পতনের জাল থেকে বেরুতেই কেনার চাপ : বিক্রেতা নগণ্য
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
- তিন দিনে শত পয়েন্ট হারিয়ে ৬৭ পয়েন্ট পেল ডিএসই
- ৮৮ শতাংশ ক্রেতার বিপরীতে ১২ শতাংশ বিক্রেতা
- বীমা খাতের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বৃদ্ধি
তিন দিনের মন্দা ও পতনে একশত পয়েন্ট হারিয়ে ৬৭ পয়েন্ট ফিরে পেয়েছে ঢাকা স্টকের প্রধান সূচক। পতনের বেড়াজাল থেকে বেরুতেই ক্রেতার কেনার চাপে পুঁজিবাজার। কিন্তু বিক্রেতা ছিল মাত্র ১২ শতাংশ। কেনার চাপে বাজারে দর বেড়ে যায় ৫০.১২ শতাংশ কোম্পানির। তবে উত্থানের পথে ফিরলেও ৩৩.৬৭ শতাংশ কোম্পানি ছিল দরপতনের কবলে। বীমা খাতের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। ডিএসইর বাজারমূলধন ০.৪৩ শতাংশ বেড়েছে বলে ডিএসইর দেয়া তথ্য থেকে জানা গেছে।
আর ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৭ পয়েন্ট বেড়েছে। এর মধ্যে সাত কোম্পানির মাধ্যমে বেড়েছে ৪৫ পয়েন্ট বা মোট সূচকের ৬৭ শতাংশ। কোম্পানিগুলো হলো : ইসলামী ব্যাংক, বিকন ফার্মা, গ্রামীণফোন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, স্কয়ার ফার্মা এবং খান ব্রাদার্স।
ডিএসইর দিনের লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইর লেনদেন শুরুর দেড় ঘণ্টায় অর্থাৎ বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ‘ডিএসইএক্স’ ১৮.৭৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান পাঁচ হাজার ২৮৪ পয়েন্টে উন্নীত হয়।
শরিয়াহ সূচক বা ‘ডিএসইএস’ ৪.৯৬ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১৮০ পয়েন্টে আর ‘ডিএস-৩০’ সূচক ৪.৬২ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯৫৮ পয়েন্টে উন্নীত হয়। একই সময়ে ডিএসইতে মোট ১৮০ কোটি ২৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সূচক আবার উপরের দিকে উঠতে থাকে। এরপর একটানা উপরের দিকে উঠে শেষ পর্যন্ত বড় উত্থান হয় পুঁজিবাজারে।
আর দিনের লেনদেন শেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স (ডিএসইএক্স) রোববারের তুলনায় ৬৭.৫৮ পয়েন্ট বেড়ে পাঁচ হাজার ৩৩৩.৪২ পয়েন্টে, ডিএসই-৩০ মূল্য সূচক ২৩.৭৭ পয়েন্ট বেড়ে এখন এক হাজার ৯৭৭.৪৫ পয়েন্টে এবং ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক (ডিএসইএস) ১৯.৭৮ পয়েন্ট বেড়ে এখন এক হাজার ১৯৫.২৯ পয়েন্টে উঠে এসেছে। লেনদেনকৃত ৩৯৫টি কো¤পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৯৮টির বা ৫০.১২ শতাংশের, দর কমেছে ১৩৩টির বা ৩৩.৬৭ শতাংশের এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৪টি কোম্পানির। ৩৯৫টি কোম্পানির মোট ১৮ কোটি ১৩ লাখ ২৪ হাজার ২৮টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে ৫৭৬ কোটি ৫৬ লাখ ৭৫ হাজার ৮০২ টাকা বাজারমূল্যে, যা গত রোববারের তুলনায় ১৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা বেশি হলেও শেয়ার বেচাকেনা তিন কোটি ৬৪ লাখ কমেছে। রোববার লেনদেন হয় ২১ কোটি ৭৭টির বেশি শেয়ার; মোট ৫৫৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে।
টাকায় লেনদেনে, দর বৃদ্ধি ও পতনে শীর্ষ ১০ : ডিএসইতে গতকাল টাকায় লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ ১০টি কোম্পানি হলো- বিএসসি, ইসলামী ব্যাংক, ওরিয়ন ফার্মা, ইউনিক হোটেল, তৌফিকা ফুড, ফারইস্ট নিটিং, জিপি, বেক্সিমকো ফার্মা, ওয়াই ম্যাক্স ইলেকট্রোড ও অগ্নি সিস্টেম। আর দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০টি কো¤পানি হলো- সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্স, রানার অটো, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রি, শিকদার ইন্স্যুরেন্স, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, তৌফিকা ফুড, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স ও ইসলামী ব্যাংক। এ ছাড়া দর পতনে শীর্ষ ১০টি কো¤পানি হলো- মনোস্পুল পেপার, স্টাইলক্র্যাফট, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, অ্যাম্বী ফার্মা, কে অ্যান্ড কিউ, আরামিট সিমেন্ট, শাহাজীবাজার পাওয়ার, ডেসকো, এনার্জিপ্যাক পাওয়ার ও সি পার্ল বিচ।
বিডি পেইন্টস দর নিয়ে ডিএসই’র সতর্কবার্তা : এ দিকে তালিকাভুক্ত এসএমই খাতের বিডি পেইন্টসের শেয়ার দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মনিটরিংয়ে উঠে এসেছে। ফলে কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগের আগে বিনিয়োগকারীদের সচেতন হওয়া উচিত বলে প্রতিষ্ঠানটি সতর্কবার্তা জারি করেছে।
ওয়েবসাইটে ডিএসই জানিয়েছে, কোম্পানির শেয়ার দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে ডিএসই কর্তৃপক্ষ কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠায়। ডিএসইর চিঠির উত্তরে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে ৩ নভেম্বর জানিয়েছে, কোনো রকম অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ারটির দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২৭ অক্টোবর বিডি পেইন্টসের শেয়ার দাম ছিল ১৬ টাকা ৪০ পয়সায়, যা ১১ নভেম্বর লেনদেন শেষে ক্লোজিং দাম হয়েছে ২৭ টাকা ৪০ পয়সায়। কোম্পানিটির শেয়ার দাম এভাবে বাড়াকে অস্বাভাবিক মনে করছে ডিএসই।
ব্লক মার্কেটে ১১৮ কোটি টাকার ট্রেড : ডিএসই’র ব্লক মার্কেটে গতকাল ২৫টি কোম্পানির মোট ১১৭ কোটি ৯৫ লাখ ১০ হাজার টাকায় তিন কোটি ৩০ লাখ ৪৭ হাজার ৪৪৬টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ কোম্পানির সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, বেক্সিমকো ফার্মা, ইউনাইটেড ফাইন্যান্স, বিচ হ্যাচারি এবং তাওফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসি। এই পাঁচ প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১০ কোটি ৪৭ লাখ টাকারও বেশি।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের। কোম্পানিটির ২৩ লাখ ৬৯ হাজার ৯৫০টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৮৪ কোটি ১০ লাখ ২৯ হাজার টাকায়, বেক্সিমকো ফার্মার ২০ লাখ শেয়ার হাতবদল হয়েছে মোট ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকায়। আর ছয় লাখ ২৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে- বিচ হ্যাচারির এক কোটি ৯৯ লাখ ২৪ হাজার টাকার এবং তাওফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসির এক কোটি ৭৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
চট্টগ্রাম স্টকেও সূচক ফিরেছে : চট্টগ্রাম শেয়ারবাজার বা সিএসইতে সবগুলো সূচকই পয়েন্ট ফিরে পেয়েছে। সিএসই-৩০ সুচক ২২.৫৭ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স ২৭.৬৬ পয়েন্ট এবং সিএএসপিআই ৪৫.৯৬ পয়েন্ট ফিরে পেয়েছে। গতকাল এক কোটি এক লাখ ৩৪ হাজার ৭৬৭টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৩৯ কোটি ৭৯ লাখ ৫৫ হাজার ৯৪৬ টাকা বাজারমূূল্যে। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৮৯টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৭৩টির, দর কমেছে ৮৮টির এবং দর পরিবর্তন হয়নি ২৮টির। বাজারমূূলদন বেড়ে এখন সাত লাখ সাত হাজার ৯৬২ কোটি ৪১ লাখ টাকায় দঁাঁড়িয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা