সূচক ঊর্ধ্বমুখী : ক্রয় চাপ ৯২ শতাংশে
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
- দীর্ঘদিন পর লেনদেন ৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে
- ডিএসইতে ১১২ পয়েন্ট এবং সিএসইতে ২৯১ পয়েন্ট ফিরেছে
- ব্যাংক ও বীমা খাতের শেয়ারের দর বাড়ায় গতিশীল বাজার
মূলধনী লাভের ওপর কর কমিয়ে দেয়ার ঘোষণায় দেশের পুঁজিবাজারের গতি বেড়েছে। বিনিয়োগবিমূখ ব্যক্তিরা এখন শেয়ার কেনার জন্য মরিয়া। ব্যাংক ওবীমা খাতের শেয়ারের মূল্য বাড়ায় সূচক ও লেনদেন গতিশীল হয়েছে। গতকাল ঢাকা ষ্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৯২ শতাংশ কেনার চাপে ছিল। বিপরীতে বিক্রেতা আগের দিনের মতোই মাত্র ৮ শতাংশ ছিল। সেঞ্চুরির বেশি হারে দুই বাজারেই সূচক বেড়েছে। বাজার ঊর্ধ্বমুখী ও চাহিদার কারণে গড়ে ৭৬ শতাংশের বেশি কোম্পানির দর বেড়েছে। ফলে বেশ কয়েক মাস পর লেনদেন খরার কবল থেকে এখন ৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এতে ডিএসইর বাজারমূলধন প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। গত ২ সেপ্টেম্বরের পর গতকাল ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকাল শুরু থেকেই বাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ডিএসইর লেনদেন শুরুর দুই ঘণ্টা পর অর্থাৎ দুপুর ১২.০৬টা পর্যন্ত ডিএসইএক্স ৯০.৬২ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৩৪৩ পয়েন্টে উন্নীত হয়। এ ছাড়া শরিয়াহ সূচক ১৬.৯৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৭৯ পয়েন্টে এবং ‘ডিএস-৩০’ সূচক ২৬.৭১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯৫৮ পয়েন্টে অবস্থান করছিল। এ সময় ডিএসইতে মোট ৪৪৪ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর ডিএসইএক্স সোমবারের তুলনায় ১১২.৫২ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৩৬৫. পয়েন্টে, ডিএসই-৩০ সূচক ৩০.১৬ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯৬৭.৭৬ পয়েন্টে এবং শরিয়াহ্ সূচক ২৯.১৮ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১৯১.৫৭ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। এদিন সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। ৩০ কোটি ৬৯ লাখ ২ হাজার ৪২৭টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে ৮৩৯ কোটি ৭০ লাখ ৫৫ হাজার ৭৬০ টাকায়। যেখানে সোমবার লেনদেন হয়েছিল ৫৬৫ কোটি ২৪ লাখ টাকার শেয়ার। সে হিসাবে গতকাল লেনদেন বেড়েছে ২৭৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৯৯টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৩০৪টি বা ৭৬.১৯ শতাংশের, পতন হয়েছে ৬৫টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৩০টির। আর ৩৭টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৫টির, কমেছে ৪টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৮টির। বাজারমূলধন ০.৮৮ শতাংশ বা প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বেড়ে এখন ৬ লাখ ৭২ হাজার ৯৬১ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
ব্লক মার্কেটে ৩১ কোম্পানি: ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল ৩১টি কোম্পানির ৫২ লাখ ৭৯ হাজার ৫০৯টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড মোট ২১ কোটি ৮ লাখ ৯৬ হাজার টাকায় হাতবদল হয়েছে। এরমধ্যে গতকাল ৫টি কোম্পানির শেয়ার বেশি লেনদেন হয়েছে। যার বাজারমূল্য ছিল ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকারও বেশি। কোম্পানিগুলো হলো- মিডল্যান্ড ব্যাংক, খান ব্রাদার্স, এমজেএল বিডি, বেক্সিমকো এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে মিডল্যান্ড ব্যাংকের শেয়ার। ব্যাংকটির ৫ কোটি ৩৫ লাখ ৭৯ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা খান ব্রাদার্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২ কোটি ৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকার। আর ১ লাখ ৯৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে এমজেএল বিডি। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে- বেক্সিমকোর ১ কোটি ৮০ লাখ ১১ হাজার টাকার এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের এক কোটি ৬৯ লাখ ৪৬ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
সিএসইর তিন সূচকের সেঞ্চুরিতে বৃদ্ধি : দেশের অপর শেয়ার বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) তিনটি সূচকই সেঞ্চুরির বেশি হাঁকিয়ে বেড়েছে। সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই ২৯১.৬০ পয়েন্ট বেড়ে এখন ১৪ হাজার ৮৭৬.৫৪ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স ১৮০.৩৬ পয়েন্ট বেড়ে ৯ হাজার ৫৪.৫৬ পয়েন্টে এবং সিএসই-৩০ সূচক ১৮৮.৩৭ পয়েন্ট বেড়ে এখন ১২ হাজার ২৮৩.৩৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর সিএসই-৫০ সূচক ২০.০৯ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১৩৯.৩৬ পয়েন্টে রয়েছে। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৩৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯৬টির বা ৮২.৩৫ শতাংশের দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ২৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫টির দাম।
এদিন সিএসইতে ৩০ লাখ ৪৪ হাজার ৫৬৭টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ৯৯ লাখ ৩১ হাজার ২১৬ টাকায়। সোমবার লেনদেন হয়েছিল ৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার। ফলে লেনদেন ৫০ লাখ টাকা কমেছে।
বিশ্লেষণের তথ্য বলছে, বাজার লেনদেন ২৭৪ কোটি টাকা বেড়ে ৮৩৯ কোটি টাকা হয়েছে। ঢাকার শেয়ার বাজারের প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) ঊর্ধ্বমুখী ছিল এবং মূলধন গতদিনের তুলনায় ০.৮৮ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে ভলিউম ৩৮ শতাংশ এবং টার্নওভার ৪৯ শতাংশ বেড়েছে। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে ১৬টির শেয়ার মূল্য বেড়েছে এবং ৩টি সেক্টরের শেয়ারের মূল্য কমেছে। ফ্লোর প্রাইসে ১টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ব্লক মার্কেটে ২১ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা মোট লেনদেনের ২.৫১ শতাংশ। এসএমই বাজার সূচক (ডিএসএমইএক্স) ১৫.৮১ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৪৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১১.৯ কোটি টাকা। যা আগের দিনের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি।