পতনেও বেচাকেনায় পুঁজিবাজারে চাঙ্গা ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার
৬৫ শতাংশ বিক্রির চাপে পুঁজিবাজার, ক্রেতা মাত্র ৩৫ শতাংশ- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
কোনোভাবেই পতনের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। প্রতিদিনই বেশির ভাগ কোম্পানি দর হারাচ্ছে। বিক্রির চাপে নাস্তানাবুদ পুঁজিবাজার। আর হতাশায় ভুগছেন বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজারের মার্কেট মেকারদের নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বড় একটি বৈঠকের দিনে গতকাল বিনিয়োগকারীরা স্বাভাবিকভাবে আশা করেছিলেন মার্কেট ইতিবাচক থাকবে। দিনের লেনদেন শুরুও হয়েছিল ইতিবাচক প্রবণতায়। কিন্তু লেনদেনের শুরুতে কিছুটা ইতিবাচক থাকলেও চার ঘণ্টারও বেশি সময় বাজারে বড় হতাশার মেঘই দেখেছে বিনিয়োগকারীরা। ৬৫ শতাংশ বিক্রির চাপ আর ৩৫ শতাংশ ছিল ক্রেতার চাপ। ক্রেতা ছিল না ব্যাংকের শেয়ারে। তবে পতনের এই দিনে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার চাঙ্গা ছিল ব্লক মার্কেটে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই একটি বড় গ্রুপ বাজারকে অস্থির করার পাঁয়তারায় লিপ্ত হয়। তাদের সেল প্রেসারে বাজার একদিন ইতিবাচক থাকলে তিন দিনই নেতিবাচক প্রবণতায় থাকছে।
দিনের লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইর লেনদেন শুরুর প্রথম ঘণ্টায় অর্থাৎ বেলা ১১টা পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান সূচক বা ‘ডিএসইএক্স’ ১০ দশমিক ৭১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে পাঁচ হাজার ৬৬৮ পয়েন্টে। আর শরিয়াহ সূচক বা ‘ডিএসইএস’ ২ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট বেড়ে হয় এক হাজার ২৭৩ পয়েন্টে আর ‘ডিএস-৩০’ সূচক ১ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬১ পয়েন্টে। ওই সময়ে ডিএসইতে মোট ১১৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ২০১টির, কমেছে ৯৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৫টি কোম্পানির শেয়ারদর। এরপর থেকেই বাজার নিম্নমুখী হতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত পয়েন্ট হারিয়ে পতনেই শেষ হয়।
ডিএসইর ডিএসইএক্স গতকাল আরো ৩৩.৬১ পয়েন্ট, শরিয়াহ সূচক আরো ৭.৩৬ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৯.৫৭ পয়েন্ট হারিয়েছে। টাকায় লেনদেনে বাড়লেও আগের দিনের তুলনায় শেয়ার বেচাকেনা তিন কোটি কমেছে। ১৭ কোটি ৯০ লাখ পাঁচ হাজার ৪৫৬টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৫০৩ কোটি ৯০ লাখ ৪১ হাজার টাকায়। যেখানে সোমবার লেনদেন হয় ৪৮১ কোটি টাকার। ফলে সামান্য বেড়েছে লেনদেন। ৩৯৫টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিলেও দর বৃদ্ধিতে ছিল ১৫৭টি, দর পতনের শিকার ১৯৬টি বা ৪৭.৬২ শতাংশ এবং দর অপরিবর্তিত ছিল ৪২টির। বাজারমূলধন কমেছে দুই হাজার ১৮৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। বর্তমানে ডিএসইর মূলধন হলো ছয় লাখ ৮৩ হাজার ৪১১ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
এদিকে, ডিএসইর ব্লক মার্কেটে ৩৪টি কোম্পানির গতকাল এক কোটি ৫০ লাখ ৪২ হাজার ৯৫৬টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৬৫ কোটি ৬০ লাখ ২৯ হাজার টাকায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে সে ছয়টি কোম্পানির সেগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এডিএন টেলিকম, ইফাদ অটোস, বিডি ফাইন্যান্স এবং মিডল্যান্ড ব্যাংক পিএলসি। এই ছয় প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকারও বেশি। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের। ব্যাংকটির চল্লিশ লাখ ২১ হাজারটি শেয়ার মোট ২৬ কোটি ৯৪ লাখ ৩০ হাজার টাকায় হাতবদল হয়েছে। আর প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার চার শ’টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে মোট ১২ কোটি ৮৯ লাখ চার হাজার টাকায়। আর ছয় কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে এডিএন টেলিকম। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে- ইফাদ অটোসের তিন কোটি ৮০ লাখ ৩২ হাজার টাকার, বিডি ফাইন্যান্সের তিন কোটি ৭৯ লাখ ৭৯ হাজার টাকার এবং মিডল্যান্ড ব্যাংক পিএলসির এক কোটি ৪৯ লাখ ১৩ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
আর চট্টগ্রাম স্টকের সবগুলো সূচকই গতকাল আবারো পতনের শিকার। সিএএসপিআই ১০৬.১৯ পয়েন্ট, সিএসই-৫০ সূচক ৭.৬৩ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স ৬৩.১৬ পয়েন্ট এবং সিএসই-৩০ সূচক ৬৮.৮৪ পয়েন্ট হারিয়েছে। ২২৮টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নেয়। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৬৪টির, দর পতনে ১৪০টি এবং দর অপরিবর্তিত ২৪টি কোম্পানির শেয়ার। চুয়াল্লিশ লাখ ৪৩ হাজার ৩২১টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ১৭ কোটি ৬৩ লাখ ৯৪ হাজার ৪৮০ টাকা বাজারমূল্যে, যা বোরের চেয়ে বেশি। ওই দিন পৌনে ৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়।
এবি ব্যাংকের নতুন বন্ড ইস্যুর আবেদন প্রত্যাখ্যান : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এবি ব্যাংক পিএলসির নতুন বন্ড ইস্যুর আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র মতে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ‘এবি ব্যাংক সাব-অর্ডিনেটেড বন্ডস-৫’ নামে নতুন বন্ড ইস্যুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। রিডিমেবল, নন-কনভার্টেবল, ফ্লোটিং রেটের বন্ডটির মাধ্যমে ব্যাংকটি পাঁচ শ’ কোটি টাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এবি ব্যাংকের নতুন বন্ড ইস্যুর আবেদনে অসম্মতি প্রকাশ করেছে বিএসইসি। বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবি ব্যাংক পিএলসি।
বিএসইসির প্যানেল থেকে ৩ অডিট কোম্পানি বাদ: এদিকে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্যানেল থেকে তিনটি অডিট প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেয়া হয়েছে। ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলে (এফআরসি) তালিকাভুক্ত হতে না পারায় প্রতিষ্ঠান তিনটিকে বাদ দিয়েছে বিএসইসি। বিএসইসির অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড অডিটিং পলিসি ডিপার্টমেন্ট বিভাগের এক অভ্যন্তরীণ চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বাদ পড়া অডিট প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো : এ হক অ্যান্ড কোম্পানি, ফেমস অ্যান্ড আর এবং এসকে বরুয়া অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস।
বিএসইসির ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে, গত বছরের ডিসেম্বরে এফআরসি তাদের তালিকাভুক্ত অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা প্রকাশ করে। পরে ফেব্রুয়ারিতে কমিশনকে চিঠি লিখে জানিয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠান এফআরসির তালিকাভুক্ত নয়, সেগুলোকে যেন প্যানেল থেকে বাদ দেয়া হয়। বিএসইসি যেন তাদের প্যানেলে না থাকা কোনো অডিটরের সই করা আর্থিক বিবরণী গ্রহণ করে না। তিনটি অডিট প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেয়ার ফলে বিএসইসির অডিট প্যানেলের সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৫-এ। এফআরসি সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ১৫-২০টি অডিট প্রতিষ্ঠান এফআরসি তালিকাভুক্ত হতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে প্রায় ৪৫ জন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা