বিক্রির চাপে ব্যাংকের শেয়ার সূচকের পতন : আশায় নিরাশা
বেচাকেনার চাপ এখন সমানে সমান- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৪১
দেশের ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর দীর্ঘদিন যাবত পতনের জালে আটকা পড়ে আছে দেশের পুঁজিবাজার। বেরিয়ে আসার পথ পাচ্ছে না। মন্দা বাজারের কারণে বিক্রির চাপ ছিল বেশি। তবে গতকাল বেচাকেনার চাপ ছিল সমানে সমান। সূচনায় বাজার গতকাল ভালোই ছিল। মাঝপথে ব্যাংকিং খাতের শেয়ারগুলো বিক্রির চাপ বেড়ে যাওয়ায় পতনের পথ ধরে সূচক। ফলে বাজার নেতিবাচক ধারায় ফিরে আসে অল্প সময়ের ব্যবধানে। চলতি সপ্তাহে গত তিন দিনে সূচক গড়ে ২০০ পয়েন্ট করে হারিয়েছে। গতকাল সকালের দিকে যে আশাটা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ছিল দুপুরেই তা নিরাশায় পরিণত হয়।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার পতনের পর অন্যসব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের মতো পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনেও (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়। এই নিয়োগ নিয়েও নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়। নতুন চেয়ারম্যান আসায় বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্টদের ধারণা ছিল এবার হয়তো শেয়ারবাজার উত্থানে ফিরবে। কিন্তু সেই আশায় গুরেবালি।
দুই পুঁজিবাজারের দিনের লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা য়ায়, গতকাল ডিএসইতে উত্থানে শুরু হয় লেনদেন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন শুরুর কিছু সময় পর সূচক ৩৭ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৩৭২ পয়েন্ট পর্যন্ত উঠে আসে। প্রথম ২ ঘণ্টায় অর্থাৎ দুপুর ১২টা পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান সূচক বা ‘ডিএসইএক্স’ ১৮ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৩১৬ পয়েন্টে নেমে আসে। আর শরিয়াহ সূচক বা ‘ডিএসইএস’ ৪ দশমিক ০৬ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৮৫ পয়েন্টে এবং ডিএস-৩০’ সূচক ১২ দশমিক ৩০ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৯২৯ পয়েন্টে নেমে আসে। মূলত গতকাল বিএসইসি দেশের শীর্ষ তিন গ্রুপ প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ এবং পিএইচপি গ্রুপের সঙ্গে বৈঠক করে। এই বৈঠকের খবরেই শেয়ারবাজার উপরের দিকে উঠতে শুরু করে। তবে অজানা কোনো কারণে পুঁজিবাজার আবার পতনে নামতে থাকে। শেষ পর্যন্ত পতনেই শেষ হয় দিনের লেনদেন। ফলে পতনের বেড়াজালেই আবদ্ধ হয়ে পড়ে পুঁজিবাজার।
দিন শেষে ডিএসইর ডিএসইএক্স সোমবারের চেয়ে সূচক আরো ১১.৮৪ পয়েন্ট হারিয়ে ৫ হাজার ৩২৩.২২ পয়েন্টে, ডিএসই-৩০ সূচক আরো ৩.০১ পয়েন্ট হারিয়ে এক হাজার ৯৩৯.২১ পেেয়ন্টে এবং ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক আরো ১.৬৫ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৮৭.৭৪ পয়েন্টে নেমে এসেছে। লেনদেনকৃত কো¤পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৪২টির, কমেছে ১৯৫টির বা ৪৮.৭৫ শতাংশ এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৩টি কোম্পানির। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মোট চারশ’টি কো¤পানির ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৭৫ হাজার ৯৮৫টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। যার গতকালের বাজারমূল্য ছিল ৩৫৫ কোটি ৩৭ লাখ ৫৩ হাজার ৩৯৪ টাকা। আগের দিন সোমবার লেনদেন হয় ৩৬৬ কোটি টাকার। ফলে লেনদেন কমেছে ১১ কোটি টাকা।
লেনদেন, দর বৃদ্ধি ও দর পতনের শীর্ষ কোম্পানি: লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) ১০ কো¤পানি হলো: ব্র্যাক ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা, ইসলামী ব্যাংক, জিপি, অগ্নি সিস্টেম, তৌফিকা ফুড, এসআইবিএল, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ইউনিক হোটেল ও এনআরবি ব্যাংক। দর বৃদ্ধির শীর্ষে ১০ কো¤পানি হলো: খান ব্রাদার্স পিপি, জিপিএইচ ইস্পাত, আফতাব অটো, বীকন ফার্মা, অরিয়ন ফার্মা, অলিম্পিক ইন্ডা:, এনআরবি ব্যাংক, তৌফিকা ফুড, প্রাইম ফাইন্যান্স ১ম মি. ফা. ও আরডি ফুড। আর দর হারানোয় শীর্ষ ১০ কো¤পানি হলো: তসরীফা ইন্ডা:, মেঘনা পেট, বিআইএফসি, প্রাইম ইসলামী লাইফ, প্রভাতী ইন্সুঃ, প্রাইম টেক্স, গ্লোবাল ইন্সু:, আরএসআরএম স্টিল, বিডি ফাইন্যান্স ও জুট স্পিনার্স।
ব্লক মার্কেটে ২৬ কোম্পানির লেনদেন : আর ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল ২৬টি কোম্পানির ৫৭ লাখ ৫০ হাজার ৬৩টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেনে অংশ নেয়। যার গতকালের বাজারমূল্য ছিল ২১ কোটি ৩৯ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে আট কোম্পানির শেয়ার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বলে ডিএসইর তথ্য থেকে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- খান ব্রাদার্স, লাভেলো আইসক্রিম, অগ্নি সিস্টেমস, এনআরবিসি ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা, বেক্সিমকো, প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্স এবং ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি। আট প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ৩২ লাখ টাকারও বেশি। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে খান ব্রাদার্সের। কোম্পানিটির ৫ কোটি ৯৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লাভেলো আইসক্রিমের ২ কোটি ৯৫ লাখ ৯৩ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর ২ কোটি ১২ লাখ ৩৭ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে অগ্নি সিস্টেমস। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে- এনআরবিসি ব্যাংকের ১ কোটি ৫০ লাখ ৪০ হাজার টাকার, স্কয়ার ফার্মার ১ কোটি ৪১ লাখ ৭৯ হাজার টাকার, বেক্সিমকোর ১ কোটি ৪০ লাখ ৭৮ হাজার টাকার, প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্সের ১ কোটি ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকার এবং ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসির ৮৫ লাখ ৪২ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
চট্টগ্রাম স্টকে সব সূচকই পতনের ধারায় : চট্টগ্রাম স্টক মার্কেটে সূচকগুলো পয়েন্ট ফিরে পাচ্ছে না। পতনের ধারায় অব্যাহতভাবে পয়েন্ট হারানোর ফলে সূচকে এখন শুষ্কতার আভাস। সিএসই-৫০ সূচক ৪.৫৪ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ১২৯.৭২ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স ২৯.৪০ পয়েন্ট এবং সিএএসপিআই ৫১ পয়েন্ট হারিয়েছে। ১৯৩টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিলেও দর পতনের শিকার ৯৫টি, দর বৃদ্ধিতে ৭০টি এবং দর অপরিবর্তিত ২৮টি। আটাশ লাখ চুয়াত্তর হাজার ৭২০টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বেচাকেনা হয়েছে মোট ১১ কোটি ৩২ লাখ ৬৩ হাজার ৭৯৩ টাকা বাজারমূল্যে।