০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ৩ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

ব্যাংকিং সেক্টর দর হারাল আতঙ্কে সূচকের বড় পতন

-

- মধ্য আগস্ট থেকে সূচকের ক্রমাগত পতনে পরিস্থিতি খারাপে
- ডিএসইর বাজারমূলধন কমেছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

স্থিতিশীলতা কোনোভাবেই আসছে না। পটপরিবর্তনে পুঁজিবাজার পরিস্থিতির সূচনাতে কিছুটা আশা দেখালেও এখন ক্রমাগত পতনে পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে। দিনের শুরুতে ৩২ পয়েন্ট বাড়লেও লেনদেনের মধ্যভাগের পর সূচক একটানা পড়তে থাকে। দুপুর ১২টার পর থেকে বাজার টানা নিম্নমুখী। ৭৬ শতাংশ বিক্রির চাপের বিপরীতে ক্রেতা মাত্র ২৫ শতাংশ। লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর দেড় শতাধিক কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দুই ব্যাংকের শেয়ারে লেনদেনের একপর্যায়ে ক্রেতা উধাও হয়ে যায়। ব্যাংক দুইটি হলো: ইসলামী ব্যাংক এবং সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক। আর এক দিনেই ডিএসইর বাজারমূলধন থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা চলে গেছে। ডিএসইর সূচক কমেছে ৮৩.৮০ পয়েন্ট।

দিনের লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দিনের শুরুর অবস্থাটা মাঝপথে এসে ছন্দপতনে উত্থান থেকে পতনে হারিয়ে যায়। আর ৫ আগস্ট পরবর্তী ৪ কার্যদিবসে সূচক প্রায় এক হাজার পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। তবে এর পরবর্তীতে সূচকের ক্রমাগত পতন একে আগের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। গতকাল দুপুর ১২টার পর থেকেই পতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা নেমে আসে। বেড়ে যায় বিক্রির চাপ। দুর্ভাগ্য ডিএসইএক্স ৮৩.৮১ পয়েন্ট হারিয়ে ৫ হাজার ৩৭৮.৭৮ পয়েন্টে, ডিএসই-৩০ সূচক ২৬.৫৪ পয়েন্ট হারিয়ে এখন এক হাজার ৯৬৪.৩১ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক (ডিএসইএস) ৩০.৪১ পয়েন্ট হারিয়ে এক হাজার ১৯০.৮৬ পয়েন্টে নেমে এসেছে। লেনদেনকৃত ৩৯২টি কো¤পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৮০টির, কমেছে ১৫৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৬টির শেয়ার। ডিএসইতে মোট ৩৯২টি কোম্পানির ১৪ কোটি ২০ লাখ ৯৫ হাজার ৯৮৫টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে। যার গতকালের বাজরমূল্য ছিল ৩৬৮ কোটি ১৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৪২ টাকা, যা গত বৃহস্পতিবারের তুলনায় ৫৩ কোটি টাকা লেনদেন বেড়েছে। ওই দিন ৩১৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়। বাজারমূলধন একদিনে ০.৮২ শতাংশ বা পাঁচ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা কমে এখন ছয় লাখ ৬৬ হাজার ৬৩০ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

লেনদেন, দর বৃদ্ধি ও দর পতনে শীর্ষ: লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) ১০টি কোম্পানি হলো- ইসলামী ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, এসআইবিএল, টেকনোড্রাগ, লাফার্জ হোলসিম, জিপি, ইবনে সিনা ফার্মা, অগ্নি সিস্টেম ও এমজেএল বিডি। দর বৃদ্ধির শীর্ষে ১০টি কোম্পানি হলো- ফু-ওয়াং সিরামিকস, ফু-ওয়াং ফুড, আরডি ফুড, দেশবন্ধু পলিমার, এসআলম কোল্ড, নাভানা ফার্মা, মেট্রো স্পিনিং, ডমিনেজ স্টিল, সিএনএ টেক্সও মাইডাস ফাইন্যান্স। দর পতনে শীর্ষে প্রধান ১০টি কোম্পানি হলো- ইসলামী ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স, এসআইবিএল, খান ব্রাদার্স পিপি, এনটিসি, দুলামিয়া কটন, ইসলামিক ফাইন্যান্স, ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক, আফতাব অটোস ও ডিবিএইচ ফার্স্ট মি. ফা.।

ব্লক মার্কেটে ৩৪.০২ লাখ শেয়ার ট্রেড
আর ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল ১৫ কোম্পানির ৩৪ লাখ ২ হাজার ২৭৪টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৭ কোটি ৪৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা বাজারমূল্যে। এর মধ্যে পাঁচ কোম্পানির শেয়ার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- মিডল্যান্ড ব্যাংক, বেক্সিমকো, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স, ন্যাশনাল ব্যাংক এবং এনসিসি ব্যাংক পিএলসি। এই পাঁচ প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকারও বেশি। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে মিডল্যান্ড ব্যাংকের। ব্যাংকটির ২ কোটি ১৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বেক্সিমকোর ১ কোটি ৪৮ লাখ ৭ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর ১ কোটি ৩৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে- ন্যাশনাল ব্যাংকের ৭৮ লাখ ৪০ হাজার টাকার এবং এনসিসি ব্যাংক পিএলসির ৩৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

সিএসইতে সূচকের বড় পতন : চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সবগুলো সূচকই উল্লেখ করার মতো পয়েন্ট হারিয়েছে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১০৪.৫২ পয়েন্ট হারিয়ে এখন ১৫ হাজার ১৬৭ পয়েন্টে। আর সিএই-৫০ সূছক ১২.৭৫ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৮৯.৯৪ পয়েন্ট এবং সিএসসিএক্স ৭১.৩২ পয়েন্ট হারিয়েছে। সিএসইতে ২০১টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০০টির দর বেড়েছে, কমেছে ৮১টির এবং ২০টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৩৩ লাখ ৮৩ হাজার ৪০৮টি শেয়ার ও মিউচুয়ালর ফান্ড হাতবদল হয়েছে ৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকায়, যা বৃহস্পতিবারের তুলনায় প্রায় সাত কোটি টাকা বেশি। ওই দিন ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়।

দুই কোম্পানির ১৮ লাখ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা : তালিকাভুক্ত দুই কোম্পানির দুই উদ্যোক্তা ১১ লাখ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তাদের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করেছে। কোম্পানি দুইটি হলো : লাফার্জহোলসিম এবং সাউথইস্ট ব্যাংক। লাফার্জহোলসিমের করপোরেট উদ্যোক্তা সিনহা ফ্যাশনস লিমিটেডের কাছে ২ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার আছে। এখান থেকে এই করপোরেট উদ্যোক্তা ১১ লাখ ৫ হাজার শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে। অপর কোম্পানি সাউথইস্ট ব্যাংকের উদ্যোক্তা রেহানা কাশেমের কাছে ৭০ লাখ ২৪ হাজার ২৭টি শেয়ার আছে। এখান থেকে তিনি ৭ লাখ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ঘোষণাকৃত শেয়ার বিক্রি সম্পন্ন করবেন এই দুই উদ্যোক্তা।

অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ১২.২৫ একর জমি কিনবে : এ দিকে তালিকাভুক্ত অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ১২.২৫ একর জমি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তথ্য প্রকাশ করেছে। গত ৫ অক্টোবর কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ সভায় জমি কেনার এই সিদ্ধান্ত হয়। জানা গেছে, কোম্পানিটি রাজধানীর বসুন্ধরা বারিধারা আবাসিক এলাকায় ১২.২৫ কাঠা জমি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই জমি কিনতে প্রতি কাঠা ৯৪ লাখ টাকা হিসেবে ১১ কোটি ৫১ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ হবে। কোম্পানিটি আরো জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ের কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ললাটি মৌজায় ৬.১৩ ডেসিমেল জমি কিনবে। এই জমি কিনতে কোম্পানিটিরি ১৫ লাখ ৩২ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হবে। এই জমি ক্রয়ে রেজিস্ট্রেশনসহ অন্যান্য খরচ কোম্পানি বহন করবে।

রয়্যাল ক্যাপিটাল বাজার বিশ্লেষণে বলছে, ব্যাংকিং সেক্টরের শেয়ারের দরপতন। আতঙ্ক ছড়িয়ে সূচক কমল ৮৩ পয়েন্ট। ডিএসইএক্স ৮৩ পয়েন্ট কমে ৫৩৮ পয়েন্টে শেষ হয় এবং বাজার লেনদেন ৫৩ কোটি টাকা বেড়ে ৩৬৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ডিএসইএক্স নিম্নমুখী ছিল এবং মূলধন গত দিনের তুলনায় ০.৮২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যেখানে ভলিউম ১৪ শতাংশ এবং টার্নওভার ১৭ শতাংশ বেড়েছে। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে ৬টি সেক্টরের বাজার মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ১৩টি সেক্টরের বাজার মূলধন হ্রাস পেয়েছে। ফ্লোর প্রাইসে ১টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ব্লক মার্কেটে ৭.৪ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে যা মোট লেনদেনের ২.০২ শতাংশ। এসএমই বাজার সূচক (ডিএসএমইএক্স) ২৯.৩২ পয়েন্ট কমে ১১৪৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে এবং লেনদেন হয়েছে ২.৭ কোটি টাকা যা গতদিনের তুলনায় ১৩ শতাংশ কম।

 


আরো সংবাদ



premium cement