঢাকাতে সবগুলো সূচকের পতন হলেও চট্টগ্রামে সিএসই-৩০ ছাড়া বাকি দুটোর বড় পতন হয়েছে। পাশাপাশি লেনদেন বেড়ে দুই অঙ্কে উন্নীত হয়েছে। তবে এখানে বেশির ভাগ কোম্পানি দর পতনের শিকার হয়েছে। সিএসই-৩০ সূচক ৪২.৪৮ পয়েন্ট বাড়লেও সিএসসিএক্স ১৬.৫৯ পয়েন্ট এবং সিএএসপিআই ৩৩.৮৭ শতাংশ কমেছে। ফলে সিএএসপিআই ফের ১৫ হাজার পয়েন্টের নিচে চলে এসেছে। এ দিন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে ২১১টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিলেও দর পতনের শিকার হয়েছে ১০৭টি, বেড়েছে মাত্র ৮৩টির, আর দর অপরিবর্তিত ছিল ২১টি কোম্পাানির। ২৪ লাখ ৭৩ হাজার ৫৭১টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ১২ কোটি ৬২ লাখ ২০ হাজার ৩৮ টাকায়।
বাজার বিশ্লেষক রয়্যাল ক্যাপিটাল বলছে, সূচকের পরবর্তী অবস্থা বুঝতে আগামী কিছু লেনদেন ঘণ্টা গুরুত্বপূর্ণ। বীমা খাতের শেয়ারগুলোতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখা গেছে। ডিএসইতে মূলধন সোমবারের তুলনায় ০.১৬ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে, ভলিউম ৫ শতাংশ কমেছে। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে ৪টি সেক্টরের শেয়ার মূল্য বেড়েছে। পক্ষান্তরে, ১৫টি সেক্টরের কমেছে। ফ্লোর প্রাইসে একটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ব্লক মার্কেটে ৩২.৩ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে; যা মোট লেনদেনের ৫.৫৯ শতাংশ। এসএমই বাজার সূচক (ডিএসএমইএক্স) ১১.৯৪ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৫৭.৭৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৭.১ কোটি টাকা, যা আগের দিন সোমবারের তুলনায় ৩ শতাংশ বেশি। সারাদিন মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেলেও দিনশেষে নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে বাজার শেষ হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা