২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

পুঁজিবাজারে বড় পতন বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত

ডিএসইতে মূলধন কমেছে ০.৯৮ শতাংশ
-


বড় ধরনের সূচক ও দর পতন দিয়ে পুঁজিবাজার তার নতুন সপ্তাহ শুরু করল। বেশির ভাগ কোম্পানিই দুই বাজারে দর হারিয়েছে। টানা পতনের সাথে দেশের পুঁজিবাজারে চলছে নীরব রক্তক্ষরণ। তার সাথে লাখো বিনিয়োগকারী এখন চরমভাবে শঙ্কিত। কোনো ধরনের উন্নতি তো দূরের কথা বাজারের পতন কোনোভাবেই ঠেকাতে পারছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। গতকাল ঢাকা স্টকে ৮৬.৫ শতাংশ এবং চট্টগ্রাম স্টকে ৭৮.৬৯ শতাংশ কোম্পানি দর পতনের শিকার ছিল। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ও বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভয়াবহ দরতপন হচ্ছে দেশের পুঁজিবাজারে। এই পতনকে ঠেকাতে পারছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এতে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন। চরমভাবে আতঙ্কে তারা। তাদের নীরব রক্তক্ষরণ হচ্ছে। পুঁজি হারানোর দুশ্চিন্তায় তারা রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না। বিনিয়োগকৃত পুঁজি এখন কারো কারো অর্ধেকে এবং কারো কারো ৬০ শতাংশের বেশি হারিয়ে গেছে।

দিনের লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইতে লেনদেনে শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা ৫০ মিনিটের পরই পতনের ধারায় প্রবেশ করে। সেই পতন শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসই’র প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ আরো ৯৭.২৪ পয়েন্ট কমে এখন পাঁচ হাজার ১৬০.৭৩ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচকও ‘ডিএসইএস’ আরো ১৮.৫৬ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৫৫.৫৭ পয়েন্টে আর ‘ডিএসই-৩০’ সূচক আরো ৩৪.১৪ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৮৯৬.২৫ পয়েন্টে চলে এসছে। ডিএসইতে মোট চৌদ্দ কোটি ৮২ লাখ ৯ হাজার ১৯৯টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৩৬২ কোটি ৪২ লাখ ১৯ হাজার ২৭১ টাকা। বাজারমূল্যে যা গত বৃহস্পতিবারের তুলনায় ৫৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বেশি। ওই দিন লেনদেন হয়েছিল ৩০৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকার। বাজারমূলধন ০.৯৮ শতাংশ বা ছয় হাজার ৫৫১ কোটি টাকা কমে এখন ছয় লাখ ৬২ হাজার ৬১৫ কোটি ১৭ লাখ টাকায় অবস্থান করছে। ১৯টি খাতের মধ্যে ১৮টি খাতই মূল্য পতনের শিকার।

লেনদেন হওয়া ৪০০টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২৭টির, কমেছে ৩৪৬টির বা ৮৬.৫ শতাংশের এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৭টির বাজারদর। অন্য দিকে ডিএসই এসএমই মার্কেটের সূচক ‘ডিএসএমইএক্স’ ৪৭ দশমিক ০২ পয়েন্ট কমে দাড়িয়েছে এক হাজার ৬৬ পয়েন্টে। ডিএসই এসএমই প্লাটফর্মে এ দিন ১৯টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছয়টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৩টির। এসএমইতে গতকাল তিন কোটি ২৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে আটটি কোম্পানির শেয়ার ছিল ক্রেতাশূন্য। ৪০০টি ক্রেতাশূন্য কোম্পানি হলো : সোনারগাঁও টেক্সটাইল, আজিজ পাইপস, খুলনা পাওয়ার, নিউ লাইন ক্লোথিংস, এস্কয়ার নিট কম্পোজিট, সিলভা ফার্মা, মুন্নু ফেব্রিক্স এবং ন্যশনাল টি।

ব্লক মার্কেটে ২৪ কোম্পিানি : আর ডিএসই ব্লক মার্কেটে ২৪টি কোম্পানির ৫৮ লাখ ৩৪ হাজার ৯০৬টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে মোট ১৬ কোটি ৮৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকা বাজারদরে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া পাঁচ প্রতিষ্ঠান হলো, লাভেলো আইসক্রিম, ব্যাংক এশিয়া, বেক্সিমকো, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স এবং ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড। এই পাঁচ প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৬০ লাখ টাকারও বেশি। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে লাভেলো আইসক্রিমের। কোম্পানিটির পাঁচ কোটি ৮৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ব্যাংক এশিয়ার দুই কোটি ৫৬ লাখ ৪৯ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর দুই কোটি ৩০ লাখ ৯ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের দুই কোটি আট লাখ ৩৫ হাজার টাকার এবং ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

দর পতনের শীর্ষ ১০ : ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে সোনারগাঁও টেক্সটাইল লিমিটেডের। কোম্পানিটির শেয়ার দর আগের দিনের তুলনায় দুই টাকা ১০ পয়সা বা ৯.৯০ শতাংশ কমেছে। যার ফলে ডিএসইর দর পতনের শীর্ষ তালিকায় প্রথম স্থান নিয়েছে কোম্পানিটির শেয়ার। দর পতনের শীর্ষ তালিকায় থাকা আজিজ পাইপসের শেয়ার দর কমেছে আগের দিনের তুলনায় পাঁচ টাকা ৮০ পয়সা বা ৯.৮৪ শতাংশ। আর এক টাকা বা ৯.৭০ শতাংশ দর কমে যাওয়ায় পতনের শিকার খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। এ ছাড়া ডিএসইতে দর পতনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ৯.৫২ শতাংশ, এস্কয়ার নিটের ৯.৫২ শতাংশ, নিউলাইন ক্লোথিংসের ৯.৫২ শতাংশ, ইনডেক্স অ্যাগ্রোর ৯.৫০ শতাংশ, মুন্নু ফেব্রিক্সের ৯.৪৩ শতাংশ, সিলভা ফার্মার ৯.৪৩ শতাংশ এবং সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার দর ৯.২৯ শতাংশ কমেছে।

দর বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০: ৪০০টি কোম্পানির মধ্যে ২৭টির দর বেড়েছে। সর্বোচ্চ দর বেড়েছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের। কোম্পানিটির শেয়ার দর আগের দিনের তুলনায় পাঁচ টাকা ৭০ পয়সা বা ৮.৯৩ শতাংশ বেড়েছে। যার ফলে ডিএসইর দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় প্রথম স্থান নিয়েছে কোম্পানিটির শেয়ার। দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় থাকা ইফাদ অটোস পিএলসির দর বেড়েছে এক টাকা ৭০ পয়সা বা ৭.৭২ শতাংশ। আর চার টাকা ৩০ পয়সা বা ৪.৫৬ শতাংশ শেয়ার দর বৃদ্ধি পাওয়ায় তালিকায় রয়েছে তাওফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসি। এ ছাড়া ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে আইডিএলসি ফাইন্যান্সের ৩.৫৫ শতাংশ, তাকাফুল ইন্স্যুরেন্সের ৩.৪৯ শতাংশ, ইউনিলিভার কনজ্যুমারের ২.৬০ শতাংশ, এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ২.৫৬ শতাংশ, ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের ২.৪৩ শতাংশ, ডিবিএইচ ফাইন্যান্সের ১.৬৪ শতাংশ এবং তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ১.৪৭ শতাংশ দর বেড়েছে।
বীমার আট লাখ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা : তালিকাভুক্ত কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের এক উদ্যোক্তা আট লাখের বেশি শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তথ্যটি প্রকাশ করেছে। ডিএসই বলছে, কোম্পানির উদ্যোক্তা ডলি ইকবালের কাছে আট লাখ ৭৫ হাজার ৭২টি শেয়ার রয়েছে। এখান থেকে তিনি আট লাখ ৩৩ হাজার ৪০২টি শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ঘোষণাকৃত শেয়ার বিক্রি সম্পন্ন করবেন এই উদ্যোক্তা।

সিএসইতে ৩ সূচক গড়ে দেড় শ’ পয়েন্ট হারিয়েছে : আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) তিনটি মূল্যসূচকই দেড় শ’ পয়েন্টের বেশি হারে পড়েছে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই আরো ২৭১.৫৩ পয়েন্ট হারিয়ে এখন ১৪ হাজার ৫৪৯ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স ১৬১.৫৭ পয়েন্ট হারিয়ে এখন আট হাজার ৮৫০.৬৪ পয়েন্ট এবং সিএসই-৩০ সূচক ১৭৯.২৫ পয়েন্ট হারিয়ে এখন ১১ হাজার ৯২৬.৯৭ পয়েন্ট নেমে এসেছে। সিএসইতে ২৩০টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৬টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৮১টির বা ৭৮.৬৯ শতাংশের এবং ২৩টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ২৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮০৮টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ছয় কোটি ৩৩ লাখ ৬২ হাজার ৭০৮ টাকায়। গত বৃহস্পতিবারের তুলনায় বেড়েছে। ওই দিন চার কেটি ৬৪ হাজার টাকার লেনদেন হয়। ফলে এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা বেড়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement