২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

পুঁজি বাঁচাতে শেয়ার বিক্রিতে মরিয়া ৮৬ শতাংশ

দুই বাজারে এক দিনেই মূলধন উধাও সোয়া ১০ হাজার কোটি টাকা
-

পুঁজিবাজারে দরপতন ও মন্দাবস্থা চরমের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে। অব্যাহত দরপতনে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ নিয়ে এখন শঙ্কিত। পুঁজি বাঁচাতে শেয়ার বিক্রি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ৮৬ শতাংশের বেশি সাধারণ বিনিয়োগকারী। কিন্তু এই মন্দায় ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছে না তারা। মাত্র ১৪ শতাংশ ক্রেতা পাওয়া গেছে গতকালের বাজারে। ৭৩ শতাংশ কোম্পানি দরপতনের শিকারের কারণে বিক্রির পর টাকা বাজারে ফিরছে না। ফলে গতকাল দুই পুঁজিবাজার থেকে সোয়া ১০ হাজার কোটি টাকা চলে গেছে।
দিনের লেনদেনের তথ্য থেকে দেখা যায়, লেনদেনের সূচনাটা যেভাবে হয় মাঝ পথে এসে সেটা আর ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ডিএসইতে লেনদেন শুরুর প্রথম ঘণ্টায় অর্থাৎ বেলা ১১টা পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান সূচক বা ‘ডিএসইএক্স’ ৩ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৫ হাজার ৩৮২ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক বা ‘ডিএসইএস’ ৩ দশমিক ৯০ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৯৪ পয়েন্টে আর ‘ডিএস-৩০’ সূচক ১ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯৬৫ পয়েন্টে চলে আসে। ১১.৫৮টায় সূচক দিনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বেড়ে ৫ হাজার ৪১১.৩১ পয়েন্ট উন্নীত হয়। এর পরই শুরু হয় পতনের ধারা। শেষ হয় পতন দিয়েই। প্রথম ঘণ্টায় ডিএসইতে মোট ৮৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৪৭ টির, কমেছে ১৪৫ টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৭৪ টি কোম্পানির শেয়ারদর।
আর দিনশেষে ডিএসইর ডিএসইএক্স সূচক রোববারের চেয়ে সূচক আরো ৪৩.৭২ পয়েন্ট হারিয়ে এখন ৫ হাজার ৩৩৫.০৬ পযেন্টে, ডিএসই-৩০ সূচক ২২.০৯ পয়েন্ট হারিয়ে এক হাজার ৯৪২.২২ পয়েন্টে এবং ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক ১.৪৭ পয়েন্ট হারিয়ে এক হাজার ১৮৯.৩৯ পয়েন্টে নেমে এসেছে। লেনদেনকৃত কো¤পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৫৩টির, কমেছে ২৮৮টির কা ৭২.৭২ শতাংশের এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৫টি কোম্পানির। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মোট ৩৯৬টি কো¤পানির ১২ কোটি ৮৬ লাখ ২ হাজার ২১১টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে। যার গতকালের বাজারমূল্য ছিল ৩৬৬ কোটি ৫৫ লাখ ৩৭ হাজার ৩১ টাকা। এটি রোববারের চেয়ে এক কোটি টাকার কিছু বেশি কম। ওই দিন ৩৬৮ কোটি ১৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়। ডিএসইর বাজারমূলধন ০.৭৯ শতাংশ বা ৫ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা কমে একন ৬ লাখ ৬১ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকায় নেমেছে।
ব্লক মার্কেটে লেনদেনে ২১ কোম্পানি : আর ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল ২১টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব কোম্পানির ৬৩ লাখ ৪৮ হাজার ৮৩৫টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ২০ কোটি ৫২ লাখ ৩৬ হাজার টাকায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে সাত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বলে ডিএসইর তথ্য থেকে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑ অগ্নি সিস্টেমস, বিকন ফার্মা, বেক্সিমকো, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স এবং আলহাজ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড। এই সাত প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকারও বেশি।
আর প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে অগ্নি সিস্টেমসের। কোম্পানিটির ৩৩ লাখ ৯৯ হাজার ৫০৩টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে ১১ কোটি ৮৯ লাখ ১১ হাজার টাকায়। বিকন ফার্মার ২ কোটি ৪৮ লাখ ৪০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর ১ কোটি ৪৮ লাখ ৪০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেÑ মিডল্যান্ড ব্যাংকের ১ কোটি ২৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকার, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকার, ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের ৩৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার এবং আলহাজ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের ৩৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
লেনদেন, দর পতন ও দর বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০ : ডিএসইর লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) শীর্ষ ১০ কো¤পানি হলোÑ মিডল্যান্ড ব্যাংক, অগ্নি সিস্টেম, ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, তৌফিকা ফুড, জিপি, স্কয়ার ফার্মা, বিএসসি, এসআইবিএল ও ইবনে সিনা ফার্মা। দর বৃদ্ধির শীর্ষে ১০ কো¤পানি হলোÑ ইসলামী ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ইন্সুঃ, ইসলামিক ফাইন্যান্স, তাকাফুল ইন্সুঃ, অগ্নি সিস্টেম, আইসিবি এএমসিএল ২য় মি. ফা., ইবিএল ১ম মি. ফা., ফু-ওয়াং ফুড, এসআইবিএল ও ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক। দর পতনের শীর্ষে ১০টি কো¤পানি হলোÑ এনটিসি, বিএসসি, রেনউইক যজ্ঞেশ^র, কেপিপিএল, খান ব্রাদার্স পিপি, সেন্ট্রাল ফার্মা, জিবিবি পাওয়ার, সোনালি লাইফ, রহিমা ফুড ও দেশ গার্মেন্ট।
সিএসইতে দেড় শতাধিক পয়েন্ট নেই : এ দিকে, চট্টগ্রাম স্টকে গতকাল দুটি সূচক সেঞ্চুরির বেশি হারে পয়েন্ট হাারিয়েছে। অন্যান্য সূচকও পয়েন্ট হারিয়ে চলেছে ৬৩ শতাংশ কোম্পানি দর পতনের শিকার। সিএএসপিআই ১৫৪.৫০ পয়েন্ট হারিয়ে ১৫ হাজার ১২.৭৫ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স ৮৮.১২ পয়েন্ট হারিয়ে ৯ হাজার ১১৫ পয়েন্টে, সিএসই-৩০ সূচক ১২১.৮৪ পয়েন্ট হারিয়ে ১২ হাজার ২৪৫.৫০ পয়েন্টে নেমে এসেছে। লেনদেনে অংশ নেয়া ১৯৫টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৪৭টি। দর পতনের শিকার ১২২টি বা ৬৩ শতাংশ আর দর অপরিবর্তিত ২৬টি কোম্পানি। ১৮ লাখ ৮৬ হাজার ২৮৭টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে পাঁচ কোটি ৭৯ লাখ ১৬ হাজার ২৬০ টাকা বাজার মূল্যে। আর বাজার মূলধন ৫ হাজর ৪৩ কোটি টাকা কমে এখন ছয় লাখ ৯৮ হাজার ৮৯০ কোটি টাকায় নেমেছে। যেখানে রোববার ছিল সাত লাখ ৩ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা।
বিশ্লেষকরা বলছেন: প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষক রয়্যাল ক্যাপিটাল বলছে, আস্থার সঙ্কট ঘনীভূত হচ্ছে। সূচকের ৫৩শ’ পয়েন্টের সাপোর্টের অপেক্ষায় বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি আস্থা হারানোর ফলে দুপুর ১২.৩০ এর পর বাজারের প্রধান সূচক নিম্নমুখিতা দেখা যায়। ডিএসইএক্স ৪৩ পয়েন্ট কমে ৫৩৩৫ পয়েন্টে শেষ হয় এবং বাজার লেনদেন হয়েছে ৩৬৬ কোটি টাকা।


আরো সংবাদ



premium cement