উত্থানের সময়ও পুঁজিবাজারে বেশিরভাগ কোম্পানি দরপতনে
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বিদঘুটে পরিস্থিতি দেশের পুঁজিবাজারে। পতনের পরিবেশে যেই দশা, উত্থানেও একই চিত্র। দু’দিন ধরে বাজারে সূচকের উত্থান ঘটেছে। কিন্তু বেশির ভাগ কোম্পানি দর পতনের শিকার। টানা দুই কর্মদিবস পতনের পর গতকাল বুধবার ইতিবাচকধারায় ফিরেছে দেশের শেয়ারবাজার। বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক বেড়েছিল ১৩ পয়েন্ট। গতকাল সূচক বেড়েছে ৪১ পয়েন্টের বেশি। কিন্তু সূচকের এমন উত্থানেও বিনিয়োগকারীদের মন ভালো নেই। কারণ আজ যে পরিমাণ কোম্পানির শেয়ার দাম বেড়েছে, তারচেয়ে বেশি পরিমাণ কোম্পানির শেয়ার দাম কমেছে। অর্থাৎ উত্থানের বাজারেও বেশির ভাগ কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পরিমাণ আরো বেড়েছে।
বাজারলেনদেনের তথ্য থেকে দেখা যায়, লেনদেনের সূচনা থেকে ধীরে ধীরে সূচক বাড়তে থাকে। তবে উত্থানের পথে কয়েকদফা পতনেরও শিকার হয় সূচক। শেষ পর্যন্ত উত্থান দিয়েই সমাপ্ত হয় সপ্তাহ। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪১.১৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৭৩৫.২৭ পয়েন্টে। ডিএসইএস’ ১২.১৩ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ২৫৭.৮১ পয়েন্ট এবং ‘ডিএস-৩০’ সূচক ২৯.৪৬ পয়েন্ট বেড়ে দুই হাজার ১০৬.৪৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইতে ১৫ কোটি ৮১ লাখ ৮৩ হাজার ২১৫টি শেয়ার ওমিউচুয়াল ফান্ড মোট ৫৯৪ কোটি ৭৭ লাখ পাঁচ হাজার টাকায় হাতবদল হয়েছে। বুধবার লেনদেন হয়েছিল ৫৫৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। লেনদেন বেড়েছে ৪১ কোটি ১১ লাখ টাকার বা ৭ শতাংশ। তবে কমেছে শেয়ার বিক্রির পরিমাণ। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৯৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ১৫০টির বা ৩৭.৭৮ শতাংশের, কমেছে ১৯১টির বা ৪৮.১১ শতাংশের এবং দর পরিবর্তন হয়নি ৫৬টির বা ১৪.১০ শতাংশের।
এ দিকে ডিএসইর ব্লক মার্কেটে ৩৩টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মোট এক কোটি ৭০ রাখ ৪১ হাজার ২৬৩টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৪৯ কোটি ১৬ লাখ ৭৭ হাজার টাকারয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হতে দেখা গেছে ছয় প্রতিষ্ঠানের। আর প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক, ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো, এসবিএসি ব্যাংক, ইবনে সিনা ফার্মা, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড। এই ছয় প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪২ কোটি ৫৬ লাখ টাকারও বেশি। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের। ব্যাংকটির ৪২ লাখ ৩০ হাজারটি শেয়ার মোট ২০ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এ ছাড়া ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকোর সাত কোটি ৮০ লাখ টাকার, সাত কোটি ৩৬ লাখ ৬২ হাজার টাকার এসবিএসি ব্যাংকের শেয়ার, ইবনে সিনা ফার্মার তিন কোটি ৪৪ লাখ এক হাজার টাকার, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের দুই কোটি ৬৪ লাখ ৫৮ হাজার টাকার এবং ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেডের এক কোটি এক লাখ ৩৮ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
দরপতনের শীর্ষে ১০ কোম্পানি : লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৯৭টি কোম্পানির মধ্যে ১৯১টির দর কমেছে। আজ সবচেয়ে বেশি দর কমেছে হামি ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি। কোম্পানিটির শেয়ার দর আগের দিনের তুলনায় ৯ টাকা ৮০ পয়সা বা ৯.৩৯ শতাংশ কমেছে। যার ফলে ডিএসইর দর পতনের শীর্ষ তালিকায় প্রথম স্থানে স্থান নিয়েছে কোম্পানির শেয়ার। দর পতনের শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার দর কমেছে আগের দিনের তুলনায় ৩০ টাকা বা ৭.৬৮ শতাংশ। আর ২ টাকা ৫০ পয়সা বা ৫.৩১ শতাংশ দর কমে যাওয়ায় পতনের শীর্ষ তালিকার তৃতীয় স্থানে জায়গা নিয়েছে ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেড। এ ছাড়া ডিএসইতে দর পতনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে- বিবিএস ক্যাবলস ৫.১১ শতাংশ, নিউলাইন ক্লোথিংসের ৫.০১ শতাংশ, নাহি অ্যালুমিনিয়ামের ৪.৭১ শতাংশ, উত্তরা ফাইন্যান্সের ৪.৫২ শতাংশ, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের ৪.০৪ শতাংশ, বিডি থাই অ্যালুমিনিয়ামের ৩.৯৪ শতাংশ এবং মাইডাস ফাইন্যান্সিংয়ের ৩.৮০ শতাংশ দর কমেছে।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কোম্পানি : সর্বোচ্চ দর বেড়েছে এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের। কোম্পানিটির শেয়ার দর আগের দিনের তুলনায় এক টাকা ৫০ পয়সা বা ৮.৫৭ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে। যার ফলে ডিএসইর দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় প্রথম স্থান নিয়েছে কোম্পানির শেয়ার। দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৫ টাকা ১০ পয়সা বা ৮.৩৮ শতাংশ। আর ১ টাকা ৬০ পয়সা বা ৬.৬৩ শতাংশ শেয়ার দর বৃদ্ধি পাওয়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসলামী কমার্সিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। এ ছাড়া ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে- রবি আজিয়াটার ৫.১০ শতাংশ, সী পার্ল রিসোর্টের ৪.৭৫ শতাংশ, গ্রামীণফোনের ৪.৫৩ শতাংশ, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলের ৪.১৯ শতাংশ, বিকন ফার্মার ৪.১৭ শতাংশ, সোনালী পেপারের ৪.০৩ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ৪ শতাংশ দর বেড়েছে।
আর চট্টগ্রাম স্টকেসবগুলো সূচকই বেড়েছে। সিএএসপিআই ৭৪.৮৩ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স ৪৬.২৮ পয়েন্ট এবং সিএই-৩০ সূচক ৮৫.২৪ পয়েন্ট ফিরে এসেছে। ২২৭টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিলেও দর বৃদ্ধিতে ৪১.৪০ শতাংশ বা ৯৪টির, দর পতনে ৪৭.১৩ শতাংশ বা ১০৭টির এবং ২৬টির দর অপরিবতিত রয়েছে। ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ৯২৩টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বেচাকেনা হয়েছে মোট ১৭ কোটি এক লাখ ৬১ হাজার টাকায়। যা গত বুধবারের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।
বাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার ধীরে ধীরে সামনের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেছে। এতদিন যেসব বড় বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী সাইডলাইনে ছিল, তারা বাজারে সক্রিয় হতে শুরু করেছে। ফলে সূচকের উত্থান হলেও বাজারে বিক্রেতার চাপ বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। কারণ লোকসানে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ছাড়তে চাইছে না।