উত্থানে সূচনা ঘটলেও বড় পতনেই সমাপ্তি
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
- শেয়ারবাজারের লেনদেন ১৮.১১ কোটি টাকা বৃদ্ধি
- তিন দিনে ১০০ পয়েন্ট হারাল ডিএসই
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে ভরসা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। দিনের সূচনাতে যে অবস্থা থাকে, শেষটা হয় পতন বা হতাশা দিয়ে। স্থিতিশীলতা স্থায়ী হচ্ছে না। গতকালও বাজার সূচকের পয়েন্ট হারিয়েছে। বেশির ভাগ কোম্পানি দর পতনের কবলে ছিল। দুপুর ১২টার পর থেকে বাজার নেতিবাচক ধারায় ফিরে যায়। যার কারণে ৮৫ শতাংশ বিনিয়োগকারী ছিলেন বিক্রেতা। যেখানে ক্রেতা মাত্র ১৫ শতাংশ ছিলেন। এ ও জেড শ্রেণীর শেয়ারের যৎসামান্য ক্রেতা থাকলেও প্রাধাণ্য ছিল বিক্রির। তিন কার্যদিবসে ডিএসই’র প্রধান সূচক এক শ’ পয়েন্ট হারিয়েছে। লেনদেন বাড়লেও পতনের বাজারে ডিএসই মূলধন কমেছে ০.৫৬ শতাংশ বলে ডিএসইর দেয়া তথ্য থেকে জানা গেছে।
দিনের লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইর লেনদেন শুরুর দেড় ঘণ্টায় অর্থাৎ বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত প্রধান সূচক বা ‘ডিএসইএক্স’ ৯.২৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে পাঁচ হাজার ৩২৫ পয়েন্টে। আর শরিয়াহ সূচক ৩.৭৫ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১৯১ পয়েন্টে আর ‘ডিএসই-৩০’ সূচক ২.৭৯ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯৬৮ পয়েন্টে চলে আসে। দেড় ঘণ্টায় ১৮০ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। তবে এই গতিধারা ধরে রাখতে পারেনি শেষ পর্যন্ত। লেনদেন শেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স (ডিএসইএক্স) গত বৃহস্পতিবারের চেয়ে সূচক ৫০.৪৯ পয়েন্ট কমে এখন পাঁচ হাজার ২৬৫.৮৫ পয়েন্টে, ডিএসই-৩০ সূচক ১১.৮৬ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৯৫৩.৬৮ পয়েন্টে এবং ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক ১২.৪০ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৭৫.৫১ পয়েন্টে নেমেছে। লেনদেনকৃত ৩৯৪টি কো¤পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৬৩টির বা ১৫.৯৮ শতাংশের, দর কমেছে ২৯২টির বা ৭৪.১১ শতাংশের এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৯টি কোম্পানির। সপ্তাহের প্রথম দিনে ডিএসইতে গতকাল ৩৯৪টি কো¤পানির ২১ কোটি ৭৭ লাখ ২৮ হাজার ৯৮৫টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে ৫৫৯ কোটি ৬৬ লাখ ৬৩ হাজার ৭৩০ টাকায়, যা বৃহস্পতিবারের তুলনায় ১৮ কোটি ১১ লাখ টাকা বেশি। ওই দিন ৫৪১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়।
টাকায় লেনদেনে, দরবৃদ্ধি ও পতনে শীর্ষ ১০ : ডিএসইতে টাকায় লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ ১০ কো¤পানি হলো : বিএসসি, সোনালি আঁশ, ফারইস্ট নিটিং, ওরিয়ন ফার্মা, বীচ হ্যাচারী, ইসলামী ব্যাংক, ইউনিক হোটেল, খান ব্রাদার্স পিপি, ওরিয়ন ইনফিউশন ও আফতাব অটো। আর দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কো¤পানি হলো : খান ব্রাদার্স পিপি, শাহাজীবাজার পাওয়ার, লিগেসী ফুটওয়্যার, বীচ হ্যাচারী, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইভেন্স টেক্সটাইল, বিএসসি, জেএমআই সিরিঞ্জ, তসরীফা ইন্ডাস্ট্রি ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্স। এ ছাড়া দরপতনে শীর্ষ ১০ কো¤পানি হলো : প্রিমিয়ার সিমেন্ট, সোনালি আঁশ, ওরিয়ন ইনফিউশন, বিপিপিএল, অ্যাক্টিভ ফাইন, ফু-ওয়াং ফুড, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, নাভানা ফার্মা ও সিলভা ফার্মা।
ব্লক মার্কেটে ১১৮.৮২ কোটি টাকার ট্রেড : আর গতকাল ডিএসই’র ব্লক মার্কেটে ৩
৩টি কোম্পানির মোট ১১৮ কোটি ৮২ লাখ আট হাজার টাকায় ছয় কোটি ৫৮ লাখ ৫৮ হাজার ৯১৮টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ছয় কোম্পানির শেয়ার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে। ওই ছয় কোম্পানির ১১১ কোটি ৫৪ লাখ টাকার শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ইউনাইটেড ফাইন্যান্স, বেক্সিমকো ফার্মা, বীচ হ্যাচারী, এমজেএল বিডি, খান ব্রাদার্স এবং আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের। ছয় কোটি ৯ লাখ ৬৭ হাজার ৪২০টি শেয়ার মোট ৮৩ কোটি ৫২ লাখ ৫৪ হাজার টাকায় লেনদেন হয়েছে। বেক্সিমকো ফার্মার ২০ লাখ শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে মোট ১৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকায়। আর চার লাখ ৫২ লাখ ৯১ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে বীচ হ্যাচারী। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এমজেএল বিডির দুই কোটি ৭৭ লাখ ১৬ হাজার টাকার, খান ব্রাদার্সের দুই কোটি ৬০ লাখ ৭৮ হাজার টাকার এবং আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এক কোটি ৭৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
সিএসইতে মিশ্রভাব : চট্টগ্রাম স্টকের সূচকগুলো পতন ও বৃদ্ধি দুটোতেই ছিল। সিএসই-৩০ সূচক পয়েন্ট পেলেও সিএএসপিআই এবং সিএসসিএক্স পয়েন্ট হারিয়েছে। সিএসই-৩০ সূচক ১৭.৯৫ পয়েন্ট পেয়েছে। কিন্তু সিএএসপিআই ৫৫.৫৪ পয়েন্ট এবং সিএসসিএক্স ২৯.৯৭ পয়েন্ট হারিয়েছে। ২০৫টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিলেও দর পতনের শিকার ৬৮.২৯ শতাংশ বা ১৪০টি কোম্পানি। দর বৃদ্ধিতে ৪৭টি এবং দর অপরিবর্তিত ছিল ১৮টি কোম্পানির শেয়ার। টাকায় লেনদেন ও শেয়ার হাতবদল গতকাল বেশ কমেছে। ১৭ লাখ ৫৩ হাজার ৪৫৪টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট তিন কোটি ৯৭ লাখ ৩১ হাজার ২৬০ টাকা বাজার মূল্যে। বৃহস্পতিবার লেনদেন হয় পাঁচ কোটি তিন লাখ টাকার। সে হিসাবে গতকাল লেনদেন কমেছে এক কোটি ছয় লাখ টাকা।
ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের ৬.৯ কোটি শেয়ার বিক্রি : এ দিকে, তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের পাঁচ করপোরেট পরিচালক ছয় কোটি ৯ লাখ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তথ্য প্রকাশ করেছে। কোম্পানিটির পাঁচ করপোরেট পরিচালক ছয় কোটি ৯ লাখ ৬৭ হাজার ৪২০টি শেয়ার বিক্রি করবেন। এর মধ্যে লরি গ্রুপ পিএলসির তিন কোটি ৭৪ লাখ ২২ হাজার ৯২১টি শেয়ার, সুরমা ভেলি টি কোম্পানি এক কোটি ৫৪ লাখ ৮১ হাজার ২৪২টি শেয়ার, ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন ৪৮ লাখ ৫৫ হাজার ৬০২টি শেয়ার, ডানকান ব্রাদার্স (বাংলাদেশ) লিমিটেড ১৮ লাখ ৭১ হাজার ১৪৫টি শেয়ার এবং অক্টাভিয়াজ স্টিল অ্যান্ড কোম্পানি অব বাংলাদেশ ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৫১০টি শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে। আগামী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে ঘোষণাকৃত শেয়ার বিক্রি সম্পন্ন করবেন এই পাঁচ করপোরেট পরিচালক।
রয়্যাল ক্যাপিটাল বাজার বিশ্লেষণে বলছে, ডিএসইতে তিন দিনে সূচক কমলো ১০০ পয়েন্ট। দৈনিক চার্ট অনুযায়ী, সূচক পাঁচ হাজার ২১৬ থেকে পাঁচ হাজার ২৪৯ পয়েন্টের কাছাকাছি এসে সাপোর্ট পেতে পারে। বিক্রির চাপ বাড়লেও লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধি একটি ইতিবাচক দিক। ডিএসইএক্স ৫০ পয়েন্ট কমে ৫২৬৫ পয়েন্টে শেষ হয়। ঢাকার শেয়ার বাজারের প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) নিম্নমুখী ছিল। মূলধন গত দিনের তুলনায় ০.৫৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যেখানে ভলিউম ১৬ শতাংশ এবং টার্নওভার ৩ শতাংশ কমেছে। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে মাত্র একটি সেক্টরের শেয়ার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ১৮টি সেক্টরের শেয়ার মূল্য হ্রাস পেয়েছে। ফ্লোর প্রাইসে একটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ব্লক মার্কেটে ১৮৮.৮ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা মোট লেনদেনের ২১.২৩ শতাশ। এসএমই বাজার সূচক (ডিএসএমইএক্স) ১৯ পয়েন্ট কমে ১০৪৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে এবং লেনদেন হয়েছে ছয় কোটি টাকা, যা গত দিনের তুলনায় ৫৪ শতাংশ কম।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা