০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

পুঁজিবাজারের সব সূচকেই ঋণাত্মক পরিবর্তন, কমেছে মূলধন

সাপ্তাহিক পর্যালোচনা
-


দেশের উভয় পুঁজিবাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে সব সূচকেই ঋণাত্মক পরিবর্তন হয়েছে। বাজার মূলধন হারিয়েছে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা বা ১.৮৭ শতাংশ পুঁজি। এ সময় কমেছে টাকার অঙ্কে শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ এবং লেনদেনে অংশ নেয়া বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর।
গত সপ্তাহজুড়ে (২৯ সেপ্টেম্বর-০৩ অক্টোবর) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৭৬.৫৫ পয়েন্ট বা ৩.১৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৬২.৫৮ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৪০.৬৭ পয়েন্ট বা ৩.২২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২১.২৭ পয়েন্টে। ডিএসই-৩০ সূচক ৭৪.০৮ পয়েন্ট বা ৩.৫৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৯০.৮৫ পয়েন্টে। এ ছাড়া ডিএসএমইএক্স সূচক ৫৮.৩৩ পয়েন্ট বা ৪.৭৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৭২.৯৭ পয়েন্টে।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৬টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৫৭টি, কমেছে ৩৩১টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে আটটি প্রতিষ্ঠানের। এ সময় ডিএসই ৮১ কোটি ৫৭ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৮০১ বার হাতবদল হয়। টাকার অঙ্কে যার বাজার মূল্য দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১৩১ কোটি ৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল তিন হাজার ৩৯৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকার; অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে এক হাজার ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা বা ৩৭.২৫ শতাংশ।
সপ্তাহের শুরুতে অর্থাৎ প্রথম কার্যদিবসে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ছয় লাখ ৮৫ হাজার ৬২১ কোটি ২৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৭২ হাজার ১১৫ কোটি ৫৭ লাখ ১০ হাজার টাকায়; অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ১৩ হাজার ৫৫০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বা ১.৯৭ শতাংশ।

ডিএসইতে গত সপ্তাহের খাতভিত্তিক লেনদেন, লেনদেন সংখ্যা বা মূল্য বৃদ্ধির তালিকা সব জায়গায় ছিল ব্যাংকিং খাতের দখলে। খাতভিত্তিক লেনদেন সম্পূর্ণ বাজারের ২৮ শতাংশই ছিল ব্যাংকি খাতের। এ ছাড়া অন্যান্য খাতের মধ্যে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাতে ১৪.৮৯ শতাংশ, জ্বালানি খাতে ৭.১৯ শতাংশ, টেক্সটাইল খাতে ৬.৪৮ শতাংশ, খাদ্য এবং আনুষঙ্গিক খাতে ৫.১০ শতাংশ, বীমা খাতে ৪.৮১ এবং প্রকৌশল খাতে ৪.৫২ শতাংশ।
এ ছাড়া লেনদেনে শীর্ষ কোম্পানিগুলোর মধ্যে গ্রামীণফোন ৫.৩০শতাংশ, ইসলামী ব্যাংক পিএলসি ৪.৪২ শতাংশ, ব্র্যাক ব্যাংক ৪.১৮ শতাংশ, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ৩.৯১ শতাংশ, মবিল যমুনা ৩.৪৪ শতাংশ, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস ৩.৩৩ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ৩.২৫ শতাংশ, সোনালি আঁশ ৩.২৪ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ২.১৭ শতাংশ এবং মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড ১.৭৪ শতাংশ।
ডিএসইতে মূল্য বৃদ্ধির তালিকাতে ছিল যথাক্রমে- বিডি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স, এডিএন টেলিকম, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ড্যাফোডিল কম্পিউটার, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এপেক্স ফুটওয়্যার, ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ন্যাশনাল টিউব ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫২১.৪৪ পয়েন্ট বা ৩.৩০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ২৭১.৭৭ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচক সিএসসিএক্স ২৯৬.২৯ পয়েন্ট বা ৩.০৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ২৭৫.০৩ পয়েন্টে। অপর ২টি সূচকের মধ্যে সিএসই-৫০ সূচক ৩৫.১১ পয়েন্ট বা ২.৯৪ শতাংশ এবং সিএসআই সূচক ৩৪.৯৮ পয়েন্ট বা ৩.৪১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে- এক হাজার ১৫৮.৫০ পয়েন্টে এবং ৯৯১.৪২ পয়েন্টে। এ ছাড়া সিএসই-৩০ সূচক ৩৬৫.৭৯২২ পয়েন্ট বা ২.৮৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৪৫৭.৩৪ পয়েন্টে।
সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩১৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৫২টি, কমেছে ২৫২টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১০টির।
সপ্তাহটিতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৪১ কোটি ১৩ লাখ ৯৩ হাজার ৮৫ টাকার। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৭২ কোটি ৬০ লাখ ২২ হাজার ৭৩৮ টাকার; অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন কমেছে ৩১ কোটি ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ৬৫৩ টাকা বা ৪৩.৩৩ শতাংশ।
ব্লকে ১০ কোম্পানির ৮৭ কোটির লেনদেন : গত সপ্তাহজুড়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্লক মার্কেটে ১০ কোম্পানির ৮৭ কোটি ৬৬ লাখ ৮০ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে।
কোম্পানিগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এডিএন টেলিকম, ইফাদ অটোস, বিডি ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ব্যাংক, বেক্সিমকো, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, আলহাজ টেক্সটাইল ও আইসিবি সোনালি ওয়ান।
আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইতে ব্লক মার্কেটে এই ১০ কোম্পানির মোট ৮৭ কোটি ৬৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্লক মার্কেটে ইসলামী ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে ব্লক মার্কেটে কোম্পানিটির ২৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। গত সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বশেষ দর ছিল ৬১ টাকা ৫০ পয়সা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রগতী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। গত সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বশেষ দর ছিল ২২৫ টাকা ৪০ পয়সা।
তৃতীয় সর্বোচ্চ এডিএন টেলিকমের ১৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। গত সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বশেষ দর ছিল ১০৩ টাকা ৯০ পয়সা।
এ ছাড়া অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে- ইফাদ অটোসের সাত কোটি ৬২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, বিডি ফাইন্যান্সের সাত কোটি ৬০ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের চার কোটি ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা, বেক্সিমকোর তিন কোটি ৩৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের তিন কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা, আলহাজ টেক্সটাইলের দুই কোটি ২৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং আইসিবি সোনালি ওয়ানের এক কোটি ৯৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
ডিএসইতে কমেছে পিই রেশিও : সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) পিই রেশিও (সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত) কমেছে ৩.৪৫ শতাংশ বা দশমিক ০.৩৭ পয়েন্ট কমেছে। জানা যায়, আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইর পিই রেশিও ১০.৩৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের সপ্তাহে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ১০.৭০ পয়েন্ট।
খাতভিত্তিক হিসেবে পিই রেশিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যাংক খাতে ৬.৫ পয়েন্ট, সিমেন্ট খাতে ১২.৮ পয়েন্ট, সিরামিকস খাতে ৯৪.৮ পয়েন্ট, প্রকৌশল খাতে ১২.৬ পয়েন্ট, আর্থিক খাতে ৩৪.১ পয়েন্ট, খাদ্য খাতে ১৪.৬ পয়েন্ট, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৯.৩ পয়েন্ট, সাধারণ বীমা খাতে ১২.৪ পয়েন্ট, আইটি খাতে ১৬.২ পয়েন্ট, পাট খাতে ১৭.৪ পয়েন্ট, বিবিধ খাতে ২৯.৫ পয়েন্ট, মিউচুয়াল ফান্ড খাতে ১৪২.৫ পয়েন্ট, কাগজ খাতে ৩০.১ পয়েন্ট, ওষুধ খাতে ১২.৪ পয়েন্ট, সেবা-আবাসন খাতে ১৩.৯ পয়েন্ট, ট্যানারি খাতে ১৯.২ পয়েন্ট, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে ১২.২ পয়েন্ট, টেলিকমিউনিকেশন খাতে ১২.৪ পয়েন্ট ও বস্ত্র খাতে ১৭.৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।


আরো সংবাদ



premium cement